1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৯ অপরাহ্ন

অনাত্ম লক্ষণ সূত্র

ড. সুমনপ্রিয় ভিক্ষু
  • সময় সোমবার, ৩ মে, ২০২১
  • ৫৬৮ পঠিত

[ মহাকারুণিক বুদ্ধ বলেছেন- “ধর্ম – বিনয়ে” উৎসাহ ও শিক্ষাব্রতী হওয়া উচিত। তবেই বুদ্ধের মহামূল্যবান ধর্ম বা ত্রিপিটক পৃথিবী হতে বিলুপ্ত হবে না!

আজ পবিত্র অষ্টমী উপোসথ দিবস, ৪ মে, ২০২১ ইং, ২১ বৈশাখ ১৪২৮ বাংলা, রোজ মঙ্গলবার। নতুন বাংলা বছরের (১৪২৮ বাংলা) শুরুতেই “বৌদ্ধ ধর্ম দর্শনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়” সম্বলিত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র আমার দৃষ্টিগোচর হয়, যেই সূত্র মহাকারুণিক বুদ্ধের ৩য় তম প্রধান সূত্র। যেই সূত্র শ্রদ্ধার সাথে শ্রবণ করে বুদ্ধের ৫জন শিষ্য আসব হতে মুক্ত হয়েছিল এবং জগতে বুদ্ধসহ ৬ জন অর্হৎ উৎপন্ন হয়েছিল।

বৈশাখের ১ম দিন থেকেই সংকল্পবদ্ধ হয়ে অন্তস্থ (মুখস্থ) করতে চেষ্টা করেছেন ভদন্ত সুমনপ্রিয় ভিক্ষু। সামাজিক, সাংগঠনিক, ধর্মীয় সকল কাজের পাশাপাশি মনোযোগ দিয়ে টানা ২০ দিনের প্রচেষ্টায়  সফল হতে সক্ষম হয়েছেন। অনুবাদসহ ৭ পৃষ্ঠা, প্রায় ৯১০ শব্দের অধিক (উজ্জ্বল বড়ুয়া বসু’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে – মৈত্রীপ্রদীপ সংঘ রক্ষিত মহাস্থবির স্মরণে  প্রকাশিত “সূত্র সংকলন”- ভিক্ষু মুদিতাপাল, পৃ. ১৭৮-১৮৪)  ]

অনাত্ম লক্ষণ সূত্র বঙ্গানুবাদ

আয়ুষ্মান কৌন্ডিণ্য ধর্ম প্রত্যক্ষ করিয়া, সংশয় মুক্ত হইয়া আত্ম প্রত্যয় লাভ করিলেন। অতঃপর ভগবান অবশিষ্ট ভিক্ষুগণকে ধর্মোপদেশ প্রদান করিতেন।

এই উপদেশ এবং অনুশাসন প্রদানপূর্বক আয়ুষ্মান বপ্প ও ভদ্রিয়ের বিরজ;বিমল ধর্মচক্ষু উৎপন্ন হইল – যা কিছু সমুদয়ধর্মী তৎসমস্তই  নিরোধোধর্মী। ভগবান ভিক্ষুদের আহরিত ভিক্ষান্ন ভোজন করে অবশিষ্ট ভিক্ষুগণকে ধর্মোপদেশ এবং ধর্মানুসাশন প্রদান করিতেন। তিনজন ভিক্ষু ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করিয়া তাহাতে ছয়জন ভিক্ষু দিনযাপন করিতেন। তারপর ভগবান আয়ুষ্মান, মহানাম ও অশ্বজিৎকে ধর্মোপদেশ প্রদান করতেন। তাহা শ্রবণ করিয়া আয়ুষ্মান মহানাম ও অশ্বজিতের বিরজ; বিমল ধর্মচক্ষু লাভ হইল – যাহা কিছু সমুদয়ধর্মী তাহা সবই বিলয়ধর্মী। এইরূপে ভিক্ষুগণ ধর্ম প্রত্যক্ষ করিয়া সংশয় মুক্ত হইয়া আত্মপ্রত্যয় লাভ করিয়া ভগবানের নিকট প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা লাভ করিল। ভগবান তাঁহাদের আরও বলিলেন – এসো, ভিক্ষুগণ সুব্যাখ্যাত ধর্মে ব্রহ্মচর্য পালন করিয়া সম্যক প্রকারে দুঃখের অন্তসাধন কর।

১. অতঃপর ভগবান পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুদের সম্বোধন করিয়া বলিলেন- হে ভিক্ষুগণ ! রূপ অনাত্ম, আত্মা নহে, যদি রূপ আত্মা হইত তবে তাহা পীড়ার কারণ হইত না এবং রূপে এইরূপ অধিকার লাভ করা যাইত রূপ আমার এইরূপ হউক, রূপ আমার এইরূপ না হউক। যেহেতু রূপ আত্মা নহে সেহেতু রূপ পীড়ার কারণ হইয়া থাকে এবং আমার রূপ এইরূপ হউক, ওরূপ হউক, এ অধিকার লাভ হয় না।

