আমরা এখানে আছি; আমরা বেঁচে আছি এবং আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। এমনকি নির্জীব বস্তু, যেমন- ফুলদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। যদি তাঁদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রভাব প্রয়োগ করা হয়, তাহলে রাসায়নিক স্তরে ফুল তারা স্বয়ং বেঁচে থাকার জন্য নিজেদের জায়গা তৈরি করে নেয়। কিন্তু [এর থেকে বেশী হল] কীট-পতঙ্গ সহ আমরা মানুষ, এমনকি আদ্য প্রাণী অর্থাৎ ক্ষুদ্রতম প্রাণী, সবাইকে প্রাণী বলা হয়। [এবং প্রাণী হওয়ার কারণে আমাদের কাছে নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য সহযোগিতা করার সবরকমের কলকব্জা আছে।
যে বস্তু নিজের ইচ্ছা অনুরুপ নড়াচড়া করতে পারে তাকে প্রাণী (সত্ত্ব) বলা হয়। এটা আমি বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই বলছি। প্রাণী মানেই যে সচেতনশীল হতে হবে বা সচেতনশীল স্তরের মানুষ হতে হবে তা নয়। বস্তুতঃ বিজ্ঞান বা চেতনা যে কী, এর ব্যাখ্যা করা কঠিন। সাধারণত এর মানে হল মনের সবথেকে প্রভাস্বরী আকারটাকে বলা হয়। কিন্তু এটা কি সঠিক যে আমরা যখন অবচেতন অবস্থায় থাকি তখন ওখানে বিজ্ঞান থাকে না? কীট-পতঙ্গের মধ্যে এটা থাকে কি? এখানে বিজ্ঞানের পরিবর্তে জ্ঞানগত ইন্দ্রিয় বিষয়ে কথা বলা ভালো।
যে কোন ক্ষেত্রে, যে মূখ্য বিন্দুটাকে আমরা এখানে উল্লেখ করছি (জ্ঞানগত ইন্দ্রিয় দ্বারা) সেটা বেদনাদের (সুখ, দুঃখ এবং উপেক্ষা বেদনা) বোধ করার ক্ষমতাকে বোঝাচ্ছে। আসলে সুখ এবং দুঃখ এমনই জিনিস যাকে গভীর ভাবে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যেমন- প্রত্যেকটা প্রাণীর বেঁচে থাকার একটা অধিকার আছে এবং বেঁচে থাকার অর্থ হল সুখ এবং স্বস্তি লাভের ইচ্ছা থাকা। এর কারণেই প্রাণীরা বেঁচে থাকার জন্য উদ্যোগ নেয়। অতএব আমাদের বেঁচে থাকাটা আশার উপর নির্ভর করে- কিছু ভালোর জন্য আশা- সুখ। এর কারণে আমি সবসময়ে নিষ্কর্ষ বের করি যে জীবনের উদ্দেশ্য হল সুখ। আশা এবং সুখ-বেদনার সঙ্গে আমাদের শরীর স্বস্তি বোধ করে। অতএব আশা এবং সুখ আমাদের স্বাস্থ্যের ইতিবাচক কারণ। স্বাস্থ্য একটি সুখী মনের অবস্থার উপর নির্ভর করে।
অন্যদিকে ক্রোধ একধরণের নিরাপত্তাহীন অর্থের ওপর আধারিত এবং আমাদের জন্য ভয় জন্ম দেয়। যখন আমরা কিছু ভালো জিনিসের মুখোমুখি হই, আমরা নিরাপদ বোধ করি। যখন কেউ আমাদের ভয় দেখায়, আমরা নিরাপত্তাহীন বোধ করি। ফলে আমরা তখন ক্রোধিত হই। ক্রোধ মনের একটা অংশ যেটা আমাদের উদ্বর্তন কে ক্ষতি করে। কিন্তু ক্রোধ [স্বয়ং আমাদের খারাপ অনুভব করায় এবং সেই কারণে অবশেষে এটা] আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ।
