গত মধু পূর্ণিমায় বুদ্ধ নামক বই প্রচার করে নট ফর সেল ক্লাব। বই প্রিন্ট করার আগের প্রচার প্রচারণা দেখে সবার এটাই মনে হয়েছিল যে তারা ৫০ জন গুণীজনের ধারাবাহিক যে জীবনী বের করতে যাচ্ছে তাতে বুদ্ধকে প্রথম সারিতে রেখেছে বলেই বুদ্ধকে নিয়েই প্রথম বইটি বের করতে যাচ্ছে। সারাদেশের বৌদ্ধরা বেশ আনন্দের সাথেই খবরটি গ্রহণ করে এবং প্রচার করে।
কিন্তু পরবর্তীতে বইটি বের হওয়ার পর পুরো বৌদ্ধ জাতিই হতাশ হয় কতিপয় কূপমুণ্ডক ছাড়া। হতাশ হওয়ার কারণ দুটা এক বইটিতে যুক্ত করা রঙিন ছবি। দ্বিতীয় বইটিতে অসংখ্য বিকৃত তথ্য। আদিম যুগের মানুষদের মতো নিম্নাঙ্গে বিকিনি এবং উর্ধ্বাঙ্গে ছোট একটা কাপড় পড়ে বিচে ঘুরে বেড়ানো বিদেশীদের জন্য কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু এদেশের মানুষের রুচিবোধ যে এখনো সেরকম নিচে আসেনি সেটা নট ফর সেল ক্লাবের সদস্যরা বুঝতেই চেষ্টা করেনি। আর তাই এক উলঙ্গ নারী আরেক উলঙ্গ পুরুষের যৌনাঙ্গ ধরে আছে এমন রঙিন ছবি প্রকাশ করতে তারা দ্বিধা করেনি। এবং সেটার পক্ষে সাফাই গাইতে তাদের রুচিতে এখনো বাঁধছে না।
তাদের যুক্তি ছিল তারা বইটি প্রকাশের আগেই ১১টি বিহারে পাঠিয়েছিল কিন্তু কেউ বিপক্ষে বলে নি। এখানে প্রশ্ন আসে ওই এগারোটি বিহারের সুনির্দিষ্ট কাউকে কি তারা বইটি মূল্যায়নের দায়িত্ব দিয়েছিলেন? তারা এখনো পর্য্যন্ত সুনির্দিষ্ট কারো নাম প্রকাশ করতে পারে নি। কিংবা সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব নিয়েছিলেন এমন কেউ সেরকম ঘোষণা দেয় নি। তাহলে বিষয়টি দাঁড়ায় তারা তাদের মতো বই দিয়ে দায় সেড়েছেন কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে কেউ বইটি পড়েনি কিংবা তাদের অভিযোগ দেয়নি বলেই আজকে এই মহাসমস্যার সৃষ্ঠি।
তারা ঢাকাস্থ বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভান্তের একটি কথাকে কোড করে প্রচার করছেন বারবার, তিনি বলেছেন ৪৭ বছরের ইতিহাসে এমন বই দেখেন নি। ভান্তেকে সরাসরি আমি নিজে ফোন করেছিলাম ভান্তে বললেন আমি কথাটা বলেছি বইটিতে তন্ত্রযান, বজ্রযান বিভিন্ন প্রকার যানের ধারাবাহিক বর্ণনা আছে বলেই । এরকম বাজে ছবিগুলো তখন আমার চোখে পড়েনি। এটার দায় তাদের।
মহাকারুণিক বুদ্ধের প্রচারিত ধর্ম জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য। তাই যে কেউ বুদ্ধকে নিয়ে গবেষণা করতেই পারে কিন্তু তাকে নিয়ে বিকৃত তথ্য প্রচার হলে এরকম নোংরা ছবি সে বইতে যুক্ত থাকলে ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ারই কথা আর তাই ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধরা নানা জায়গায় বিভিন্ন কমেন্ট করেছে দেখা যায়। অন্যদিকে নট ফর সেল ক্লাবের সদস্যরা লিখেছেন তারা মামলা করুক, আর কি কি করতে পারে আমরা দেখবো এভাবে উসকানি দিয়ে গেছেন। ইট মারলে পাটকেল খেতে হয় এটাই স্বাভাবিক তাই তাদেরকেও পাল্টা উত্তর দিয়েছেন অনেকে।
