কক্সবাজারের রামু উপজেলায় রয়েছে নানান প্রাচীন স্থাপনা। তৎকালীন ব্রিটিশ এবং তার আগেকার সময়ও আরাকান সাম্রাজ্যের মাধ্যমে রামু হয়ে উঠেছিল তাদের পরিচিতি ও বিশ্বস্ত একটি জায়গা। রামুর বেশিরভাগ পুরনো স্থাপনা তৎকালীন রাখাইন সম্প্রদায়ের দ্বারা নির্মিত। সেই স্থাপনার মধ্যে রয়েছে রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট উখিয়ারঘোনা গ্রামের এই প্রাচীন লাউয়ে জাদী।
ইতিহাসনির্ভর বই ‘রামুর প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য থেকে জানা যায়, প্রায় ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে লাউয়ে জাদীটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯২ সালে এসে সংস্কার করা হয়। এই বইয়ের লেখক স্বয়ং জাদীটির উচ্চতা মেপে দেখেছিলেন বহু আগে। সমতল থেকে ৫০০ ফুট উচ্চতায় এই জাদীর অবস্থান। ১৯৯২ সালের পর জাদীর কোনো সংস্কার করা হয়নি। অবশ্য ২০১২-১৩ সালের দিকে স্থানীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর একটি অংশ জাদীটির কিছুটা সংস্কার করেছিল বলে স্থানীয়দের থেকে জানা যায়।
দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, ২০০০ সাল থেকে টানা ২০০৭ পর্যন্ত জাদীটির পাদদেশে বাৎসরিক মেলা এবং নানা উৎসব হতো। হাজার হাজার পূণ্যার্থী ও পর্যটকের ভিড়ে লোকারণ্য থাকতো লাউয়ে জাদীর অঙ্গন। ২০১০ থেকে শুরু করে কয়েক দফায় ভারী বর্ষণ এবং নানা অপতৎপরতায় জাদীটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে, বর্তমানে ওখানে গেলে মনে হবে এই বোধহয় জাদীটি হেলে পড়বে। অযত্ন-অবহেলার কারণে জাদীর গায়ে লেখা বিভিন্ন ব্যক্তির নামও প্রায় মুছে গেছে।
স্থানীয়রা বলেন, ৩০০ বছর আগে নির্মিত জাদীটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। এটি রক্ষার দায়িত্ব সকলের। এটি সংরক্ষণ করতে না পারলে আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমরা চাই প্রাণের রামুর অমূল্য এই স্থাপনাটি আবারো প্রাণ ফিরে পাক। লোকারণ্যে মুখরিত হোক জাদীর পাদদেশ এবং উৎসবে মেতে উঠুক রামুবাসী।
রামুর সামাজিক ও মানবিক সংগঠন স্বপ্ন এর চেয়ারম্যান সুমত বড়ুয়া বলেন, এটা আমাদের ধর্মীয় দিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রত্নতাত্ত্বিক ও কক্সবাজার পর্যটন শিল্পের জন্য সমান গুরুত্ব বহন করে। আশা করি বৌদ্ধ নিদর্শন রক্ষায় ও পর্যটন শিল্প বিকাশে এই শত বছরের প্রাচীন জাদী রক্ষায় সরকারের সুদৃষ্টি পড়বে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা বলেন, জাদীটি প্রত্নতাত্ত্বিক ও পুরনো সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে। এটি সংস্কার ও সংরক্ষণের বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের সাথে যত দ্রুত সম্ভব যোগাযোগ করা হবে।
প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের চটগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এটি সংস্কার করবে এবং পর্যটন স্পট হিসাবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাবে, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সুপারিশ করব যাতে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।