1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন

মহামান্য সংঘরাজ ও এক মহাজীবন

এস.লোকজিৎ ভিক্ষু
  • সময় শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৮৪৮ পঠিত
বাংলাদেশে বিনয় সম্মত থেরবাদ আর্দশের বিজয় পতাকা উড্ডীনে এবং সুরক্ষায় যে কয়জন বর্ষীয়ান সংঘপুরাধা জীবনের সমস্ত ত্যাগের মহান আর্দশের বিনিময়ে বৌদ্ধ জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় আজীবন কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সদ্ব্য প্রয়াত বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্ছ ধর্মীয় গুরু, অগ্গমহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ, ত্রিপিটক সাহিত্য চক্রবর্তী উপাধি ভূষিত, বিশ্বররেণ্য বৌদ্ধ মনীষা মহামান্য সংঘরাজ পরম শ্রদ্ধেয় ড. ধর্মসেন মহাথেরো। তিনি দীর্ঘকাল ধরে পবিত্র ভিক্ষুজীবন অতিবাহিত করে জাতি, সমাজ, সদ্ধর্ম বির্নিমানে বহুবিধ কাজ সম্পাদন করেছে, তাঁহার জীবনকে করেছে বর্ণাঢ্যময় । তিনি জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে বিশ্বমানবতার হিতে দেশে বিদেশে গমন করে বুদ্ধের আর্দশ মহান বাণী প্রচার প্রসারে জীবনকে উৎসর্গীত করেছেন । তাহার মহান কর্ম যজ্ঞে লাভ করেছেন বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরুর পদমর্যাদা, দেশে বিদেশে পেয়েছেন বহু উপাধি সম্মানোনা, হয়েছেন বিশ্ববরেণ্য বৌদ্ধ পন্ডিত ।
জন্মজনপদ: এই পুণ্যপুরুষের জন্ম পটিয়া উপজেলায় অন্তর্গত ঊনাইনপুরা গ্রামে। বাংলায় থেরবাদ আর্দশ প্রচার প্রসারে স্মরণাতীত কালের ইতিহাসে এ পর্যন্ত জনবহুল যতসব গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তৎমধ্যে অন্যতম বৌদ্ধ ঐতিহাসিক সমৃদ্ধ জনপদ ‘উনাইনপুরা’। এইগ্রামে যুগে যুগে বিভিন্ন মনীষীদের আর্বিভাব ধন্য হয়েছে বৌদ্ধ সমাজ ,জাতি।ধম্মপদে বলা হযেছে-
দুল্লভো পুরিসাজঞ্ঞো ন সো সবসত্থ জায়তি;
যত্থ সো জায়তি ধীরো তং কুলং সুকমেধতি ।
অর্থাৎ (বুদ্ধের ন্যায় ) পুরুষোত্তম দুর্লভ । তিনি সর্বত্র জন্মগ্রহন করেন না । যেখানে সেই মহাপুরুষ জন্মগ্রহন করেন সেই দেশও জাতি সুখ-সমৃদ্ধ হয়।
এই গ্রামে বহু পুণ্য জন্মগ্রহন করেছে । সমাজ সভ্যতা সংস্কৃতিতে এই গ্রামের কুলপুত্রগণ প্রব্রজিত জীবনে অঢেল কৃতিত্বের দাবিদার। যা বর্তমানেও সমাজগগণে আলোর সঞ্চার করার অবদানে নিবেদিত। এই গ্রামের আনক্থা পুংঙ্গী বংশের মধ্যবিত্তশালী মহিরাজ বড়ুয়া এবং তাঁর সহধর্মিনী সুরবালা বড়ুয়া কোল আলোকিত করে আর্বিভূত হলেন এক নবজাত শিশু। ১৯২৮ সালে ১৭ জুন রবিবার এই নবজাত শিশুই আজকে দেবতুল্য, বিশ্ববরেণ্য বৌদ্ধ পন্ডিত, বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু মহামান্য সংঘরাজ পন্ডিত ড. ধর্মসেন মহাথেরো। পন্ডিত ধর্মসেন মহাস্হবির ছিলেন সেই পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান। তাঁর প্রথম বোন হেমলতা বড়ুয়া অল্প বয়সে ইহধান ত্যাগ করেন। নবজাত এই সন্তানের নাম রাখলেন রসধর বড়ুয়া।
