1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৫ অপরাহ্ন

অমল বড়ুয়ার অসাধারণ বই ‘লোক প্রশাসনে বৌদ্ধ অনুধ্যায়’

সনজীব বড়ুয়া
  • সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২১
  • ৪২৮ পঠিত

‘লোকপ্রশাসনে বৌদ্ধ অনুধ্যায়’ সমকালীন সময়ের তরুণ গবেষক, প্রতিশ্রুতিবান সৃজনশীল লেখক অমল বড়ুয়া বিরচিত গবেষনামূলক গ্রন্থ। বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর প্রাদূুর্ভাবে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও যখন সংক্রমণ রোধে সরকার লকডাউন ঘোষণা করে ঠিক সে সময়টাতে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক ‘বুদ্ধ’ এর সমসাময়িক কালসহ পরবর্তী সময়ে প্রাচীন ভারতের রাজন্যবর্গ তথা শাসকগোষ্ঠী রাজ্য পরিচালনায় বৌদ্ধ ধর্ম প্রভাব এবং বৌদ্ধ ধর্মের নীতি নৈতিকতাসমূহ কতটুকু অনুসৃত হয়েছিল তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। দীর্ঘ আট মাস গবেষণার ফসল এই গ্রন্থ। একুশে বই মেলাকে উপলক্ষ করে অক্ষরবৃত্ত গ্রন্থটি প্রকাশ করে।

যে সময়কে উপজীব্য করে লেখক গ্রন্থটি প্রকাশে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তা হল খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ অব্দ ও তৎপরবর্তী সময়। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ অব্দে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি বুদ্ধের আবির্ভাব। বুদ্ধের সমকালীন সময়ে সমগ্র ভারত কোন অখন্ড সর্বভারতীয় রাজ্য ছিল না। সে সময় সমগ্র ভারত ষোড়শ মহাজনপদ তথা রাজ্যে বিভক্ত ছিল। ঐতিহাসিক রমিলা থাপা’র (অনুবাদঃ কৃষ্ণা গুপ্তা) ভারতবর্ষের ইতিহাসঃ বিভিন্ন গণরাজ্য ও রাজ্য নামক গ্রন্থে এ বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। ষোড়শ মহাজনপদের মধ্যে বৃজি ছিল প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক জনপদ। বৃজি রাজন্যবর্গ তথা শাসকগোষ্ঠী ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মে অনুপ্রাণিত। ফলে তাদের রাজ্য পরিচালনায় বুদ্ধের গণতান্ত্রিক নীতি অনুসরণের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে মৌর্য রাজ বংশের সম্রাট অশোক খ্রীষ্টপূর্ব ২৬০ অব্দে বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বুদ্ধ উপদিষ্ট নীতি অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন।
লোকপ্রশাসনের দক্ষতা, নৈতিকতা, সততা, মিতব্যয়িতা ও নিষ্ঠা পরায়ণতা হল রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির পথে উত্তরণের চাবিকাঠি। লেখক অমল বড়ুয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন বুদ্ধ প্রজ্ঞাপ্ত ধর্ম সম্পূর্ণই নৈতিকতা সমৃদ্ধ অনুশাসন। কাজেই বৌদ্ধ ধর্ম সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই নৈতিকতা ও সততাকে প্রাধান্য দিয়েছে। লেখকের দ্বিতীয় অধ্যায়ে উল্লেখিত বুদ্ধ দেশিত ‘দশরাজাধর্ম’ অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করা হলে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। মৌর্য রাজবংশের সম্রাট অশোক খ্রীষ্টপূর্ব ২৬০ অব্দে বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে বুদ্ধ উপদিষ্ট ‘দশরাজাধর্ম’ নীতি অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন। আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের যে বৈশিষ্ট্যসমূহ আমরা দেখি সম্রাট অশোক তাঁর শাসনকালেই এ সকল বৈশিষ্ট্যসমূহ চর্চার স্বাক্ষর রেখে গেছেন দুই হাজার তিনশ বছর পূর্বেই।

