রাস্তায় পড়ে থাকা কুকুর উদ্ধার আর তাদের সেবা করতেই জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছেন চীনের সাংহাইয়ের এক বৌদ্ধ ভিক্ষু । ১৯৯৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার কুকুর রক্ষা করেছেন তিনি।
সাংহাইয়ের বায়ো’য়েন বিহারের অধ্যক্ষ ৫৩ বছর বয়সী ঝিজিয়াং। এখন তার শিষ্যরাই কুকুর দেখাশোনার প্রাত্যহিক কাজগুলো করে থাকে। বর্তমানে তার অধীনে রয়েছে আট হাজার কুকুর। এছাড়াও বহু বিড়াল, মুরগী, হাঁস আর ময়ুরও রয়েছে তার তত্ত্বাবধানে।
১৯৯৪ সাল থেকে পরিত্যক্ত আর রাস্তায় পড়ে থাকা প্রাণী উদ্ধার করে আসছেন ঝিজিয়াং। এতো বছরে এখন তিনি প্রাণীদের চিকিৎসা দেওয়ার কাজও খানিক শিখে নিয়েছেন। আগে নিজেই এসবের খরচ চালানো গেলেও সম্প্রতি তিনি অনুদান নেওয়া শুরু করেছেন।
১৯৯৪ সালে গাড়ি চালানোর সময় দেখতে পান, মহাসড়কে অন্য এক গাড়ির ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে আছে একটি বিড়াল। মরে যায়নি, কিন্তু মারাত্মক আহত সেটি। কেবল দুই পায়ে ভর করে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছিলো আহত বিড়ালটি। আর এই ঘটনা তাকে এতটাই নাড়া দেয় যে, তিনি রাস্তায় পড়ে থাকা প্রাণী উদ্ধার শুরু করেন।
শুরুতে কেবল বিড়ালই উদ্ধার করেছেন তিনি। কাগজের একটি ব্যাগ সঙ্গে রাখতেন তিনি। মরে যাওয়া প্রাণীগুলো সমাহিত করতেন আর আহত কিংবা বেওয়ারিশ পড়ে থাকা প্রাণীগুলোকে নিয়ে যেতেন পশু চিকিৎসকের কাছে। ২০০৬ সালে বায়ো’য়েন মন্দিরে আসার পর তিনি দেখতে পেলেন কেবল বিড়াল নয়, সবচেয়ে বেশি সাহায্য প্রয়োজন কুকুরের। সেই কারণে তখন কুকুরের প্রতি মনোযোগ বাড়ান তিনি।
২০১৭ সাল পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনও অর্থ অনুদান নেননি ঝিজিয়াং। কেউ দিতে চাইলে তিনি খাবার দিতে বলতেন কারণ প্রাণীদের তা দরকার। কিন্তু বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বাড়তে থাকলে তিনি বুঝতে পারেন এতো কুকুরের দেখভাল আর একার করা সম্ভব না।
ঝিজিয়াং বলেন, ‘২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আমি কোনও অর্থ নেইনি। তখন পর্যন্ত কেউ দিতে চাইলে আমি বলতাম প্রাণীদের অর্থ দরকার নেই, খাবার দরকার-আপনি খাবার দিতে সাহায্য করতে পারেন। আমি প্রাণীগুলো বায়ো’য়েন মন্দিরে রাখতাম। এক সময় আমার কাছে কুকুর, বিড়াল, মুরগী, হাঁস ও ময়ুর চলে আসলো। কিন্তু মন্দিরটি ছিলো ছোট।’
তিনি জানান, ‘ফলে ২০১৯ সালে আমি পুদোংয়ে একটি আশ্রয় কেন্দ্র ভাড়া নিয়ে সেখানে রাখা শুরু করি। এখানে প্রায় নয় হাজার বর্গমিটার জায়গা, মাসে ভাড়া আসে ১৫ লাখ ৭০ হাজার ইয়ান (চীনা মুদ্রা)। এখানে কাজ করে সাত জন। প্রতিদিন কুকুরের খাবার লাগে এক টন। প্রায় পাঁচ হাজার কুকুর আছে। একদিন একটি কুকুরের খাবার লাগে তিন ইয়ানের। হিসাব করলেই বুঝতে পারবেন কত খরচ লাগে।’
চীন এবং চীনের বাইরে লাখ লাখ মানুষের প্রশংসা পেয়েছেন ঝিজিয়াং। প্রায় তিন দশক প্রাণীদের সেবায় কাটিয়েছেন তিনি। তারপরও অনেক মানুষ রয়েছেন যারা বোঝেনই না কেন তিনি এসব করেন। আবার অনেকে তার সমালোচনাও করেন।
প্রতিদিন নানা বিপত্তির মুখে পড়লেও ঝিজিয়াং তার কাজ চালিয়ে যেতে চান। অন্তত ৬৫ বছর বয়সে যখন অবসর নেবেন তার আগ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে চান। আশা করছেন এর মধ্যেই কাউকে হয়তো পেয়ে যাবেন যিনি তার এই কাজ এগিয়ে নেবেন