1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ০৪:১৮ অপরাহ্ন

আপন আলোয় আলোকিত প্রতিভা মুৎসদ্দির ৮৫তম জন্মদিন আজ

অনুপম বড়ুয়া টিপু
  • সময় বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩৭৩ পঠিত

আজ  ১৬ ডিসেম্বর। ভাষা সৈনিক প্রতিভা মুৎসদ্দির ৮৫তম জন্মদিন জন্মদিন।

এ দিনে ১৯৩৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার মহামুনী পাহাড়তলী গ্রামে। বাবা কিরণ বিকাশ মুৎসুদ্দি তাঁর সময়ের একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী। মা শৈলবালা মুৎসুদ্দি সহজ সরল অথচ সত্যাশ্রয়ী গৃহিণী। শৈশবে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের পাঠশালাতে। চট্টগ্রামের প্রাচীনতম ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৩ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৬ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৯ সালে অর্থনীতিতে এম, এ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬০ সালে ময়মনসিংহ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রী লাভ করেন।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দেশভাগ, ভাষার দাবিতে আন্দোলিত সময়ে বেড়ে উঠেছেন প্রতিভা মুৎসুদ্দি। ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন ছিলেন তিনি। তাই তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি হয় গ্রামের স্কুলে পড়া অবস্থাতেই। কলেজ জীবনে ভাষা আন্দোলনের হাত ধরে আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছেন রাজনীতি তথা জীবন ঘনিষ্ঠ বাম রাজনীতিতে। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রী হিসেবে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন সেবা ও কল্যাণধর্মী কাজের সঙ্গে। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বাধিকার আন্দোলন তখন বেগবান। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকা অবস্থায় স্বাধিকার আন্দোলনের এক মিছিল থেকে তিনি গ্রেফতার হন। দু’সপ্তাহের কারাবাসের পর মুক্ত হন। তৎকালীন সবার প্রিয় এ বামপন্থী ছাত্র নেত্রী ১৯৫৫-৫৬ শিক্ষাবর্ষে ডাকসুতে মহিলা মিলনায়তন সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ -১৯৫৭ শিক্ষাবর্ষে রোকেয়া হলের (তৎকালীন উইমেন্স হল) প্রথম নির্বাচিত ভিপি। রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও আন্দোলনের ঘাত-প্রতিঘাত মাথায় নিয়ে এভাবেই মানবতার কল্যাণে নিবেদনের জন্য নিজেকে ঋদ্ধ করেছেন।

প্রতিভা মুৎসুদ্দি ছাত্র জীবন শেষ করে রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে নারী শিক্ষা ও স্বাবলম্বনে তথা নারী পুরুষ সমতায় মানুষ গড়ার বিশাল কর্মযজ্ঞে নিজেকে নিবেদন করার লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে ১ম কর্মক্ষেত্র কক্সবাজার বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা পদে যোগ দেন। নীতি ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে অবিচল এ শিক্ষাব্রতী ১৯৬২ সালে জয়দেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমানে গাজীপুর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়)-এ প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখানে আমলাতান্ত্রিক অবৈধ হস্তক্ষেপ তাকে ক্ষুব্ধ করে। ১৯৬৩ সালে নারী শিক্ষার পাদপীঠ ভারতেশ্বরী হোমসে অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষিকা হিসেবে যোগদান করেন। প্রতিষ্ঠাতা শহীদ দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার একান্ত ইচ্ছায় ১৯৬৫ সালে তিনি ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। একটানা দীর্ঘ ৩৩ বছর সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৮ সালে তিনি অধ্যক্ষার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ভারতেশ্বরী হোমসের সব থেকে দীর্ঘকালব্যাপী অধ্যক্ষা তিনি। তাঁর সময়ে ভারতেশ্বরী হোমস্ ১৯৮৭ সালে স্কুল হিসেবে এবং ১৯৯৫ সালে কলেজ হিসেবে দেশ সেরার মর্যাদা পায়। তিনি নারী শিক্ষা প্রসারের এক কিংবদন্তিতে পরিণত হন। তাঁর হাজার হাজার ছাত্রী সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, অন্যকে দাঁড়াতে সাহায্য করছে। বর্তমানে রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বাংলাদেশ) লিঃ এর একজন পরিচালক তিনি। এ সংস্থার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সংস্থাটি এখন কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমস্ স্কুল ও কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও কলেজ, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় এর ন্যায় বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করছে। উল্লেখ্য, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে ১৯৭২ সাল থেকে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মির্জাপুর কুমুদিনী কমপ্লেেেক্সর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অধ্যক্ষা থাকাকালীন তিনি ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সম্মানিত সদস্য পদ অলংকৃত করেছেন একাধিকবার।

প্রতিভা মুৎসুদ্দি সব সময়ই একজন প্রচারবিমুখ মানুষ। তবুও তাঁর আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, ব্রত সময়ে সময়ে তাঁকে পাদ প্রদীপে তুলে নিয়ে এসেছে। বিভিন্ন সময় বিদগ্ধজন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও দেশ তাঁকে স্মরণ করতে ভোলেনি। তিনি বিভিন্নভাবে সম্মানিত হয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনন্যা শীর্ষ দশ পদক, বৌদ্ধ একাডেমি পুরস্কার, ইন্টারন্যাশনাল ব্রাদার হুড মিশন কর্তৃক কর্মবীর পদক, ড. আহমদ শরীফ পুরস্কার ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সংগঠন থেকে ভাষা সৈনিক সম্মাননা লাভ করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ২০০২ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি। ২০১৭ সালে তিনি বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিভা মুৎসুদ্দি সংসার করেননি। ভারতেশ্বরী হোমস আর কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টই এখন তাঁর পরিবার, সংসার। এই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই প্রতিভার এতগুলো বছর পার হয়েছে। বাকি জীবন ভারতেশ্বরী হোমস আর কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পরিবারের সঙ্গেই তিনি সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় কাটাতে চান।

প্রতিভা মুৎসুদ্দির পুরো জীবনটি পর্যালোচনা করলে অত্যন্ত আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন এক মহীয়সী নারীর দেখা পাওয়া যায়। যিনি কখনও অন্যায়ের কাছে আপোস করেননি। প্রথম দুটি কর্র্মস্থল ছাড়ারও প্রধান কারণ ছিল আপোসহীন মনোভাব। ভারতেশ্বরী হোমসে যোগদান করে তিনি যেন নিজের আপন ভ’বন পেয়েছিলেন। আর এই আপন ভূবন তার নেতৃত্বে দেশের নারী শিক্ষায় এক অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এমন দৃঢ়চেতা মানুষ আমাদের সমাজে বড়ই প্রয়োজন। একজন প্রতিভা মুৎসুদ্দির জীবন যে কোন নারীর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারে। ছাত্র জীবনে বাংলা ভাষা ও স্বাধিকার আন্দোলন এবং পরবর্তীতে দেশের নারী শিক্ষার বিস্তারে এই মানুষটির অবদান অসামান্য।

 

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!