বিবর্তন ডেস্ক:আত্মশুদ্ধি, আত্মসমর্পন ও আত্মনিবেদনের প্রবারণা পূর্ণিমার পূর্ণ চন্দ্র ও ফানুসের পূণ্যালোকে উদ্ভাসিত হোক প্রতিটি হৃদয়। কুশলকে বরণ ও অকুশলকে বারণ/বর্জন পূর্বক সকলের জীবন প্রাপ্তি-পূর্ণতায় সৌভাগ্যময় হোক। প্রজ্ঞাময় ও ধর্মময় হোক সম্মুখ পথচলা, এ শুভ প্রার্থনায় সকলের প্রতি শুভ প্রবারণা পূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা ও পূণ্যাভিনন্দন।
আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিকে প্রবারণা পূর্ণিমা বল হয়। সংক্ষেপে প্রবারণা বলতে সত্য/কুশলকে বরণ ও অসত্য/অকুশলকে বারণ বা বর্জন বুঝায়। তথাগত বুদ্ধ কর্তৃক জগতের সকল প্রাণীর হিতের জন্য ধর্ম প্রচারের আদেশ প্রদান, তাবতিংস স্বর্গ হতে সাংকাশ্য নগরে অবতরণের সময় নানাবিধ ঋদ্ধিসহ যমকঋদ্ধি প্রদর্শন এবং ত্রৈ-মাসিক বর্ষাব্রত সমাপন হল প্রবারণা পূর্ণিমার তাৎপর্য। এছাড়া, আজকের এ পূণ্যতিথিতে সিদ্ধার্থ গৌতমের কেশধাতু পূজা উপলক্ষ্যে মহাসমারোহে ফানুস তথা আকাশ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন উৎসব মুখর পুরোদিনের অন্যতম আকর্ষণ।
আনন্দেতে বিভূষিত আমাদের মন,
আজি মোরা সবে দিব পূজা হয়ে এক মন।
অসার মানব কুলে পূণ্য বিনাধন,
নাহি হবে এই ভবে সুখের কারণ।
তাই এই পূণ্য দিনে মিলি সর্বজন,
এসো পূজি মহানন্দে বুদ্ধের চরণ।
আজকের উপোসথ ২৫৬৩ বুদ্ধাব্দের ত্রৈমাসিক বর্ষাবাসের শেষ উপোসথ শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা।
মহাকারুণিক বুদ্ধ দেশনা করেছেন- ইহলোকে প্রাণীদের যে পাপ ময়লা গঙ্গা, যমুনা, সরভূ, নিম্নগা, অচিরবতী, মহী অথবা মহানদী বিশুদ্ধ করতে পারে না, সে পাপ ময়লা একমাত্র শীল জলই পবিত্র করতে পারে। মিলিন্দ প্রশ্নে বর্ণিত হয়েছে- “পতিট্ঠালক্খনং সীলং সব্বেসং কুসলানং ধম্মানং”। অর্থাৎ, সমস্ত কুশল ধর্মের প্রতিষ্ঠা বা ভিত্তির লক্ষণ হল শীল। যেমন, পৃথিবীরূপ মাটিকে কেন্দ্র করেই আমরা যাবতীয় কর্ম সম্পাদন করি। তেমনি শীলরূপ ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েই আমাদের যাবতীয় কুশল কর্ম সম্পাদন করা উচিত। এ অর্থে, আমাদের সমস্ত কুশল কর্মের ভিত্তি হল শীল পালন। তাই এ পবিত্র পূণ্যময় পূর্ণিমা তিথিতে আমাদের সকলেরই পঞ্চশীল, উপোসথ শীল গ্রহণ ও প্রতিপালন করা উচিত এবং বর্ষাবাসকালীন তিনমাসের আজকের এ শেষ উপোসথ যথাযথভাবে প্রতিপালনের মনস্থিরপূর্বক দৃঢ়তার সাথে কুশল কর্ম করা প্রয়োজন। আসুন প্রবারণা পূর্ণিমার এ পূণ্যদিনে সবে মিলে পুরোদিবস উপোসথ গ্রহণ ও প্রতিপালন পূর্বক নিজেদের শীল পারমিতার পূর্ণতা সাধন করি।
প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের সকল
বৌদ্ধবিহারে দিনব্যাপী নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, মঙ্গলসূত্র পাঠ, বুদ্ধপূজা, পঞ্চশীল ও অষ্টাঙ্গ উপসথ শীল গ্রহণ, মহাসংঘদান, অতিথি আপ্যায়ন, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ, আলোচনা সভা, প্রদীপ পূজা, আলোকসজ্জা, বিশ্বশান্তি কামনায় সম্মিলিত উপাসনা, ফানুস উড্ডয়ন ও বুদ্ধ-কীর্তন।
এদিকে প্রবারণা পূর্ণিমায় কোনো ধরনের আতশবাজি ফোটানো যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে সিএমপি। একইসঙ্গে এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ফানুস উড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৌদ্ধদের এ ধর্মীয় উৎসবকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সিএমপির পক্ষ থেকে।
বন্ধ থাকবে নগররে চার সড়ক:
প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে নগরীতে জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে, যানজট নিরসনে এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এর ট্রাফিক বিভাগ ব্যবস্থা নিয়েছে।
আজ বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা র্পযন্ত নগরের চারটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে সিএমপির ট্রাফিক (উত্তর) বিভাগ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সড়কগুলা হলো এনায়তেবাজার হতে বৌদ্ধ মন্দির, নূর আহমদ সড়ক হয়ে বৌদ্ধ মন্দির, চেরাগি পাহাড় হয়ে বৌদ্ধ মন্দির ও বোস ব্রার্দাস হয়ে বৌদ্ধ মন্দির সড়ক।
ফানুস উড়ানো যাবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০ টা র্পযন্ত। এছাড়া কোনো ধরনের আতশবাজি ফোটানো যাবে না।
জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ মুক্ত হোক।
ত্রিরত্নের অপ্রমেয় মৈত্রী প্রভায় সকলের জয়মঙ্গল হোক।