1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন

প্রবারণা পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধি, আত্মসমর্পনে সত্যকে বরণ

ভিক্ষু প্রজ্ঞাশ্রী
  • সময় বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১
  • ৫০৭ পঠিত

আত্মশুদ্ধি, আত্মসমর্পন ও আত্মনিবেদনের প্রবারণা পূর্ণিমার মধ্যদিয়ে আজ ২৫৬৫ বুদ্ধাব্দের ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস সমাপন হতে যাচ্ছে। এ প্রবারণা পূর্ণিমা ভিক্ষুসংঘের বিনয় কর্মের একটি অংশ। ভিক্ষুগণ তিন মাস বর্ষাবাস যাপন কালে যদি গোচরে বা অগোচরে কোন ভুল করে থাকেন তা জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুর কাছে প্রকাশ করেন এবং সংশোধনের আহ্বান জানান। তেমনিভাবে জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুরাও নবীনদের কাছে তাঁদের ভুলের কথা জানান। এজন্য এটি হলো ভিক্ষুসংঘের আত্মসমর্পন ও আত্মনিবেদনের পূর্ণিমা।

প্রবারণা ভিক্ষুসংঘের বিনয় কর্মের অংশ হলেও এটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও প্রযোজ্য। এ বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য প্রবারণা শব্দটি সম্পর্কে একটু বিশ্লেষণ করা যাক। সংস্কৃত প্রবারণা শব্দটি পালিতে পবারণা; যার অর্থ হল- বরণ করা, নিবারণ, মানা, নিষেধ, শিক্ষা সমাপ্তি বা ধ্যানের শিক্ষা সমাপ্তি ইত্যাদি। প্রবারণা শব্দটি ‘প্র’ উপসর্গের সাথে “বরণ বা বারণ” শব্দ যোগে নিষ্পন্ন হয়। এ বরণ ও বারণ শব্দ দু’টি প্রবারণা পূর্ণিমার মূল বৈশিষ্ট্য। ‘বরণ’ বলতে সত্য, সুন্দর, সুশৃংখল, নৈতিক উন্নতি এবং বিনয়কে যথাযথভাবে পালন বা বরণ করাকে বুঝায়। আর ‘বারণ’ বলতে অসত্য, অসুন্দর, বিশৃংখল, ক্রুটি, নৈতিক স্খলনকে বর্জন বা বারণ করাকে বুঝায়।

ভিক্ষুসংঘরা এ পূর্ণিমা তিথিতে যেমন নিজেদের ভুল-ত্রুটি সংশোধন পূর্বক আত্মশুদ্ধি করেন তেমনি গৃহীদেরকেও আত্মশুদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। প্রবারণা হতে আত্মশুদ্ধির এ শিক্ষা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। কেননা, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আমাদেরও জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে নানা ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে। কিন্তু স্বীয় দম্ভ ও অহংকারের কারণে আমরা নিজেদের ভুল-ক্রুটি স্বীকার তো করিই না বরং আমি যা করেছি তা শুদ্ধ প্রমাণের জন্য হাজার মিথ্যার আশ্রয় নিই ও ছলচাতুরী করি। এভাবে আমাদের নৈতিকতার স্খলন ঘটছে প্রতিনিয়ত। তাই প্রবারণা হতে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করে আত্মশুদ্ধি, আত্মসমর্পন ও আত্মনিবেদনের মাধ্যমে নৈতিকতার দিক দিয়ে নিজেদেরকে গঠন করতে হবে।

প্রবারণা পূর্ণিমাকে বৌদ্ধদের অনেকেই বড় ছাদাং অর্থাৎ বড় উপোস বা বড় উপোসথ দিবস এবং আষাঢ়ী পূর্ণিমাকে ছোট ছাদাং বলে অভিহিত করেন। এর কারণ হল, আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে ত্রৈমাসিক বর্ষাবাস শুরুর সাথে সাথে তিনমাস ব্যাপী গৃহীদের উপোসথ গ্রহণও শুরু হয়। এভাবে এক এক করে ক্রমান্বয়ে বারটি উপোসথের পরের উপোসথ হল প্রবারণা পূর্ণিমার উপোসথ। শীলগুণে ক্রমান্বয়ে উর্দ্ধদিকে এগিয়ে যাওয়ার কারণে প্রবারণা পূর্ণিমাকে ‘বড় ছাদাং বা বড় উপোসথ’ দিবস হিসেবে এ অভিহিতকরণ। এ পূর্ণিমা তিথিতে প্রতিটি বিহারে দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। উপাসক-উপাসিকাগণ শুচি-শুভ্র দেহমনে বিহারে সমবেত হয়ে বুদ্ধপূজা, অষ্টশীল ব্রত পালন, ভিক্ষুদের আহার্য দান, সুত্রপাঠ-ধর্মদেশনা শ্রবণ, ভাবনানুশীলন ইত্যাদি পূণ্যকর্ম সম্পাদনে রত হন। এভাবে বিকেলে ধর্মসভায় অংশগ্রহণ; সন্ধ্যায় গাথা আবৃত্তি, পুষ্প-সুগন্ধি-প্রদীপ ও গিলানপ্রত্যয় বুদ্ধপূজা সম্পাদন শেষে যোগ দেন ফানুস তথা আকাশ প্রদীপ পূজায়। উৎসব মুখর পুরোদিনের অন্যতম আকর্ষণ হল- এ ফানুস উড়ানো উৎসব-পূজা। ফানুসে আকাশ ছেঁয়ে যায়। একদিকে পূর্ণিমার চাঁদের আলোকোজ্জ্বল্য আর অন্যদিকে ফানুসের পুণ্যপ্রভা, এ দু’য়ের সমন্বয়ে অন্ধকার কেটে জ্যোতিষ্ময় হয়ে সমগ্র আকাশ। এ যেন অন্য এক পৃথিবী।

এভাবে প্রবারণা পূর্ণিমার পূর্ণ চন্দ্র ও ফানুসের পুণ্যালোকে উদ্ভাসিত হোক প্রতিটি হৃদয়। সত্যকে বরণ এবং অসত্যকে বারণ (বর্জন) তথা আত্মসমর্পন ও আত্মনিবেদনের শিক্ষা গ্রহণে প্রবারণা পূর্ণিমা সকলের জীবনে প্রাপ্তি-পূর্ণতায় সৌভাগ্যময় হোক এবং প্রজ্ঞাময়-ধর্মময় হোক সম্মুখ পথচলা। জগতের সকল প্রাণীর সুখী, সুস্থ-সুন্দর-মঙ্গলময় জীবন প্রত্যাশার পাশাপাশি অশান্ত বিশ্বের শান্তি কামনা করছি। মৈত্রী প্রেমে হিংসাত্মক-ধ্বংসাত্মক সকল অপসংস্কৃতি ভুলে সম্প্রীতির বন্ধনে জাগ্রত হোক পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ-ভালবাসা। দৃঢ় হোক মানবতার বন্ধন।

জয়তু বুদ্ধ সাসনম্।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!