আসক্তি একটা জিনিস যেটা উদ্বর্তনের জন্য সহায়ক। সুতরাং এমনকি একটা উদ্ভিদও, যেটা সচেতন পদার্থহীন, তার মধ্যেও কিছু রাসায়নিক দৃষ্টিকোণ আছে, যেটা নিজেকে রক্ষা এবং বৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করে। আমাদের শরীর, ভৌতিক স্তরে সমান। কিন্তু মানুষ হিসাবে আমাদের শরীরেও সংবেদনশীল স্তরে একটা ইতিবাচক পদার্থ আছে যেটা অন্য কারুর প্রতি বা নিজের সুখের প্রতি আসক্তির জন্ম দেয়। অন্যদিকে ক্ষতির কারণরুপি [ক্রোধ] নিজের পদার্থ [সুখ সহ] বস্তু থেকে দূরে ঠেলে দেয়। শারীরিক স্তরে আনন্দ [যেটাকে সুখ জন্ম দেয়] শরীরের জন্য ভালো। অন্যদিকে ক্রোধ [যা দুঃখ জন্ম দেয়] ক্ষতিকারক। অতএব [উদ্বর্তন অনুসরণের পরিপ্রেক্ষিতে] জীবনের উদ্দেশ্য হল একটা সুখি জীবন লাভ করা।
এটা মৌলিক মানবীয় স্তর যেটার সম্বন্ধে আমি কথা বলছি, ধার্মিক বা আনুষঙ্গিক স্তর বিষয়ে না। ধার্মিক স্তরে অবশ্যই জীবনের উদ্দেশ্যের ওপর আলাদা ব্যখ্যা আছে। বাস্তবে আনুষঙ্গিক দৃষ্টিকোণটা বেশ জটিল। অতএব মৌলিক মানবীয় স্তরেই কথা বলা ভালো।
যেহেতু আমাদের লক্ষ্য এবং জীবনের উদ্দেশ্য হল সুখ, তাহলে সুখটা কী? কখনও কখনও শারীরিক দুঃখ সন্তুষ্টির গভীরতর জ্ঞানকে জন্ম দেয়। [যেমন-কঠোর পরিশ্রম করার পর একজন খেলোয়াড়ের যা ঘটে]। অতএব ‘সুখ’ এর অর্থ হল প্রধানতঃ গভীর সন্তুষ্টির জ্ঞান। জীবনের উদ্দেশ্য অথবা আমাদের লক্ষ্যই হল সন্তুষ্টি।
সুখ, শোক বা দুঃখ- এইগুলির দুটি স্তর আছে- ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত স্তর এবং মানসিক স্তর। ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত স্তর ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য সাধারণ, এমনকি কীট-পতঙ্গ অর্থাৎ একটা মাছির জন্যও। ঠাণ্ডা জলবায়ুতে, যখন সূর্যোদয় হয়, মাছি আনন্দ ভাব দেখায়; এরা খুব সুন্দরভাবে চারিদিক উড়ে বেড়ায়। একটা ঠাণ্ডা ঘরে, এরা ধীর হয়ে যায়; দুঃখের লক্ষণ দেখায়। কিন্তু যদি সেখানে কোন অবিশুদ্ধ মস্তিষ্ক থাকে, তাহলে সেখানে অধিক শক্তিশালী ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত সুখের জ্ঞান-বোধ হয়। [এছাড়াও, যেহেতু] আকারের দিক থেকে আমাদের অবিশুদ্ধ মস্তিষ্ক সব থেকে বড়, অতএব আমাদেরও বুদ্ধি আছে।