বাড়ীর কিছু দূরেই শতাব্দীর অন্যতম পুণ্যপীঠ লংকারাম বিহার তখন এই বিহারের অবস্হান করতো শতাব্দীর কালজয়ী পুণ্যপুরুষ আর্যশ্রাবক হিসাবে খ্যাত মহাযোগী জ্ঞানীশ্বর মহস্হবির। তাই দৈনন্দিন কুশল কর্মে সম্পৃক্ত থাকা এ গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বণিতার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। শিশুপুত্র রসধর বড়ুযাও একই আর্দশের অনুপ্রাণিত হয়ে বড় হতে লাগল। মহাত্যাগী পুণ্যপুরুষ শ্রদ্ধেয় জ্ঞানীশ্বর মহাস্হবিরের ভিক্ষু জীবনের আর্দশই বারংবার বালক রসধর বড়ুয়া’র জীবনে রেখাপাত করতে থাকে।
প্রব্রজ্যা ঃ কথায় আছে – বহুজন্মে থাকলে ভাগ্য , বিষয় ছেড়ে হয বৈরাগ্য । ১৯৪২ সালে বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটা মেঘ পৃথিবীর আলোর প্রাণ সঞ্চালন সূর্যকে ঢেকে রেখেছে। ফলে দূর্ভিক্ষের রেশ তখনো কাটিয়ে উঠেনি। বালক রসধরের বয়স ১৪ বছর। মায়ের আশার আলো একমাত্র পুত্র রসধর বড়ুয়া’র কঠিন পীড়া গ্রস্হ হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিল। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই লংকারাম বিহারে গিয়ে বুদ্ধের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলেন এবং প্রার্থনা করলেন আমার ছেলে যদি রোগমুক্ত হয় তবে ১২ বছর বয়সে পুণ্যপুরুষ জ্ঞানীশ্বর মহাস্হবিরের কাছে প্রব্রজিত করে দানকরে দেব। কিন্তু বর্তমানে ছেলের বয়সতো চৌদ্দ বছর আমার প্রতিজ্ঞাতো রাখতে পারলাম না। তখনই তিনি পুত্রের জীবন সৌন্দর্যের মঙ্গল কামনায় আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে গ্রামবাসীর সম্মিলনে পুত্রকে পরম পুরুষ মহাযোগী জ্ঞানীশ্বর মহাস্হবিরের শ্রীপাদ পদে প্রব্রজিত করে দান করে দিলেন। নব প্রব্রজিত কুলপুত্রের নাম রাখা হয় ধর্মসেন শ্রামণ । এখানে উল্লেখ্য তাঁর প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদায় বিশেষ ভাবে সহযোগিতা করেন রুদুরা নিবাসী শ্রামণ ধর্মসেনের বড়মামা বরদা চরণ বড়ুয়া। তিনি ছিলেন অপুত্রক ফলে ভাগিনাকে পুত্রবৎ স্নেহ মমতা করতেন। তার চৌদ্দ কানি সম্পত্তি জমি ও চার পুকুরের অংশ ভাগিনা ধর্মসেনকে প্রদান করতে চান। কিন্তু মহৎ মনের অধিকারী লোভহীন এ সংঘ মনীষা তা গ্রহণ না করে তার ছোট মামা শারদা চরণ বড়ুয়ার দ্বিতীয় ছেলে ইন্দুভূষণ বড়ুয়াকে দিয়ে দেন। এছাড়াও উপসম্পদায় বিশেষ অংশ গ্রহণ করেন বিহারীলাল বড়ুয়া। তাঁর ভিক্ষুত্ব জীবনে তাদের অবদানও স্মরণযোগ্য।
শিক্ষা ঃ তিনি গৃহী জীবনে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যায়ন করেন। ছাত্র হিসাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর গুরুদেবের আর্দশ ছায়াতলে শ্রামণ ধর্মসেনের জ্ঞানস্পৃহার সুপ্ত বীজ সজীব হয়ে উঠে। একাডেমিক শিক্ষার পথ বন্ধ হলেও ত্রিপিটক শাস্ত্রশিক্ষায় বেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন। তাঁর গুরুদেব জ্ঞানীশ্বর মহাস্হবির প্রতিষ্ঠিত উনাইপুরা পূর্ণাচার পালি টোল থেকে ১৯৪৩ সালে ১৬ বছর বয়সে শ্রামণ ধর্মসেন সূত্র আদ্য পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৪ সালে সূত্র মধ্য এবং বিনয় আদ্য পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৫ সালে সূত্র উপাধি ও বিনয় মধ্য এর অভিধর্ম আদ্য পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
