পরিচয় হল বাসাবো থেকে সপরিবারে আসা চম্পা বড়ুয়ার সঙ্গে। বেশ উৎফুল্ল তিনি।
বললেন, “খুব ভালো লাগছে।”
তবে বৈরি আবহাওয়ায় দ্রুতই প্রার্থনা কক্ষের দিকে ছুটে গেলেন সবাই। স্বল্প পরিসরে বুদ্ধ পূর্ণিমার মূল আয়োজন ছিল বোধি বৃক্ষের নিচে ভক্তদের প্রার্থনা। হঠাৎ মাইকে শব্দ; কানে ভেসে এলো সাধু! সাধু! সাধু! একটু কাছে যেতেই বোধি বৃক্ষের নিচে মোমবাতির আলো চোখে পড়লো, নাকে এলো আগরবাতির সুগন্ধ।
ভেতরে ঢুকে জানা গেল, বিকেল ৫টা থেকে বোধি বৃক্ষের নিচে প্রার্থনা চলছে। মহাবিহারের উপাধ্যক্ষ ধর্মানন্দ মহাথেরোসহ অন্যরা এটি পরিচালনা করছেন। তিনবার সাধু বলা প্রার্থনারই অংশ। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভক্তদের নিয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত মোট আট বার প্রার্থনা করা হয়।
এরমধ্যে কথা হল ধর্মানন্দ মহাথেরোর সঙ্গে।
তিনি বললেন, “আমাদের সম্প্রদায়ের সবার সঙ্গে সৌহার্দ্য বিনিময় হয়েছে। এটি অনেক ভালো লাগার একটি বিষয়। যা বলে বোঝানো যাবে না।”
ঘুরে ঘুরে জানা গেল যে, ভক্তরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রার্থনায় এসেছেন। এ বছর অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশেই বুদ্ধ পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে গতবারের চেয়ে এবার একটু খোলামেলা ছিল। ভক্তদের উপস্থিতিও ছিল বেশি। প্রায় প্রতি বছরই বিদেশিদের নিমন্ত্রণ করা হতো। কিন্তু গত বছর এবং এবার তা করা হয়নি। যারা এসেছেন একেবারে নিজ থেকে এসেছেন।
বোধি বৃক্ষের নিচে প্রার্থনা কক্ষে বুদ্ধের আরেকটি মূর্তি ‘সিংহ সহ্যা’ রয়েছে। এটি বাংলাদেশের এক প্রকৌশলী তৈরি করেছেন। সন্ধ্যার পর মহাবিহারের পুকুর ঘাটগুলো আরো বেশি সুন্দর হয়ে উঠলো। টলমলে পানি ঝলমল করতে লাগলো। মহাবিহাওে পুকুরের ঘাটগুলোর নাম রাখা হয়েছে হানিফ চত্বর। সেই ঘাটেরই এক পাশে বুদ্ধের বিশাল মূর্তির চারপাশ জুড়ে চলছে রঙিন আলোর ঝলকানি। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
ওইদিন সকালে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে বুদ্ধপূজা ও ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে সমবেত প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারীতে সরকারি বিধিমালা অনুসরণ করে তা পালন করা হয়।
এছাড়াও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব মি. পি আর বড়ুয়া।এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (মতিঝিল) মি. আব্দুল আহাদ।
আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সিনিয়র সহসভাপতি ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, সহসভাপতি মি. রনজিত বড়ুয়া, সহসভাপতি প্রফেসর ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ড. সুমন কান্তি বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মি. অনুপম বড়ুয়া প্রমূখ।
ভিক্ষু সংঘের প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা ধমরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের উপাধ্যক্ষ ভদন্ত আনন্দমিত্র মহাথেরো এবং ধর্মানন্দ মহাথেরোসহ অনেকে।
মহামারীর মধ্যে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন শেষে সুখানুভূতি নিয়ে ভক্তরা ফিরতে শুরু করেন এক সময়। আমিও সেই পথ ধরি।