[ঘটনাটা ভেবে দেখুন] যে মানুষ কোন শারীরিক ভয় বোধ করে না। তাদের একটা সুখী এবং আরামদায়ক জীবন আছে; ভালো বন্ধু, বেতন এবং নাম আছে। কিন্তু, তাসত্ত্বেও আমরা লক্ষ্য করি কিছু কোটিপতিরা যেমন- তাঁরা ভাবেন যে তারা সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু অনেক সময় এই মানুষগুলি মানুষ হিসাবে খুবই দুঃখিত মানুষ। কয়েকটা অনুষ্ঠানের সময় আমার সঙ্গে খুবই ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তির দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে। এঁরা অনেক ভিতরে থেকে খুবই অস্থির অনুভূতিতে জর্জরিত। ওদের মধ্যে একাকীত্ব, চাপ এবং চিন্তা ভাবের প্রবণতা আছে। সুতরাং মানসিক স্তরে, তাঁরা দুঃখে জর্জরিত।
আমাদের অবিশ্বাস্য বুদ্ধি আছে। অতএব আমাদের মানসিক স্তরের অনুভব শারীরিক স্তরের অনুভব থেকে বেশী প্রভাবশালী হয়। শারীরিক পীড়াকে, এই অনুভব দিয়ে কমানো যায় বা দমন করা যায়। যেমন একটা ছোট্ট উদাহরণ বলি- কিছুদিন আগে আমি গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়েছিলাম। আমার নাড়িতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হতো। ঐ সময় আমি ভারতের সব থেকে গরীব রাজ্য বিহারে ছিলাম। আমি বুদ্ধগয়া এবং নালন্দা দিয়ে পার হচ্ছিলাম। ঐ সময় আমি অনেক খুবই গরীব বাচ্চাদের দেখতে পেয়েছিলাম। ওরা গোবর সংগ্রহ করছিল। ওদের শিক্ষার কোন সুযোগসুবিধে ছিল না। আমি খুবই দুঃখিত হয়েছিলাম। তারপর পাটনা, বিহারের রাজধানিতে আমার পীড়া হচ্ছিল এবং আমি ঘেমে গেছিলাম। আমি একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি, একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে পেয়েছিলাম যিনি একটা খুবই নোংরা কাপড় পরেছিলেন। কেহই ঐ লোকটার যত্ন নিচ্ছিলেন না; সত্যিই খুব খারাপ লেগেছিল। ঐ রাত্রে হোটেলে আমার কক্ষে, যদিও আমার শারীরিক যন্ত্রণা মারাত্মক হয়ে উঠেছিল, কিন্তু আমার মন ঐ ছেলেমেয়েগুলি এবং বয়স্ক লোকটার কথা ভাবছিল। ঐ উদ্বেগ আমার শারীরিক যন্ত্রণাকে অনেকটা কমিয়ে দিয়েছিল।
উদাহরণ স্বরূপ, যারা অলিম্পিক খেলার প্রশিক্ষণ নেয়, তারাও অত্যন্ত উদ্যমী হয়ে প্রশিক্ষিত হয়। ওরা যতই পীড়া এবং কষ্ট ভোগ করুক না কেন, মানসিক স্তরে ওদের সুখ আছে। অতএব শারীরিক অনুভব থেকে মানসিক স্তরটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং জীবনে যেটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ সেটাই হল সুখ আর সন্তুষ্টি।
এবার, সুখের কারণ গুলি কী কী? আমার মনে হয় যেহেতু মন যখন শান্ত থাকে শরীর-ধাতু ভালো থাকে, মন অশান্ত থাকলে হয় না। অতএব একটা শান্ত মন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের পরিস্থিতি কেমন আছে বা নেই, তাতে কিছু আসে যায় না। মানসিক শান্তিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং কী করে একটা শান্ত মন উৎপন্ন করা যায়?
