চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, শুদ্ধানন্দ মহাথেরো ছিলেন মানবতাবাদী মহান বৌদ্ধ ভিক্ষু। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তির সীমা ছাড়িয়ে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে তিনি ছিলেন আলোকিত ব্যক্তিত্ব। ভৌগলিক সীমারেখা ছাড়িয়ে যার অপরিসীম ত্যাগ মহিমার কর্ম প্রতিভা আজ বিশ্ব স্বীকৃত। তিনি অত্যন্ত নির্লোভ, নিরাহঙ্কারী ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে যত অশান্তি-হানাহানি-সংঘাত তার মূলে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা ও কূপামন্ডুকতা। আর এই থেকে পরিত্রাণের পথ অহিংসা-পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি গড়ে তোলা।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি)সকালে চট্টগ্রাম কাতালগঞ্জস্থ নবপন্ডিত বিহারে বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভার ২৮তম সংঘনায়ক প্রয়াত শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর নির্বাণ শান্তি কামনায় অষ্টপরিষ্কারসহ সংঘদান ও স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভার ২৯তম সংঘনায়ক প্রিয়শিলী অধ্যাপক বনশ্রী মহাথেরোর সভাপতিত্বে প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন বোধিমিত্র মহাথের,উদ্ধোধক ছিলেন ভদন্ত অধ্যাপক উপানন্দ মহাথেরো। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক জ্ঞানরত্ন মহাথেরো, বিপস্সী মহাথেরো, ধর্মানন্দ মহাথেরো, করুণা থেরো, অধ্যক্ষ ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া, কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু। অন্যান্যদের প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, প্রফেসর ড. দীপংকর শ্রীজ্ঞান বড়ুয়া, অঞ্চল কুমার তালুকদার, কমলেন্দু বিকাশ বড়ুয়া, ড. সুব্রত বরণ বড়ুয়া, ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, ডা. বসুবন্ধু বড়ুয়া, ডা. কল্যাণ বড়ুয়া, পুষ্পেন বড়ুয়া কাজল, লায়ন ডা. মৃদুল বড়ুয়া চৌধুরী, লায়ন আদর্শ কুমার বড়ুয়া, মৃগাংক প্রসাদ বড়ুয়া, অধ্যক্ষ দীপক তালুকদার, এড. জয়শান্ত বিকাশ বড়ুয়া, অধ্যাপক স্মৃতি বড়ুয়া, চম্পাকলি বড়ুয়া, স্বপন কান্তি বড়ুয়া, স্বদেশ কুসুম চৌধুরী, বিনয় ভূষণ বড়ুয়া, ডা. দিবাকর বড়ুয়া, ডা. অমরেশ চৌধুরী, কুনাল কান্তি বড়ুয়া, দুলাল কান্তি বড়ুয়া, অলক বড়ুয়া বিটু, বিপ্লব বড়ুয়া বটু লায়ন উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রমূখ স্মৃতিচারণ করেন। । পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন সাধন চন্দ্র বড়ুয়া। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চলনায় ছিলেন সিজার বড়ুয়া, লায়ন উজ্জ্বল কান্তি বড়ুয়া, অবিনাশ বড়ুয়া প্রকৌশলী ঝুলেন বড়ুয়া। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন সাধন চন্দ্র বড়ুয়া।
মেয়র আরো বলেন, চট্টগ্রামে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। আবহমানকাল থেকে এখানে মানুষ আত্মার আত্মীয় হিসেবে বসবাস করে আসছে। ধর্ম ও দেশপ্রেম একাকার, দেশপ্রেম ধর্মেরই অংশ। সবধর্মে এটিই স্বীকৃত, তাই যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তাদের মাঝে কোন ধর্মই থাকতে পারে না। বিশ্বে পিছিয়ে থাকা রাষ্ট্রগুলোর মূলেই রয়েছে অতিসাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গীবাদী মানসিকতা। শান্তিময় ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা রুখতেই হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহারণ। ১৯৭১ সালে এমনটিই হয়েছিল সকল ধর্ম ও মানবতার চেতনার প্রেরণায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সশস্ত্র প্রতিরোধে। আমরা এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি এবং আমরা স্বাধীন। এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে। তাই এদেশে বর্ণে-ধর্মে-শ্রেণীতে কোন ভেদাভেদ নেই। স্বাধীনতা উত্তরকালে সেই সম্প্রীতির বুকে ছোবল হানতে উদ্যত সকল সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গী প্রভৃতি অপশক্তিকে নস্যাৎ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সম্প্রীতির বন্ধনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আগামী ২০৩০সালে দেশকে উন্নয়নশীল এবং ২০৪১সালে উন্নত দেশে রূপান্তরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সংঘনায়ক অধ্যাপক বনশ্রী মহাথেরো বলেন, মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাসে এই পৃথিবীতে বহু মহান ব্যক্তিত্ব, ত্যাগী পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন যাঁরা নিজের জীবনে প্রজ্ঞা, মেধা ও মননশীলতায় বিনিময়ে দেশ, সমাজ, জাতি, সম্প্রদায়, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে অসাধারণ ও অতুলনীয় অবদান রেখে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে জন মানুষের অন্তরের মনিকোটায় সুদৃঢ় আসন তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন তন্মধ্যে এ যাবৎকালে মহান বর্ষীয়ান বৌদ্ধ ভিক্ষু ব্যক্তিত্ব সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরো অন্যতম। তিনি প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহুর্তে মানুষের কল্যাণে আত্ম নিবেদন করে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব মানব জগতের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।