সনাতনী লোকপ্রশাসনে বিশ্বাসী সমাজ বিজ্ঞানীরা লোকপ্রশাসনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সমূহকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে না দেখলেও তুলনামূলক লোকপ্রশাসনের প্রবক্তা সমাজ বিজ্ঞানীরা জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধসহ মানবিকতা, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণ, সামাজিক ন্যায়বিচার ইত্যাদি সামাজিক মূল্যবোধকে লোকপ্রশাসনে স্থান দেয়। তেমনি ভাবে বুদ্ধ তাঁর প্রবর্তিত ধর্মের অনুশাসনের মাধ্যমে জাত-পাত, লিঙ্গ-বর্ণ ও ধনী-গরীব ইত্যাদি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভেদাভেদের মূলে কুঠারাঘাত করে সমতাভিত্তিক বৈষম্যহীন ন্যায়বিচার সম্পন্ন সংঘ তথা সংগঠন গড়ে তোলেন। ফলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বুদ্ধের সাম্য-মৈত্রীর পতাকাতলে সামিল হয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক নব অধ্যায়ের সূচনা করেন। ফলে ন্যায়বিচার ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থার উন্মেষ ঘটে। বৌদ্ধ লোকপ্রশাসনে নব লোকপ্রশাসন তত্ত্বটি লেখক এখানে অত্যন্ত সুচারুভাবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছেন।
গ্রন্থটিতে লেখক অমল বড়ুয়া একটি আধুনিক রাষ্ট্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে সামনে নিয়ে এসেছেন আর তা হলো সুশাসন যা সমাজ, সংগঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় এক অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুশাসনের অনুপস্থিতি জনকল্যাণকে ব্যাহত করে। সুশাসন নির্ভর করে শাসকের ন্যায়পরায়ণতা ও প্রশাসনের জবাবদিহিতার ওপর। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থসমূহে প্রশাসকদের ব্যক্তিগত লোভ-লালসা, ভোগ-বিলাস ও মোহহীন হয়ে সততার সাথে কর্ম সম্পাদনের উপদেশ দিয়ে থাকে। বুদ্ধের সপ্ত অপরিহানীয় ধর্মের উপদেশ অনুসারে বুদ্ধের সমকালীন সময়ে বৃজিগণ প্রকৃষ্ট গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও গ্রন্থটিতে লেখক বৌদ্ধ লোকপ্রশাসনের প্রকৃতি, ব্যবস্থাপনা, আমলাতন্ত্র, ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যা লোকপ্রশাসনে বৌদ্ধ ধর্মের অবদান ও প্রভাবকে বিশদভাবে বিধৃত করে। এতদিন প্রাচ্যের (ওরিয়েন্টালিজম) লোকপ্রশাসন সম্পর্কে গবেষণা, অধ্যয়ন ও চর্চার ক্ষেত্রে বৌদ্ধ লোকপ্রশাসন ছিল একটি অনুজ্জ্বল অধ্যায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, তরুণ গবেষক অমল বড়ুয়া’র ‘লোকপ্রশাসনে বৌদ্ধ অনুধ্যায়’ গ্রন্থটির মাধ্যমে লোকপ্রশাসন বিষয় সংশ্লিষ্ট গবেষক, শিক্ষার্থী ও আগ্রহী পাঠকদের প্রাচ্যের (ওরিয়েন্টালিজম) লোকপ্রশাসন সম্পর্কে বিশদ জ্ঞানার্জনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আলোচ্য গ্রন্থখানি কেবল লোকপ্রশাসন সংশ্লিষ্টই নয় বরং ইতিহাস চর্চায় সচেষ্ট সকলের জ্ঞানের পরিধির বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা রাখবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা হলে গ্রন্থটি আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত হবে।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!