আগামীকাল ৮ জানুয়ারি শনিবার রাঙামাটির রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ , আর্যপুরুষ, পরমপূজ্য শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের ১০৩ তম শুভ জন্মদিবস। এ উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাজবন বিহার সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল শুক্রবার ভোরে রাঙামাটির রাজবন বিহারে কেক কাটা ও বেলুন ওড়ানো হবে। কেক কাটবেন রাঙামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুসংঘের প্রধান ও বনভান্তের প্রধান শিষ্য শ্রীমৎ প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির। এ ছাড়া দুপুরের দিকে আয়োজন করা হয়েছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে শত শত ভক্ত ও পুণ্যার্থীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
রাঙামাটি রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ ও আর্যপুরুষ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের মোড়ঘোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি ৯৩ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন। বর্তমানে বনভান্তের মরদেহটি বিজ্ঞান ও বিনয়সম্মতভাবে পেটিকাবদ্ধ অবস্থায় রাঙামাটির রাজবন বিহারে রাখা আছে।
তাঁহার পিতার নাম হারুমোহন চাকমা এবং তিনি পূণ্যবতী মহয়সী বীরপুদি চাকমার গর্ভে জন্ম লাভ করেন। পৃথিবীর মানুষকে বিভিন্ন অপকর্মের কাজ হতে সৎ পথে নিয়ে আসার জন্য বৌদ্ধ জাতিকে করে তুলেছেন সৎপথে সম্মৃদ্ধ। তাঁহার ভাই-বোন সর্বমোট ৪ জন। তিনি ছিলেন ভাই-বোনদের মধ্যে জোষ্ঠ পুত্র। ১৯৪৯ সালে পটিয়া নিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গজেন্দ্র লাল বড়ুয়ার মাধ্যমে ফেব্রুয়ারি মাসে চট্গ্রামেরর নন্দ কানন বৌদ্ধ বিহারে ফাল্গুনী পূর্নিমা তিথিতে শ্রীমৎ দীপঙ্কর ভিক্ষুর কাছে প্রবজ্যা গ্রহন করেন।  ১৯৫০ সালে নিজে জন্মভূমি ধনপাতা বালুখালী ইউনিয়নের মগবান নামক স্থানে চলে আসেন। এবং সেখানে তিনি তাঁহার শীল,সমাধি,প্রজ্ঞা, সম্ম্যক জ্ঞান লাভ করেন। অনেক বছর নিজ মাতৃভূমিতে অবস্থান করেন। সৎ পথে নিয়ে আসার জন্য তিনি সৎ উপদেশ, স্বধর্ম দেশনা প্রদান করেন। ১৯৬০ সালে নিশি মোহন চাকমার আমন্ত্রনে (ফাং) তিনি চলে যান দীঘিনালা উপজেলার “”বনাশ্রম”” নামক বিহারে। সেখান হতেই তিনি ভিক্ষু জীবন শুরু করেন। এবং সেখানে কঠোর সাধনায় ১০ বৎসর অতিবাহিত করেন। এবং পড়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার খেদারমারা বৌদ্ধ বিহারে চলে যান এবং ১৯৭০ হতে ১৯৭৪ সালে পুরো চার বছর রাঙামাটি লংগুদু উপজেলার তিনটিলা স্থানে থেকে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন। ১৯৭৪ সালে স্বনামধন্য চাকমা রাজ পরিবারের পক্ষে রাজা ত্রিদিব রায়ের মাতা বিনীতা রায় ও চাকমা চীফ সার্কেল বেরিস্টার দেবাশীষ রায়ের মাতা আরতি রায়, কুমার সুমিত রায়, ও পাড়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিগনের আমন্ত্রনে (ফাং) বর্তমান “রাজ বন বিহারে” চলে আসেন। এবং “রাঙামাটি রাজ বন বিহারে” ১৯১২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘসময় অতিবাহিত করেন। যা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম সুনাম ধন্য তীর্থ ধর্মীয় স্থান নামে বিখ্যাত। যা ৩৩ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হয় রাজবন বিহার। যা বর্তমানে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচের স্থান হতে দর্শন করতে আসে বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মালম্বী সহ বিভিন্ন পূর্ণার্থী এবং তাঁরই প্রচেষ্টায়, সাধনায় তিনি স্বশিষ্য শ্রীমৎ নন্দপাল মহাস্থবির ভিক্ষুকে (বর্তমান মহাথেরো) সেখানে প্ররন করেন। এবং ১৯৮১ সালে ১৪ই ফেব্রুয়ারি মাসে “মহাথেরো” হিসেবে ইপসম্পাদা লাভ করেন। এছাড়া রাজবন বিহারে থাকাকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁহার স্বাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য অসুস্থতার জন্য তদারকি করতেন গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গ। এমনকি প্রশাসন হতে রাঙামাটি জোন কমান্ডার, সংসদ সদস্য শ্রী ঊষাতন তালুকদার, ব্যারিস্তার দেবাশীষ রায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মী সহ বিভিন্ন গুনী ব্যাক্তি তাঁহার দর্শনের জন্য সমাবেত হতেন। পুষ্প হাতে নিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতেন এবং তাঁহার অবস্থা খারাপ লক্ষ্য করে রাঙামাটি রাজবন বিহার ভিক্ষু সংঘ, রাঙামাটি কার্যনির্বাহী পরিষদ, রাঙামাটি প্রশাসনের উদ্যেগে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বনামধন্য ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং ২০১২ সালে ২৭শে জানুয়ারি রোজ শুক্রবার সকাল ১১ টা ৩০ মিনিট সময়ে রাঙামাটি রাজবন বিহার হতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য এবং ১২ টা ১৫ মিনিটে সার্কিট হাউজ হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্তার যোগে ঢাকার উদ্দেশ্য রাঙামাটি জোন হতে রওনা হন। তাছাড়া উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা স্কয়ার হাসপাতালে ৩ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রত ছিলেন এবং কঠোর প্রচেষ্টায় মাধ্যমেও তাঁহার চিকিৎসার কোন উন্নতি লক্ষ্য করা যায় নি। অবশেষে ৩০শে জানুয়ারী ২০১২ সালে রোজ সোমবার বিকাল ৩ টা ৫৭ মিনিটে সবাইকে কাঁদিয়ে চির জীবনের জন্য প্রয়াণ লাভ করেন।