বছরের এই সময়টাতে যখন শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে, তখন সমাজের নানা সংগঠন ও ব্যক্তি শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। অনেক ব্যক্তিকে দেখা যায় বছরের পর বছর এই ধরনের মানবসেবা করে যাচ্ছেন। কারো কথা জানা সম্ভব হয়, কারোটা অগোচরেই থেকে যায়। অগোচরে থেকে যাওয়া এমন এক ব্যক্তি হলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিজ্ঞানী ড. বসু মিত্র বড়ুয়া।
গত এক দশক ধরে তিনি এই মানবসেবায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। প্রতি বছর শীতের এই সময়ে তিনি সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের এরিজোনা থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন শীতার্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
শুধু তাই নয়, আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকার অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা, গরিব-মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করে থাকেন তিনি। শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন বসু মিত্র। এসব কার্যক্রম তার দুটি সংস্থা লীলিমা শশধর মানবিক শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প ও নীহারিকা যামিনী মানবিক ও শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্পের আওতায় পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
প্রচারবিমুখ এই মানুষটির সমাজসেবার কাজটি চলছিল অনেকটা নীরবেই। তবে সম্প্রতি তার সঙ্গে কাজ করা কয়েকজন যুবক এই কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে বিষয়টি অনেকেরই দৃষ্টিগোচর হয়। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় তার দীর্ঘ দিনের এই মানসেবার পেছনের গল্প।
বসু মিত্র বড়ুয়া আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে মটোরোলায় সিনিয়র সাইন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত অবস্থায় অবসরে যান। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় সমাজসেবামূলক কাজে তিনি অংশ নিতেন। চাকরিজীবনেও এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন। আর অবসর জীবনে এসে এখন পূর্ণ সময় দিচ্ছেন এই কাজে।
বসু মিত্র ঢাকা টাইমসকে জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সিনিয়র সাইনটিস্ট হিসেবে মোটোরলায় কর্মরত ছিলেন। তার আজীবনের সঞ্চয় দিয়েই তিনি এই মানবসেবা করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি পরিচিত বিত্তবানদেরও উৎসাহিত করছেন মানবসেবায় এগিয়ে আসার জন্য।
এ কাজে তার পরিবার, বিশেষ করে সহধর্মীনি সঞ্জু বড়ুয়া তাকে সার্বক্ষণিক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন বলে জানান এই প্রবাসী বিজ্ঞানী।
বসুমিত্র বড়ুয়ার সাথে কাজ করা সমাজকর্মী প্রকাশ বড়ুয়া জানান, বসুমিত্র বড়ুয়া এ বছর দুই হাজারেরও বেশি কম্বল বিতরণ করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন গ্রামে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শীতার্ত মানুষের জন্য কম্বল পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
শুধু চট্টগ্রামে নয়, গাইবান্ধা, জায়পুরহাট, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তার সঙ্গে কাজ করা কর্মীরা ছুটে গেছেন বলে জানা গেছে।
বসুমিত্র জানান, সাধারণ মানুষের কষ্ট দেখেই মূলত তিনি এভাবে এগিয়ে এসেছেন। কারো থেকে কিছু পাবার আশায় তিনি এ কাজ করছেন না। তার আশা সমাজে যারা বিত্তবান রয়েছেন তারাও তার মতো গরিব দুস্থদের পাশে এসে দাঁড়াবে।