আগামীকাল ১ অক্টোবর ২০২০ খ্রি. মহিমান্বিত পবিত্র আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমা। ২৫৬৩ বুদ্ধাব্দের পূত পবিত্র প্রবারণা পূর্ণিমা।
বিশ্বের অপরাপর থেরবাদী বৌদ্ধদের মতো বাংলাদেশের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী মহাসাড়ম্বরে মহামহিমান্বিত পূতপবিত্র এ আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমাকে বুদ্ধের ধর্ম-দর্শনসম্মত নানাবিধ বহু বর্ণিল অনুষ্ঠান সাজিয়ে প্রতিটি বৌদ্ধবিহার ও প্যাগোডায় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপন করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন ২ অক্টোবর, সোমবার থেকে দেশের প্রতিটি বিহারে মাসব্যাপী দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হবে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে মলমাস বা অধিবাস আখ্যা দিয়ে পরের মাসে অনুরুপ অনুষ্ঠান পালন করবে।
আগামীকাল এদিন উপলক্ষে সকালে বৌদ্ধ নরনারী শুচি শুভ্র হবে, পরিস্কার পোশাকে বৌদ্ধ বিহার সমবেত হয়ে বুদ্ধকে পূজা, ভিক্ষুদের আহার্য দান, অষ্টশীল ও পঞ্চশীল গ্রহণ, দুপুরে বিহারে বিহারে ভাবনা অনুশীলন, বিকেলে ধর্ম সভার আয়োজন করা হয়েছে। এবার প্রথম করোনা মহামারী তে সরকারী নির্দেশনা মেনে সীমিত পরিসরে কর্মসূচী পালন করবে।
এবার প্রথম সন্ধ্যায় ফানুস উড়ানো উৎসব আয়োজন হচ্ছে দেশের কিছু বৌদ্ধ বিহার ও কিছু বৌদ্ধদের ঘরে ঘরে।
এছাড়া প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে বড় ছাদাং নামেও পরিচিত। এর অর্থ বড় উপোসথ দিবস।
প্রবারণা আত্মশুদ্ধির অনুষ্ঠান। অকুশলকে বর্জন করে কুশলকে বরণের উৎসব। প্রবারণা পূর্ণিমা হলো ভিক্ষুসঙ্ঘের ত্রৈমাসিক ব্রত অবসানে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে বহুজন হিতায় বহুজন সুখায় আদর্শে বলীয়ান হয়ে দিকে দিকে শান্তি ও মৈত্রীর বাণী প্রচারে আত্মনিয়োগ করার অনুষ্ঠান।
এ পূর্ণিমা তিথিতে তিন মাসব্যাপী তথাগত বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে মাতৃদেবীকে অভিধর্ম দেশনার পর বহুজন হিত, সুখ ও কল্যাণে সদ্ধর্ম প্রচারের জন্য বুদ্ধ ভিক্ষুসঙ্ঘকে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। আজ ভিক্ষুসঙ্ঘের সেই ত্রৈমাসিক বর্ষাবাসের পরিসমাপ্তির দিন। কাল থেকে দেশ বিদেশের বিহারগুলোতে (প্যাগোডা) শুরু হবে মাসব্যাপী দানোত্তম কঠিন চীবর দান। এ দিন থেকে মাসব্যাপী ‘ভিক্ষুসঙ্ঘ বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায়’ আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে মানব কল্যাণে ছড়িয়ে পড়বেন।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সঙ্ঘের উদ্যোগে দিনব্যাপী রাজধানীর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের উদ্যোগে মেরুল বাড্ডাস্থ ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারসহ দেশের সব বৌদ্ধ বিহারে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যদায় ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা’ উদযাপিত হবে।
দিনব্যাপী অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সঙ্ঘের উদ্যোগে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে সকালে প্রভাতফেরী, ভিক্ষুসঙ্ঘের প্রাতঃরাশ, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ধর্মালোচনা। এর মধ্যে পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ। বেলা ১১টায় ভিক্ষুসঙ্ঘের পিণ্ডদান, ১২টায় অতিথি আপ্যায়ন। তারা ফানুস উত্তোলন করবেননা বলে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।সন্ধ্যার পর ফানুস উত্তোলন। এ পূর্ণিমার বিশেষ পর্ব ফানুস উৎসব। আজ ফানুসে ফানুসে ছেয়ে যাবে আকাশ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ ফানুস উৎসবে যোগ দেবেন।