উপসম্পদা ঃ ১৯৪৭ সালের ১৭ই মার্চ আশ্বিন উনাইনপুরা লঙ্কারামে নির্ধারিত কঠিন চীবর দানে পঞ্চমী তিথিতে আচারিয়া পূর্ণাচার সীমালয়ে জ্ঞানীশ্বর মহাস্হবিরের উপাধ্যায়ত্বে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপসম্পদা গ্রহণ করলেন। নবদীক্ষিত ভিক্ষুর নামকরণ করা হয় ধর্মসেন ভিক্ষু। উপসম্পদায় আচায্য গণের মাঝে অন্যতম ছিলেন মহান সাধক অগ্রলংকার মহাস্হবির, বিনয়াচার্য আর্যবংশ মহাস্হবির, বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্হবির, সাধক (সংঘনায়ক পরবর্তীতে) আনন্দমিত্র মহাথেরো এবং ধর্মপাল মহাস্হবির (পরবর্তী সংঘনায়ক ভারতীয়) এছাড়া ভারত বাংলার প্রখ্যাত ভিক্ষুসংঘ উপস্হিত ছিলেন।
তীর্থ ভ্রমণ ঃ বৌদ্ধ দর্শনে পবিত্র তীর্থ ভ্রমণ একটি পুণ্যময় কুশল কর্ম। যা তথাগত বুদ্ধ পরিনির্বাণের পূর্বে বলেছেন। নব উপসম্পদা প্রাপ্ত ভদন্ত ধর্মসেন ভিক্ষু গুরুদেব একান্ত ই”ছায় ১৯৫০ সালে তীর্থ দর্শনে ভারত যাত্রা করেন। অভিভাবকের মতো ছিলেন কর্মবীর প্রিয়দর্শী মহা¯’বির। চারিপুণ্য তীর্থস্হান সহ বুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত বহুস্হান দর্শন করেন। ১৯৫১ সালে মাতৃদেবী সুরবালা বড়ুয়াকে তাঁর গুরুদেবের একই সাথে তীর্থ ভ্রমণে প্রেরণ করে । সেই সময় জহুরলাল নেহেরুর পৃষ্টপোষকতায় বুদ্ধ জয়ন্তী উদ্যাপিত হয়। সেই আর্ন্তজাতিক অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করেন। বহুবার তিনি পবিত্র তীর্থ ভ্রমণ করেন।
সংগঠক ঃ বাংলাদেশে বিনয়সম্মত থেরবাদ প্রতিষ্ঠার সংগঠন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা। তিনি অত্যন্ত স্বল্প ভিক্ষুত্ব জীবনে মাত্র তৃতীয় বর্ষাবাসে ১৯৫০ সালে মহাসভার কার্যকরী সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত সংঘরাজ পূর্ণাচার ভিক্ষু সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে বৌদ্ধ সমিতির আজীবন সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৫০ সালে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষুমহাসভার কার্যকারী সদস্য নির্বাচিত হবার পর থেকে মহাসভার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে সবার হৃদয়ে স্হান লাভ করে। ফলে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতি পদ লাভ করেন। অত্যন্ত সুখের বিষয় দীর্ঘ পাঁচ বছর কাল দৃঢ়তায় সাথে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার দায়িত্ব পালন করেন। শতাব্দীর অন্যতম পন্ডিত সুসাহিত্যিক মহামান্য অষ্টম সংঘরাজ শীলালংকার মহাস্হবির মহোদয় প্রয়াত