‘বেগম রোকেয়া পদক ২০২০’ পাচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রথম নারী ব্যবসায়-উদ্যোক্তা মঞ্জুলিকা চাকমা।। নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখায় তাঁকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
এ বছর পাঁচ জন বিশিষ্ট নারীকে বেগম রোকেয়া পদকের জন্য মনোনীত করেছে সরকার। মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) মনোনয়ন চূড়ান্ত করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পদক প্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে।
বেগম রোকেয়া পদক-২০২০-এর জন্য মনোনীত পাঁচ জন বিশিষ্ট নারী হলেন, নারী শিক্ষায় প্রফেসর ড. শিরীন আখতার। পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কর্নেল (ডা.) নাজমা বেগম। নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মঞ্জুলিকা চাকমা। সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম মুশতারী শফি এবং নারী অধিকারে অবদানের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার।
সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বেগম রোকেয়া পদক-২০২০ প্রদান ও বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপনের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে অনলাইনে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন।
পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট নারী ব্যক্তিত্ব বা তার পরিবারের প্রতিনিধি আগামীকাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপির কাছ থেকে সম্মাননা পদক, সনদ ও চেক গ্রহণ করবেন।
মঞ্জুলিকা ১৯৪৪ সালের ২৬ অক্টোবর রাঙ্গামাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম নাম মঞ্জুলিকা খীসা। তার পিতা কালী রতন খীসা এবং মাতা পঞ্চলতা খীসা। কালী রতন সরকারি চাকরিজীবী ও পঞ্চলতা একজন তাঁত শিল্পী ছিলেন। তার মাতা ‘অল পাকিস্তান উইমেনস অ্যাসোসিয়েশনের’ সদস্য ছিলেন। স্থানীয় ‘বাজার ফান্ড কোয়ার্টার’ নামক স্থানে তার শৈশব কাটে। ছোটবেলায় পরিবার থেকে তিনি কাপড় বোনার কাজে আগ্রহী হন। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে মঞ্জুলিকা ছিলেন তৃতীয়।
মঞ্জুলিকা ১৯৬১ সালে রাঙ্গামাটি শাহ বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। এ সময় তিনি তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবেও স্বীকৃতি লাভ করেন।১৯৬৫ সালে শিক্ষকতার পাশাপাশি আদিবাসী বস্ত্রশিল্পের উন্নয়নে ‘বেইন টেক্সটাইল’ নামে আদিবাসী তাঁত বস্ত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯৭৬ সালে শিক্ষকতা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায়ে মনোযোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ও তার স্বামীর সাথে আরো একজন কর্মী নিয়োগ করেন। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে দুটি কারখানা গড়ে তোলেন যাতে তখন ৫০-৬০ জন কর্মী কাজ করত।
মঞ্জুলিকা ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত রাঙ্গামাটি সমবায় সমিতির প্রথমে সভাপতি পরে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতীয় মহিলা সংস্থার সম্পাদক ছিলেন। তিনি রাঙ্গামাটির রোটারি ক্লাবের সভাপতি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রাফট কাউন্সিলের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশনের রাঙ্গামাটি শাখার সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর চট্টগ্রাম পাহাড়ী ট্রাস্ট উন্নয়ন ফ্যাসিলিটির জেলা কমিটির সদস্য, রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, চিটাগাং ওম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, সমবায় ব্যাংকের পরিচালকসহ বিভিন্ন সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন।[
কারুশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।
মঞ্জুলিকা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। দশম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে উচ্চ মাধ্যমিক ও বিএ সম্পন্ন করেন।