২. হে ভিক্ষুগণ ! বেদনা  অনাত্ম, আত্মা নহে, যদি বেদনা আত্মা হইত তবে তাহা পীড়ার কারণ হইত না এবং বেদনা এইরূপ অধিকার লাভ করা যাইত, বেদনা  আমার এইরূপ হউক,বেদনা  আমার এইরূপ না হউক। যেহেতু বেদনা  আত্মা নহে সেহেতু বেদনা  পীড়ার কারণ হইয়া থাকে এবং আমার বেদনা  এইরূপ হউক, ওরূপ হউক, এ অধিকার লাভ হয় না।

সংজ্ঞা   অনাত্ম, আত্মা নহে, যদি সংজ্ঞা  আত্মা হইত তবে তাহা পীড়ার কারণ হইত না এবং সংজ্ঞা এইরূপ অধিকার লাভ করা যাইত, সংজ্ঞা  আমার এইরূপ হউক, সংজ্ঞা   আমার এইরূপ না হউক। যেহেতু সংজ্ঞা   আত্মা নহে সেহেতু সংজ্ঞা  পীড়ার কারণ হইয়া থাকে এবং আমার সংজ্ঞা  এইরূপ হউক, ওরূপ হউক, এ অধিকার লাভ হয় না।

সংস্কার অনাত্ম, আত্মা নহে, যদি সংস্কার আত্মা হইত তবে তাহা পীড়ার কারণ হইত না এবং সংস্কার  এইরূপ অধিকার লাভ করা যাইত, সংস্কার  আমার এইরূপ হউক, সংস্কার  আমার এইরূপ না হউক। যেহেতু সংস্কার  আত্মা নহে সেহেতু সংস্কার পীড়ার কারণ হইয়া থাকে এবং আমার সংস্কার এইরূপ হউক, ওরূপ হউক, এ অধিকার লাভ হয় না।

বিজ্ঞান  অনাত্ম, আত্মা নহে, যদি বিজ্ঞান আত্মা হইত তবে তাহা পীড়ার কারণ হইত না এবং বিজ্ঞান   এইরূপ অধিকার লাভ করা যাইত, বিজ্ঞান   আমার এইরূপ হউক, বিজ্ঞান আমার এইরূপ না হউক। যেহেতু বিজ্ঞান  আত্মা নহে সেহেতু বিজ্ঞান  পীড়ার কারণ হইয়া থাকে এবং আমার বিজ্ঞান  এইরূপ হউক, ওরূপ হউক, এ অধিকার লাভ হয় না।

৩. হে ভিক্ষুগণ! তোমরা কি মনে কর রূপ নিত্য কিংবা অনিত্য? – উত্তরে – অনিত্য ভান্তে।

তা দুঃখ কিংবা সুখ ? – উত্তরে – দুঃখ ভান্তে।

যাহা অনিত্য ও বিপরিণামধর্মী (পরিবর্তনশীল) তাহা কি তোমরা এইরূপ দেখিতে পার? ইহাই আমার, ইহাই আমি, ইহাই আমার আত্মা (নিজস্ব) । – উত্তরে – না,  ভান্তে। আমরা সেইরূপ দেখিতে পারি না।

৪. হে ভিক্ষুগণ! তোমরা কি মনে কর বেদনা নিত্য কিংবা অনিত্য? – উত্তরে – অনিত্য ভান্তে।

তা দুঃখ কিংবা সুখ ? – উত্তরে – দুঃখ ভান্তে।

যাহা অনিত্য ও বিপরিণামধর্মী (পরিবর্তনশীল) তাহা কি তোমরা এইরূপ দেখিতে পার? ইহাই আমার, ইহাই আমি, ইহাই আমার আত্মা (নিজস্ব) । – উত্তরে – না,  ভান্তে। আমরা সেইরূপ দেখিতে পারি না।

তোমরা কি মনে কর সংজ্ঞা  নিত্য কিংবা অনিত্য? – উত্তরে –  অনিত্য ভান্তে।

তা দুঃখ কিংবা সুখ ? – দুঃখ ভান্তে।

যাহা অনিত্য ও বিপরিণামধর্মী (পরিবর্তনশীল) তাহা কি তোমরা এইরূপ দেখিতে পার? ইহাই আমার, ইহাই আমি, ইহাই আমার আত্মা (নিজস্ব) । – উত্তরে – না,  ভান্তে। আমরা সেইরূপ দেখিতে পারি না।