সব রকমের সমস্যা থেকে মুক্ত হতে গেলে, সেটা অবাস্তব হবে এবং মনটাকে নিরস বানাই বা নিজের সমস্যাগুলিকে যদি ভুলে যাই, সেরকম করলেও চলবে না। আমাদের নিজেদের সমস্যাগুলিকে স্পষ্ট ভাবে দেখতে হবে এবং ওগুলির সুবিচার করতে হবে। কিন্তু এর সঙ্গে একটা শান্ত মন তৈরি করতে হবে, যার ফলে আমাদের মধ্যে একটা বাস্তবধর্মী মনোভাব জাগবে এবং আমরা ওগুলোর সঙ্গে সঠিক আচরণ করতে সক্ষম হব এবং সুবিচার করতে পারবো।
যারা ঘুমের ওষুধ সেবন করেন- আমার কিন্তু কোনো অভিজ্ঞতা নেই; আমি জানিও না যে মানুষ যখন ঘুমের ওষুধ নেয় তখন তাহাদের বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হয়, না কি নিস্তেজ হয়ে যায়; এটা আমাকে জিজ্ঞেস করে খোঁজ নিতে হবে। যেমন – সন ১৯৫৯ সালে আমি যখন মুসৌরিতে ছিলাম, আমার মা অথবা অন্য কেহ একজন ছিলেন, উপদ্রুত ও প্রচন্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর ঘুমের গোলমাল হচ্ছিল। ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন কয়েকটা ওষুধ আছে সেগুলো সেবন করতে পারেন, কিন্তু সেটি মনটাকে একটু নিস্তেজ বানিয়ে ফেলবে। ঐ সময় আমি চিন্তা-ভাবনা করেছিলাম যে ওটা ঠিক নয়। একদিকে, আপনি মনে একটু শান্তি পাচ্ছেন, কিন্তু অন্যদিকে ইহার পরিণাম যদি নিস্তেজ হতে হয়, এটা ভালো নয়। আমি অন্য দিকটা পছন্দ করি। আমি চাই বুদ্ধিটা পূর্ণত: ক্রিয়ামূলক, অতন্দ্রিত এবং সজাগ হোক, উপদ্রুত নয়। অনুদ্রুত মানসিক শান্তি হল শ্রেষ্ঠ।
ইহার জন্য কারুনিক মানবীয় স্নেহ সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মন যত কারুণিক হবে, আমাদের মস্তিষ্ক তত ভালো ক্রিয়াশীল হবে। যদি আমাদের মন ভয় এবং ক্রোধ উৎপন্ন করে, তাহলে সেটা যখন ঘটে, আমাদের মস্তিষ্ক বেশি দুর্বলভাবে কাজ করে। একবার একজন বৈজ্ঞানিক-এর সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছিল। তাহার বয়স ছিল আশির বেশী। তিনি আমাকে তাহার একটি বই দিয়েছিলেন। আমার মনে হয় বইটার নাম “আমরা ক্রোধের কয়েদী”, এই ধরণের কিছু ছিল। তাহার অভিজ্ঞতার বিষয়ে আলোচনা করার সময় তিনি বলেছিলেন যে আমরা যখন একটি বস্তুর প্রতি ক্রোধ উৎপন্ন করি, তখন বস্তুটি নেতিবাচকভাবে আভাসিত হয়, কিন্তু এই নেতিবাচকতার ৯০ প্রতিশত হল আমাদের মানসিক অভিক্ষেপ। এটি হলো তাহার নিজের অভিজ্ঞতা।
বৌদ্ধ ধর্ম একই কথা বলে। যখন আমাদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ভাবনা জন্ম নেয়, আমরা বাস্তবিকতা দেখতে পাই না। আমাদের যখন একটি রায় দেওয়ার প্রয়োজন হয় এবং মনটা ক্রোধের অধীনে চলে যায়, তখন সম্ভাবনা এই তৈরি হয় যে আমরা ভুল রায় দিয়ে দিই। কেহই কিন্তু ভুল রায় দিতে চায় না, কিন্তু ঐ মুহূর্তে আমাদের বুদ্ধি এবং মস্তিষ্ক-এর এক অংশ, যেটা ভুল এবং সঠিক এর পার্থক্য সৃষ্টি করার কাজ করে এবং শ্রেষ্ঠ রায় দেয়, সেটা খুবই দুর্বল ভাবে কাজ করে। বড়-বড় নেতারাও ঐ রকম অনুভব করে।
অতএব করুণা এবং স্নেহ মস্তিষ্ককে সুষ্ঠু ভাবে কাজ করার জন্য সহযোগিতা করে। দ্বিতীয়তঃ করুণা আমাদের মধ্যে আধ্যাত্বিক শক্তি যোগায়। এটি আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস উৎপন্ন করে এবং সেটি আমাদের ভয় হ্রাস করে। এর পরিণামে আমাদের মন শান্ত হয়। সুতরাং করুণার দুটো ক্রিয়া আছে: এর কারণে আমাদের মস্তিষ্ক আরো ভালোভাবে কাজ করে এবং আধ্যাত্মিক শক্তি যোগায়। এইগুলিই হলো সুখের কারণ। আমার মনে হয় ঐগুলি এই রকমই হবে।
