অগ্গমহাসদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ,ত্রিপিটক সাহিত্য চক্রবর্তী,বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার দ্বাদশ সংঘরাজ ড.ধর্মসেন মহাথেরর ২ দিনব্যাপী জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান পটিয়া উপজেলার ঊনাইনপূরা লংকারাম বিহার সংলগ্ন মাঠে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি ) অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে সকালে অষ্ট উপকরণ সহ সংঘদানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতি জ্ঞাননিধি ভদন্ত বুদ্ধরক্ষিত মহাথেরো ।
প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ স্মৃতিধর ভদন্ত শীলানন্দ মহাস্থবির।বিশেষ জ্ঞাতি ছিলেন উপসংঘরাজ ভদন্ত প্রিয়দর্শী মহাথের , উপসংঘরাজ শাসন ভাস্কর ভদন্ত শাসনপ্রিয় মহাথের উপসংঘরাজ কর্মবীর ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের , ভদন্ত ধর্মদর্শী মহাথের, ভদন্ত ধর্মসেন মহাথের, ভদন্ত বিজয়রক্ষিত মহাথের, ভদন্ত শাসনমিত্র মহাথের, ভদন্ত জিনানন্দ মহাথের, ভদন্ত শীলরক্ষিত মহাথের, ভদন্ত প্রিয়ানন্দ মহাথের, ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের, ভদন্ত ধর্মপাল মহাথের, ভদন্ত বিনয়পাল মহাথের, অধ্যাপক জ্ঞানরত্ন মহাথের, অতুলানন্দ মহাথের ।
প্রধান সদ্ধর্মলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ধর্মকীর্তি মহাথের, উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এস লোকজিৎ থের।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি ) দুপুর ১ টায় আলং নৃত্য পরিবেশিত হয়।
দুপুর ১.৩০ মিনিটে অনিত্যসভা ও স্মৃতিচারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সংঘরাজ , শাসন শোভন ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের। আশীর্বাদক ছিলেন উপ-সংঘরাজ স্মৃতিধর ভদন্ত শীলানন্দ মহাস্থবির, উপ-সংঘরাজ শাসন স্তম্ভ ভদন্ত ধর্মপ্রিয় মহাথের, উপ-সংঘরাজ ভদন্ত প্রিয়দর্শী মহাথের, উপ-সংঘরাজ শাসন ভাস্কর ভদন্ত শাসনপ্রিয় মহাথের, উপ-সংঘরাজ কর্মবীর সত্যপ্রিয় মহাথের।
প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পটিয়ার সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, ড. সংঘ প্রিয় মহাথের, পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, অন্তেষ্টিক্রিয়া উদযাপন অনুষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক প্রণব বড়ুয়া অর্ণব।
প্রধান সদ্ধর্মলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব ড. সংঘপ্রিয় মহাথের।
দেশনা করেন , ভদন্ত শীলভদ্র মহাথের, ভদন্ত অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু, ভদন্ত রত্নপ্রিয় মহাথের, ভদন্ত শাসনানন্দ মহাথের, ভদন্ত ড. জ্ঞানরত্ন মহাথের, ভদন্ত ভদন্ত কুশলায়ন মহাথের, ভদন্ত বিপুলাসেন মহাথের, ভদন্ত প্রভাষক সুনন্দ মহাথের প্রমুখ।
উদ্বোধক ছিলেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান ও উদযাপনী কমিটির কার্যকরী সভাপতি অজিত রঞ্জন বড়ুয়া ।
অন্তেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সভাপতির বক্তব্য রাখেন ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথের, সমন্বয় কারী সবুজ বড়ুয়া সাজু।
উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন প্রত্যয় বড়ুয়া ও সহশিল্পী বৃন্দ ।
মংগলাচরণ করেন ভদন্ত বুদ্ধানন্দ ভিক্ষু । পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন নিত্যময় চৌধুরী সঞ্চালনা করেন স্বপন কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক অভিজিত বড়ুয়া মানু ও নিপুল তাপস চৌধুরী ।
বিকেল ৫ টায় মহামান্য সংঘরাজের অন্তিম রথ যাত্রা। বিকেল ৫.৩০ আতশ বাজি প্রজ্জলন । সন্ধ্যা ৬টায় প্রয়াত সংঘরাজের দেহে অগ্নি সংযোজনের মাধ্যমে দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় । রাত ৯ টায় নাটক যৌতুক হল অভিশাপ মঞ্চস্থ হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। তার মৃত্যুর পর গোটা দেশ পথহারা প্রতিকের মতো হয়ে গিয়েছিল। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর চেতনায় এগিয়ে গিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ হিসেবে সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় যুগে যুগে মহাপুরুষরা জন্মগ্রহণ করেছেন। ঠিক তেমনি বীর পটিয়ায় বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মের ১২তম প্রধান ধর্ম গুরু ড. ধর্মসেন মহাস্থবিরের জন্ম পটিয়ার উনাইনপুরা গ্রামে। তিনি ছাড়াও আরও অনেক মনীষী এ পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, আজ পটিয়ায় এসে অনুধাবন করতে পেরেছি এবং স্বচোক্ষে দেখেছি এ পটিয়া অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তা না হলে এরকম একটা ধর্ম গুরুর জাতীয় অন্তেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ভেদাভেদ ভুলে একসাথে এসে জড়ো হয়েছেন যা বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় স্বর্নালী অক্ষরে লিখা থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বৌদ্ধরাও বাংলাদেশের অধিবাসী। এদেশের মাঠির সাথে মিশে আছে তাদের মৈত্রী ও মানবতার জয়গান। প্রয়াত ড. ধর্মসেন মহাস্থবিরের আর্দশকে ধারন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাই মিলে অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ার আহবান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ড. ধর্মসেন কেবল পটিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধি করেননি, তিনি বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি করেছেন। তাকে পুরস্কৃত করেছেন থাইল্যান্ডের রাজ পরিবারের প্রিন্সেস। এ গুণী ব্যক্তিকে বোধি বৃক্ষের চারা উপহার দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম।
তিনি বলেন, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আমেরিকা ছিলেন। তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে ছুটে এসেছিলেন রামুতে।
বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ড. ধর্মসেন মহাস্থবির মানবতার পক্ষে একজন বড় আইনজীবী ছিলেন। তিনি এ অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের আস্থার প্রতীক ছিলেন। তিনি আজকে আমাদের মাঝে নেই। এই পৃথিবীতে কেউ স্থায়ী নয়। মানুষকে কর্ম বাঁচিয়ে রাখে।
তিনি একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়েও এই অঞ্চলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাসের প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। আমি মনে করি আমাদের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ড. ধর্মসেন মহাস্থবিরের জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।