তোমরা কি মনে কর সংস্কার  নিত্য কিংবা অনিত্য? – উত্তরে –  অনিত্য ভান্তে।

তা দুঃখ কিংবা সুখ ? – দুঃখ ভান্তে।

যাহা অনিত্য ও বিপরিণামধর্মী (পরিবর্তনশীল) তাহা কি তোমরা এইরূপ দেখিতে পার? ইহাই আমার, ইহাই আমি, ইহাই আমার আত্মা (নিজস্ব) । – উত্তরে – না,  ভান্তে। আমরা সেইরূপ দেখিতে পারি না।

তোমরা কি মনে কর বিজ্ঞান  নিত্য কিংবা অনিত্য? – উত্তরে –  অনিত্য ভান্তে।

তা দুঃখ কিংবা সুখ ? – উত্তরে –  দুঃখ ভান্তে।

যাহা অনিত্য ও বিপরিণামধর্মী (পরিবর্তনশীল) তাহা কি তোমরা এইরূপ দেখিতে পার? ইহাই আমার, ইহাই আমি, ইহাই আমার আত্মা (নিজস্ব) । – উত্তরে – না,  ভান্তে। আমরা সেইরূপ দেখিতে পারি না।

৫. হে ভিক্ষুগণ! অতীত, অনাগত, বর্তমান রূপ, অধ্যাত্ম বা বাহ্যরূপ, স্থুল বা সূক্ষ্ম রূপ, হীন বা উৎকৃষ্ট রূপ, দূরবর্তী বা নিকটবর্তী রূপ তাহা (সকল প্রকার রূপ ) আমার নহে, তাহা আমি নহে; তাহা আমার আত্মাও নহে। এইরূপ বিষয়টি যথাযথভাবে সম্যক প্রজ্ঞা দ্বারা দেখিতে হইবে।

অতীত, অনাগত, বর্তমান বেদনা, অধ্যাত্ম বা বাহ্য বেদনা, স্থুল বা সূক্ষ্ম বেদনা, হীন বা উৎকৃষ্ট বেদনা, দূরবর্তী বা নিকটবর্তী বেদনা তাহা (সকল প্রকার বেদনা ) আমার নহে, তাহা আমি নহে; তাহা আমার আত্মাও নহে। এইরূপ বিষয়টি যথাযথভাবে সম্যক প্রজ্ঞা দ্বারা দেখিতে হইবে।

অতীত, অনাগত, বর্তমান সংজ্ঞা, অধ্যাত্ম বা বাহ্য সংজ্ঞা, স্থুল বা সূক্ষ্ম সংজ্ঞা,  হীন বা উৎকৃষ্ট সংজ্ঞা,  দূরবর্তী বা নিকটবর্তী সংজ্ঞা তাহা (সকল প্রকার সংজ্ঞা  ) আমার নহে, তাহা আমি নহে; তাহা আমার আত্মাও নহে। এইরূপ বিষয়টি যথাযথভাবে সম্যক প্রজ্ঞা দ্বারা দেখিতে হইবে।

অতীত, অনাগত, বর্তমান সংস্কার, অধ্যাত্ম বা বাহ্য সংস্কার, স্থুল বা সূক্ষ্ম সংস্কার, হীন বা উৎকৃষ্ট সংস্কার, দূরবর্তী বা নিকটবর্তী সংস্কার তাহা (সকল প্রকার সংস্কার) আমার নহে, তাহা আমি নহে; তাহা আমার আত্মাও নহে। এইরূপ বিষয়টি যথাযথভাবে সম্যক প্রজ্ঞা দ্বারা দেখিতে হইবে।

৭. শ্রুতবান আর্যশ্রাবক বিষয়টিকে এইরূপে নির্বেদ প্রাপ্ত হয়; সংজ্ঞায় -সংস্কারে-বিজ্ঞানে নির্বেদ হয়; নির্বেদ হেতু বীতরাগ হয়, বীতরাগ হেতু বিমুক্ত হয়, বিমুক্ত হইলে বিমুক্ত হইয়াছিল রূপে জ্ঞান হয়, জন্মবীজ ক্ষীণ হইয়াছে, ব্রহ্মচর্য উদযাপিত হইয়াছে, করণীয় কর্ম কৃত হইয়াছে, অতঃপর এই সংসারে আর পুনরাগমন করিতে হইবে না বলিয়া প্রকৃতরূপে জানিতে পারে।

৮. এইরূপ ভাষিত হইলে পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুগণ ভগবানের ভাষণকে প্রীতমনে অভিনন্দিত করিলেন।

৯. এইরূপ ভাষণের পর পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুগণ আসব (তৃষ্ণা) মুক্ত হইলেন।

১০. সেই সময় পর্যন্ত জগতে মাত্র ছয়জন অর্হৎ উৎপন্ন হইলেন।

 

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!