হলে বিশ্ববরেণ্য পন্ডিত জ্যোতিপাল মহাস্হবির দশম সংঘরাজ পদে বারিত হন। উল্লেখ্য যে ধর্মাচার্য নাগসেন মহাথেরোকে মরোত্তন নবম সংঘরাজ পদে বরিত হন । উপসংঘরাজ অভিসিক্ত হন পন্ডিত শাসনশ্রী মহাস্হবির বছর না ঘুরতেই পন্ডিত শাসনশ্রী মহাথেরো সংঘরাজ পদে বরিত হলে উপসংঘরাজের শূণ্য আসনে পন্ডিত ধর্মসেন মহাস্হবির স্হলাভিষিক্ত হন। এতে করে তার জীবনের আরেকটি নতুন দিগন্তের ইতিহাস শুরু হয়ে যায়।২০০৩ সালে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম পুণ্যপুরুষ একাদশ সংঘরাজ পন্ডিত শাসনশ্রী মহাস্হবির মহাপ্রয়াণ করলে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সর্বসম্মতিক্রমে ২৯ জানুয়ারী ২০০৪ইং মহাসভার ৫৭তম সাধারণ অধিবেশনে মহামান্য একাদশ সংঘরাজের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপসংঘরাজ ভদন্ত ধর্মসেন মহাথেরো বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্ছ ধর্মীয় গুরু মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ পদে অভিষিত হন।
সম্মাননা ও বিদেশ গমন : তিনি দেশে বিদেশেও বহু সম্মানে ভূষিত হন। ২০০৩ সালে মায়ানমান সরকার কর্তৃক অগ্গমহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ সম্মানে ভূষিত হন। ৩০ মে ২০০৪ সালে শ্রীলংকার পধানমন্ত্রী মাহিন্দারাজা পাসকের হাত থেকে ‘ত্রিপিটক সাহিত্য চক্রবর্তী’ উপাধি লাভ করেন। ১৫ জানুয়ারী ২০০৪ সালে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লীতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে আব্দুল কালাম সাহেবের কাছ থেকে বুদ্ধগয়ার মূল মহাবোধিবৃক্ষের বোধিশাখা উপহার হিসাবে লাভ করেছেন। এ সম্মেলনে বিশ্বশান্তির অগ্রদূত দালাই লামাও উপস্হিত ছিলেন। ২০০৫ সালে বিশুদ্ধানন্দ শান্তি পদক লাভ করেন।২০০৫ ,২০০৮ সালে বুড্ডিস্ট সামিড এর আমন্ত্রণে জাপানে বৌদ্ধ সম্মেলনে যোগদান করেন এবং প্রভুত সম্মানে ভূষিত হন । ২০০৬, ২০০৮, ২০০৯ সালে বিশ্ববৌদ্ধদের বিশ্বসম্মেলনে যোগদান করেন। ২০১৫ সালে থাইল্যান্ডের মহামান্য সংঘরাজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। ১৮ দেশের সংঘ প্রধানের মাধ্যমে তিনি ছিলেন অন্যতম এবং রাজকীয় সম্মানে তিনি সম্মানিত হয়। ২০০৫ সালে তিনি সিদ্ধার্থ ওয়েলফেয়ার মিশন কর্তৃক ‘সদ্ধর্ম বিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত হন। ২০০৯ সালে ৮ আগষ্ট ভিয়েতনাম বুড্ডিষ্ট ইউনিভার্সিটি এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মহামান্য সংঘরাজ ধর্মসেন মহাথেরোকে সম্মান সূচক পি. এইচ. ডি ডিগ্রী প্রদান করেন। উনাইনপুরা গ্রামে মহাসমারোহে ৫ ফেব্রয়ারী ২০১০ ইং জাতীয় আর্ন্তজাতিকভাবে মহামান্য সংঘের হীরক জয়ন্তী উদ্যাপিত হয়। দেশী বিদেশী বহু বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ ও সরকারী মন্ত্রী থেকে শুরু করে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষ যোগদান করেন। এই রুপ বহু সম্মানে তিনি সম্মানিত হন ।
