দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ধাপের ঢিবিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ আবিস্কৃত হয়েছে। স্থানটি বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত সংলগ্ন উত্তরে, ফুলবাড়ীগামী হাইওয়ের পশ্চিম পার্শের পার্বতীপুর উপজেলার ৯ নম্বর হামিদপুর ইউনিয়নের ইসবপুর মৌজায় অবস্থিত।
প্রাপ্ত বৌদ্ধ মন্দিরটির ভূমি নক্সা বাংলাদেশ ও ভারতের বেশীর ভাগ বৌদ্ধ স্থাপনা ও বিহারের চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও বৌদ্ধ মন্দিরের অনেক বৈশিষ্টই এখানে লক্ষ্য করা গেছে।
সাধারনত বৌদ্ধ মন্দির বা বিহারগুলো হয় আয়তাকার বর্গাকার। চারিদিকের বাহুতে থাকে ভিক্ষু কক্ষ, ছোট মন্দির বা চৈত্য, মাঝখানে ফাঁকা বিহারঙ্গন বা কোর্টইয়ার্ড। বিহারাঙ্গনে মন্দির বা নিবেদন স্তূপ থাকতে পারে ,ফাঁকাও থাকতে পারে।
এখানে যে স্থাপত্যিক আলামত পাওয়া গেছে, তার ভূমি নকশা পর্যালোচনা করে দেখা যায় স্থাপনাটি বর্গাকার ধরনের । এর প্রত্যেক বাহু প্রায় ৩৬ মিটার। বর্গাকার স্থাপনাটির পশ্চিম বাহুর মাঝ বরারর বাইরের দিকে বর্ধিত আয়তাকার কক্ষ রয়েছে।
কক্ষটির উত্তর দক্ষিনে ৫.১মিটার এবং পূর্ব পূর্ব পশ্চিমে ৪.২ মিটার । কক্ষটির দেয়াল প্রায় ১.২ মিটার চওড়া, পূর্বপার্শে রয়েছে প্রবেশ পথ, মাঝে ইটের ছোট টুকরো ও গুড়া মিশ্রিত করে মজবুত মেঝে রয়েছে।
মেঝের ওপর উত্তর পশ্চিম ও দক্ষিন পশ্চিম কোণে ইট নির্মিত দুটি ছোট প্লাটফর্ম রয়েছে। কক্ষের সামনে রয়েছে বর্গাকার কোর্টইয়ার্ড। এর প্রত্যেক বাহুর পরিমাণ ২২.৮ মিটার।
পুরো স্থাপনাটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর পরবর্তীতে এই ঢিবির ওপর এখানকার ইট ব্যবহার করে কোন স্থাপনা তৈরি করেছিল এমনটা দেখা যায়।
খননকালে এই স্তূপ থেকে বিভিন্ন ধরনের বাকানো ইট, মৃৎপাত্র, বিভিন্ন মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ,বিশেষ স্লিপযুক্ত মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, পাথরের টুকরো, টিসি বল, প্রাণীর হাড় ইত্যাদি প্রত্নবস্ত ছাড়া তেমন কোনো শনাক্তকারী প্রত্নবস্তু পাওয়া যায়নি।
খনন পরিচালক রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী বলেন, এখন পর্যন্ত উন্মোচিত স্থাপনাটির আকার আকৃতি স্থাপত্যিক দিক বিবেচনায় বগুড়ার ভাসু বিহার ও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ সীতাকোট বিহারের সঙ্গে অনেক মিল দেখা যায়। তবে এখানকার কোনো নমুনার এখন পর্যন্ত রেডিও কার্বন ডেটিং ও পরিচিতিমূলক প্রত্নবস্তুও না পাওয়ায় সুনিদিষ্টভাবে স্থাপনাটির সময়কাল এখনই বলা মুশকিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজটি সম্পন্ন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অর্থায়নে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর তত্ত্বাবধানে ও ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক সোহাগ আলী নেতৃত্বে খনন সম্পন্ন হয়। এ ছাড়াও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা ছিলেন সার্বিক তত্ত্বাবধানে।
খননে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন শাহজাদপুর কুঠিবাড়ী জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান আবু সাইদ ইমাম তানভিরুল। বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক জেসমিন নাহার ঝুমুর, বগুড়া মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা, দিনাজপুর কান্তজিউ মন্দির প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান।
এছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ১০ শিক্ষার্থী ও মহাস্থানগড় থেকে আসা ৮ দক্ষ ও ১২ স্থানীয় শ্রমিক খনন কাজ করেছে।
সুত্রঃ যুগান্তর