এতদিন ধরে পৃথিবীর প্রথম ছাপা বইয়ের তকমা পেয়েছিল জার্মানির মেইনজ-এ ছাপা জোহানেস গুটেনবার্গের বাইবেল। কার্যত, এই বই থেকেই গণহারে বই ছাপানো শুরু হয় ইউরোপে। কিন্তু সম্প্রতি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের কাছে এক বৌদ্ধ বিহার থেকে উদ্ধার হওয়া একটি পুঁথি বদলে দিয়েছে সমস্ত ইতিহাসকেই। প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন, গুটেনবার্গের জন্মের আনুমানিক ৫৫০ বছর আগেই সঙ্কলিত হয়েছিল ‘হীরক সূত্র’ নামক এই পুঁথি।
কাবুল থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে লোগার প্রদেশের মেস আইনাক অঞ্চলের পাহাড়ের ওপরে কয়েক বছর আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল এই পাণ্ডুলিপি। গাছের ছালের গায়ে সংস্কৃত ভাষায় লেখা এই পুঁথিগুলি সংরক্ষণের জন্যই সংকলিত করা হয়েছিল বলে আফগান প্রত্নতাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠানের অনুমান। পাশাপাশি এই একই অঞ্চল থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে ৪০০টি বুদ্ধ মূর্তি। প্রাচীন কালে বিখ্যাত ‘সিল্ক রুট’-এর এক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছিল এই মেস আইনাক অঞ্চল। আফগান পুরাতত্ত্ব বিভাগের দাবি, তৃতীয় থেকে সপ্তম শতক পর্যন্ত এখানে বৌদ্ধ বসতি ছিল। ১৯৬৩ সালে এক ফরাসি ভূবিজ্ঞানী এই অঞ্চলে বৌদ্ধ স্তূপ আবিষ্কার করেন। তারপর আর কোনও রকম খননকার্য করা হয়নি এখানে। ২০০৯ সালে আফগান সরকারের উদ্যোগে ফের এই অঞ্চলে খননকার্য শুরু হলে একে একে আবিষ্কার হতে থাকে এই পুঁথিগুলি।
ঐতিহাসিকদের দাবি, সপ্তম শতকে সিল্ক রুট দিয়ে ভারতে আসা চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-ও নিজের বইতে এই অঞ্চলের বৌদ্ধ বসতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। জানা গেছে, ‘হীরক সূত্র’-এ গৌতম বুদ্ধের আগের আরও ১৩ জন বুদ্ধের কথা বলা রয়েছে। পাশাপাশি, গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব এবং তাঁর পরবর্তী বুদ্ধদের কথাও বলা রয়েছে। বৌদ্ধ ইতিহাসের নিরিখে এই পুঁথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এই ধরনের সঙ্কলিত বৌদ্ধ পুঁথি যে ক’টি রয়েছে, এই হীরক সূত্র সেগুলির তুলনায় অনেক বেশি পুরনো এবং গৌতম বুদ্ধের জন্মের সময়ের কাছাকাছি। তবে এত প্রাচীন হওয়া সত্ত্বেও পুঁথিটি বেশ ভাল অবস্থাতেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরাতাত্ত্বিকরা। শুরু এবং শেষের অংশ বাদ দিলে এর ৮০ শতাংশই অক্ষত রয়েছে বলে জানা গেছে।