পাহাড়পুরকে বিশ্বের অন্যতম বড় বৌদ্ধ বিহার বলা যেতে পারে। পাহাড়পুর নামে পরিচিতি পেলেও বিহারটির প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার। আয়তনে এটির সঙ্গে ভারতের নালন্দা মহাবিহারের তুলনা হতে পারে। ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের বিখ্যাত ধর্মচর্চার কেন্দ্র ছিল এটি। শুধু উপমহাদেশই নয়, চীন, তিব্বত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মচর্চা ও ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন। দশম শতকে বিহারের আচার্য ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।
পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুণ্ড্রনগর (বর্তমান মহাস্থানগড়) এবং অপর শহর কোটিবর্ষের (বর্তমান বানগড়) মাঝামাঝি জায়গায় ছিল সোমপুর মহাবিহার। এটির ধ্বংসাবশেষটি এখন নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে।
অনেকে বলে থাকে পাল রাজা গোপালের পুত্র ধর্মপাল নিজের রাজত্বকালে (৭৭৭-৮১০ সাল) এই বিহারটি তৈরি করেন। আবার কেউ কেউ এটির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ধর্মপালের পুত্র দেবপালের (রাজত্বকাল ৮১০-৮৫০) কথাও বলে থাকে। দশম শতাব্দীর শেষভাগে পাল বংশীয় রাজা মহীপাল (৯৯৫-১০৪৩) আবার সোমপুর বিহার মেরামত করেন। কিন্তু মহীপাল ও তাঁর পুত্র নয়াপালের মৃত্যুর পর আবার পাল বংশের পতন শুরু হয়। একই সঙ্গে সোমপুর বিহারের ধ্বংসকালও শুরু হয়।
বৌদ্ধ বিহারটির ভূমি-পরিকল্পনা চতুষ্কোণাকার। উত্তর ও দক্ষিণ বাহুদ্বয় প্রতিটি ২৭৩.৭ মিটার এবং পূর্ব ও পশ্চিম বাহুদ্বয় ২৭৪.১৫ মিটার। এটির চারদিক চওড়া সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। সীমানাপ্রাচীর বরাবর অভ্যন্তর ভাগে সারিবদ্ধ ছোট ছোট কক্ষ ছিল। উত্তর দিকের বাহুতে ৪৫টি এবং অন্য তিন দিকের বাহুতে রয়েছে ৪৪টি করে কক্ষ। এই কক্ষগুলোর তিনটি মেঝে আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন। ১৯৮৫ সালে ইউনেসকো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।