অনিত্য যাত্রা : অনিত্য বয়ে চলে প্রতিটি জীবন দর্শনে সবকিছু অনিত্য, দুঃখ, অনাত্ম তাই তথাগত বুদ্ধ বলেছেন-
পরিজিন্নমিদং রূপংরোগনিড্ঢং পভঙ্গুরং
ভিজ্জতি পূতি সন্দেহো মরণন্তংহি জীবিতং।
অর্থাৎ এইরূপ (জড়দেহ) পরিজীর্ণ (অর্থাৎ জীর্ণতাধর্মী)। ইহা রোগের নীড় ও ভঙ্গুর। এই পূতিপূর্ণ দেহ ভগ্ন হয়। মরণেই এ জীবনের শেষ।
মহামানব তথাগত বুদ্ধের এই অমোঘ বাণীর বাহিরে কারও যাওয়ার সুযোগ নাই। ধনী-গরীব, পন্ডিত-মূর্খ সকল মানুষ জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর অধীন। শতাব্দীর মহাকালের মহানায়ক, ভিক্ষুসংঘের সংঘরাজ, পুণ্যপুরুষ, সুসংগঠন, বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচচ ধর্মীয়, মহামান্য দ্বাদশ সংঘরাজ,, পরম কল্যাণমিত্র শ্রদ্ধেয় ড. ধর্মসেন মহাথেরোও জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর অধীন। তাই বয়সের ভারে জীবন মরণ যুদ্ধে অবর্তীন হয়ে প্রায় সময় চট্টগ্রাম শহরের ম্যাস্ক হাসপাতাল ,রয়েল হাসপাতাল সহ বিভিন্ন উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসাধিন ছিলেন। হাজার লক্ষ ভক্ত মন্ডলী আকুতি মিনতি প্রার্থনার ডোরে জীবন প্রদীপ রক্ষা করা সম্ভব হয় নাই।তাই একে একে সকল শুভানুধায়ীর সাথে কথা বলে, শেষ বিদায়ে উপদেশ দিয়ে অনিত্য জগতে সব কিছু ছেড়ে ২০২০ সালের ২১ মার্চ রাত ১২:৫৮ মিনিটে ইহধান ত্যাগ করেন। আজীবন সমাজ, জাতি, সদ্ধর্মের কল্যাণে নিবেদিত মহাজীবনটা হারিয়ে গেল। তবে তাঁর দেহজ প্রাণ বায়ুর মৃত্যু হলেও তাঁর বিশাল বর্ণাঢ্য কর্মজ সৃষ্টি বিশ্বসভ্যতায় বহুকাল বিরাজমান থাকবে। প্রায় একটি শতাব্দীর কাছাকছি সময়ের সাক্ষী এই মহাজীবন । কালের স্রোতধারায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর আদর্শ জীবনাদর্শন দেখে ত্যাগের মহিমা শিক্ষা লাভ করবে। আমার পবিত্র ভিক্ষু জীবনে পরিক্রমায় এই মহান জীবনের সাথে কত স্মৃতি বিজরিত, তাহার স্নেহ ‘ফুতরা’ ডাক, শিষ্যের মতো অনুশাসন লাভ হয়তো এই জীবনে আর পাওয়া সম্ভব হবে না। ২০১৫ সালে এই মহান জীবনের সফর সঙ্গী হিসাবে থাই রাজার আমন্ত্রণে রাজকীয় সম্মানে থাইল্যান্ড যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। এইটাই শ্রদ্ধেয় ভান্তের জীবনে শেষ বিদেশ ভ্রমণ, কত কথা কত স্মৃতি ! প্রায় সময় হাসপাতালে দেখতে গেলে “শাসন সদ্ধর্মকে রক্ষা করার কথা বলতেন” জীবনের শেষ আবেদনটা ছিল “আমি তো চলে যাবো, তোমরা বুদ্ধের শাসনকে রক্ষা করো, আমার যাবার সময় হয়েছে”। নিজের শরীরের ব্যধি দুঃখের কথা চিন্তা না করে সমাজ, জাতি, সদ্ধর্মের কথায় বলতেন সবসময়। এমন শাসন দরদী কয়জন ভিক্ষু রয়েছে আজ মনে মনে সেই প্রশ্ন জাগে ! তাই বলি এই জীবন এক মহাজীবন, আজীবন শাসনহিত নিবেদিত অনন্য জীবন। এমনতরো মহাজীবন মানব সভ্যতা রক্ষায় আরও সৃষ্টি হোক নিরন্তর এই প্রত্যাশায় পারলৌকিত সদ্গতি কামনায় মহাজীবনের প্রতি পুণ্যদান ও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!