সুখের জন্য অন্য ব্যক্তিগত গুণগুলি নিঃসন্দেহে ভালো। যেমন- সবাই টাকা পয়সা পছন্দ করে। আমাদের যদি টাকা-পয়সা থাকে তাহলে আমরা ভালো সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারি। সাধারণত, আমরা এগুলিকে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হিসাবে বিবেচনা করি, কিন্তু আমি মনে করি ওটা ওরকম নয়। ভৌতিক সুখ শারীরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আসতে পারে, কিন্তু মানসিক সুখ মানসিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে উৎপন্ন করতে হবে। আমরা যদি একটা দোকানে যাই এবং দোকানদারকে টাকা-পয়সা দিই আর বলি যে আমরা মানসিক সুখ কিনতে চাই, তারা বলবে যে তাদের কাছে বিক্রয় করার সেরকম কিছু নেই। আবার অনেক দোকানদার ভাববে যে এঁরা পাগল হয়ে গেছে এবং তাঁরা আমাদের দেখে হাসবে। এক ধরণের ইনজেকশন অথবা ওষুধের বড়ি অস্থায়ী সুখ বা মানসিক শান্তি জোগাতে পারে, কিন্তু পূর্ণ স্তরে নয়। পরামর্শ-এর উদাহরণ দ্বারা আমরা দেখতে পাই যে আবেগ এর মোকাবিলা করার জন্য আমাদের আলোচনা এবং যুক্তির প্রয়োজন হয়। অতএব আমাদের অবশ্যই মানসিক পন্থা ব্যবহার করা উচিত। সুতরাং, আমি যখনই বক্তৃতা দিই আমি বলি যে আমরা আধুনিক মানুষরা বাহ্য বিকাশ নিয়ে বেশি চিন্তা-ভাবনা করি। আমরা যদি ঐ স্তর পর্যন্ত মনোযোগ দিই, সেটা অপর্যাপ্ত হবে। বাস্তবিক সুখ এবং সন্তুষ্টিকে অবশ্যই ভেতর থেকে উদয় হওয়া উচিত।
এর মৌলিক উপাদান হলো করুণা এবং মানবীয় স্নেহ, আর এগুলি আসে জীবতত্ত্ব থেকে। একটি শিশু হিসাবে, আমার উদ্বর্তন স্নেহ মাত্রের উপর নির্ভর হয়ে আছে। স্নেহ থাকলে আমরা নিরাপদ বোধ করি। এটা না থাকলে আমরা উদ্বেগ এবং নিরাপত্তাহীন বোধ করি। যদি আমরা আমাদের মায়ের থেকে বিয়োগ হয়ে যাই আমরা কান্না করি। যদি আমরা মায়ের কোলে থাকি আর তারা আমাদের শক্ত করে সস্নেহে ধরে রাখে, আমরা আনন্দিত হই এবং চুপ হয়ে যাই। শিশু হিসাবে, এটা একটা জীবতাত্ত্বিক কারণ। যেমন- একজন বৈজ্ঞানিক, আমার শিক্ষক, একজন জীববিজ্ঞানী, যিনি পারমাণবিক বিরোধী হিংসায় যুক্ত আছেন, তিনি বলেছিলেন যে জন্মের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে মায়ের শারীরিক স্পর্শ শিশুর মস্তিষ্ক বড় এবং বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা সুরক্ষা এবং স্বস্তি বোধ-এর জন্ম দেয়। এবং এইভাবে মস্তিষ্ক সহ শরীরের সঠিক বিকাশ হয়।
অতএব, করুণা এবং স্নেহের বীজ এমন কোন একটা জিনিস নয় যেটা ধর্ম থেকে আসে; বরং এটা জীবতত্ত্ব থেকে আসে। আমরা প্রত্যেকে মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছি এবং আমরা প্রত্যেকে মায়ের যত্ন এবং স্নেহের কারণে জীবন-যাপন করছি। ভারতীয় পরম্পরা অনুযায়ী, শুদ্ধ-ভূমিতে জন্ম পদ্ম থেকে হয়। এটা শুনতে ভালো লাগে, কিন্তু সম্ভবত: সেখানকার মানুষের মধ্যে মানুষের থেকে পদ্মের প্রতি স্নেহ বেশি আছে। অতএব মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া তার থেকে ভালো। এছাড়াও আমরা করুণার বীজের সঙ্গে যুক্ত আছি। সুতরাং এগুলিই হল সুখের কারণ।