এসবের বাইরে তাদেরকে ভালো পরামর্শ দিয়েছেন এমন অনেকেই আছে। তাদের একজন সদস্য Ricktz Martinez নামক আইডিতে আমি নিজে পরামর্শ দিয়েছি তারা যেন তথ্যগুলো সংশোধন করে বাজে ছবিগুলো বাদ দিয়ে বইটি পুনরায় বের করে তাতে সবকিছুরই সমাধান হবে। এ বিষয়ে দুজন অভিজ্ঞ গবেষক বৌদ্ধকে তাদের সাথে নেওয়ার আহবান জানাই। কিন্তু দেখা যায় ঐ সদস্য বিভিন্ন জায়গায় কেবল উসকানিই দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু এই যে প্রস্তাব তার ওয়ালে দিলাম এসবের প্রত্যুত্তর নেই।
শুরুতে নট ফর সেল ক্লাব থেকে যদি এটুকুই বলা হতো যে যা হয়েছে হয়েছে আমরা এটার সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করবো তাহলে কিন্তু বৌদ্ধরা তখনই শান্ত হয়ে যেত। তা না করে তারা বারবার তাদের পক্ষ নিয়েই উসকানিমূলক কথা বলেছে। ফলশ্রুতিতে আমরা আগামী রবিবার মামলা করার ঘোষণা আমার ওয়ালে দিয়েছিলাম। এডভোকেট রিগ্যান বড়ুয়া এবং এডভোকেট প্রতীক বড়ুয়া পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে বৌদ্ধদের কতিপয় সিনিয়র ব্যক্তিদের সাথে তারা সমঝোতা চুক্তি করে, যেখানে বইটি আর প্রচার করবেনা বলে লিখিত দেন। তারপর আমরা থেমে যাই। কিন্তু পরক্ষণেই তাদের ওয়ালে ভিন্ন কথা প্রচার করা শুরু করেছেন। তাদের সভাপতি সহ যেই দল সমঝোতা করলো সেই দলকে নিস্ক্রিয় সদস্য বলা শুরু করলো যা রীতিমতো হাস্যকর।
বর্তমানে তারা বইটি নিয়ে নানা পোস্ট দিচ্ছেন উসকানিমূলক, বইটি আবার বের করবেন বলছেন সংশোধন করে। তারা প্রতিদিন উসকানিমূলক পোস্ট দিচ্ছে তার মূল কারণ আর কিছু নয় বইটির বহুল প্রচার। যত বেশি প্রচার হবে তত বেশি সেল হবে আর তাতে তাদেরই লাভ। আমাদের কতিপয় ধর্মপ্রিয় বৌদ্ধরা তাদের ওয়ালে গিয়ে কমেন্ট করছেন। তাতে কতিপয় আবেগী বৌদ্ধ গালাগাল করছেন তাদের ধর্মগুরুকেও টানছেন এটা কাম্য নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধদের আহ্বান করবো তাদের উসকানিতে পা না দিতে। তাদের পেইজে যত কমেন্ট করবেন তত বেশি তাদের প্রচারই বাড়বে।
আজকে সোজা বাংলায় দুটি কথা বলতে চাই ১) তারা যদি আমাদের সহায়তা চায় তবে অবশ্যই বইটির সংশোধনে সঠিক তথ্য দিয়ে বইটি সম্পাদনা করতে সহায়তা করবো আমরা। বৌদ্ধ গবেষী কয়েকজনকে নিয়ে তারা সংশোধন করে বইটি প্রচার করুক আমরা তাদের সাধুবাদ জানাবো। ২) সাধারণ বৌদ্ধদের তোয়াক্কা না করে যদি তাদের মতো করে বইটি পুনরায় প্রকাশ করে বাজারে ছাড়ে তবে কেবল বইটি নিষিদ্ধ নয় তাদের যারা জড়িত তাদেরকে কীভাবে আইনী প্রক্রিয়ায় শাস্তির আওতায় আনতে হয় সেটা আমরা করে ছাড়বো।
অতএব তারা কি ইল মোটিভ থেকে এসব করছেন নাকি সৎ উদ্দেশ্যে নিয়েই এসেছিল আমরা দেখতে চাই। সেই পর্য্যন্ত আপনারা এমন কোনো কমেন্ট করবেন না যাতে ঘাপটি মেরে থাকা শকুনেরা সাম্প্রদায়িক উসকানি নিয়ে হাজির হতে পারে। সেই পর্য্যন্ত ধৈর্য্য ধরুন। অপেক্ষায় থাকুন।
সকলের মৈত্রীচিত্ত উদয় হোক।