রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের পাশে পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত প্রায় তিনশ বছরের পুরনো চাতোপা জাদির (বৌদ্ধদের প্যাগোডা) কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীটির ৫-৬টি অংশে ভাঙচুর চালায় তারা। পুলিশ বলছে, সম্ভবত গুপ্তধনের আশায় কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, প্রতিহিংসা মূলকভাবে পাহাড়টি দখল করার জন্য এ ভাঙচুর হতে পারে।
তবে ঠিক কখন এ হামলা চালানো হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কেউ। ধারণা করা হচ্ছে,গত দুই-তিন দিনের মধ্যে এ ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তবে বিষয়টি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নজরে আসে গতকাল বৃহস্পতিবার ( ২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে। এরপরই তারা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে ।
খবর পেয়ে গতকাল বিকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন ও পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লুৎফর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) চাই থোয়াইহ্লা চৌধুরী, রামু থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল মনসুরসহ প্রশাসনের অনেকেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
রামু বৌদ্ধ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, প্রায় তিনশ বছরের পুরনো এ জাদিটি কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের জাদি পাড়া এলাকায় প্রায় তিনশো ফুট উঁচু উঁচুপাহাড়ে অবস্থিত। দীর্ঘদিন ধরে জাদিটি অযত্ন অবহেলায় পড়েছিল। তিনি বলেন, এক পূজারীর কাছে জাদিতে হামলার বিষয়টি শোনার পরই প্রথমে তিনি জেলাপ্রশাসক এবং রামুর ওসিকে অবহিত করেন। শোনার পর পরই তারা ঘটনাস্থলে আসেন।
তিনি আরো বলেন, ২০১২ সালে অতি বর্ষণের কারণে জাদির তিন পাশের সীমানা প্রাচীর ধসে পড়লে জাদিটিই ধসে পড়ার উপক্রম হয়। এর পর থেকে আমরা জাদিটি রক্ষায় পরিকল্পিত উন্নয়নকাজ চালানোর চেষ্টা করে আসছি। গত বছর জাদিটিকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে। সেই সার্ভে অনুসারে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অরক্ষিত থাকায় দীর্ঘদিন ধরে জাদির চারপাশে অনেক জায়গা বেদখল হয়ে গেছে।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল মনসুর বলেন, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি মনে হচ্ছে এটি হামলার ঘটনা নয়। হয়তো কে বা কারা গুপ্তধনের আশায় এ ঘটনা ঘটাতে পারে। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এঘটনায় কোনো মামলা করা হবে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন,এটি আসলে মামলা হওয়ার মতো কোনো ঘটনা নয়। তবে বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের কেউ মামলা করতে চাইলে আমাদের আপত্তি নেই।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লুৎফুর রহমান বলেন, জায়গাটি খুব নির্জন। হয়তো মাদকসেবীরা গুপ্তধনের আশায় এ ঘটনা ঘটাতে পারে। তবে ওইস্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোলার প্যানেল বসানোর পাশাপাশি পুলিশি টহল বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।