1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন

ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম মহাতীর্থ মহাবিহারে একদিন

প্রতিবেদক
  • সময় শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
  • ১৭২৭ পঠিত

তাহির মুহাম্মদ তৌকির:

কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি অনেকেই রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে ঘুরতে যায়। ১০০ ফুট দীর্ঘ বুদ্ধের মূর্তিওয়ালা মন্দিরে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম হয়। তবে চাইলে আরেকটি সুন্দর বৌদ্ধ মন্দিরও ঘুরে আসা যায় অল্প সময়ের মধ্যে।


কিছুদিন আগে আমরা কয়েকজন কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে পরে কক্সবাজার রামু বৌদ্ধ মন্দির ও রাংকুট বনাশ্রমে যাই। রামুতে যেসব মন্দিরে গিয়েছিলাম, সেগুলোর মধ্যে ‘ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম মহাবিহার’ মন্দিরই আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর লেগেছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধকে আমন্ত্রণ জানান প্রাচীন আরকানের ধন্যবতী নগরের সুপ্রসিদ্ধ রাজা মহাচন্দ্র সুরিয়া। শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে তৎকালীন সমতটের চৈত্যগ্রামের (বর্তমান চট্টগ্রাম) ওপর দিয়ে ধন্যবতী নগরে যাওয়ার সময়ে এই স্থানে গৌতম বুদ্ধ খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়েছিলেন। তার পদচিহ্নিত এই স্থানে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মন্দিরটি স্থাপন করেন সম্রাট অশোক। সপ্তদশ শতকে বিশ্বখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হুয়েন সাং ভারত ও বাংলাদেশে গৌতম বুদ্ধের অবস্থানস্থল পরিদর্শনের সময় এই জায়গা ঘুরেছিলেন।

রামু বাইপাস থেকে যাত্রা শুরু হয় আমাদের। গন্তব্য রাংকুট। সড়কের দু’পাশের গ্রামীণ প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে দেখতে কখন যে মন্দিরের মূল ফটকে পৌঁছে গেছি টেরই পেলাম না! মন্দিরে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলাম। দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে অনেক মূর্তি যেন ধ্যানরত অবস্থায় বসে আছে। চারদিকে পুরোপুরি শান্ত পরিবেশ।

কিছুদূর এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো বিশাল একটি মূর্তি। দেখে বেশ চমকে গেলাম। এর আগে অনেক মন্দির ঘুরেছি, কিন্ত এমন মূর্তি চোখে পড়েনি কখনও। বিশাল এক বৃক্ষের ছায়াতলে বসে আছে এটি। তখন মনে হচ্ছিল বুঝি চীন চলে এসেছি! মূর্তিটি সম্রাট অশোক মহারাজার। মূর্তির চারপাশে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পতাকা।

অল্প সামনে এগোলেই ওপরে ওঠার সিঁড়ি পাওয়া যাবে। আমরা যখন গিয়েছিলাম, তখন মন্দিরের শিক্ষানবিশ ছাত্ররা পানি ও ঝাড়ু দিয়ে সিঁড়ি পথটা পরিষ্কার করছিল। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই হাতের বাঁ-দিকে দেখলাম, গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে ১৮ ফুট উচ্চতার আরেকটি বিশাল মূর্তি। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে হেলে যাওয়ায় মনে হচ্ছিল মূর্তিটাকে অন্যরকম জৌলুস ঘিরে রেখেছে। এর ঠিক পাশেই একটি ঘণ্টা।

মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করতেই হাসিমুখে স্বাগত জানালেন ভান্তে। কুশল বিনিময় শেষে মন্দিরের বিভিন্ন স্থানে রাখা মূর্তিগুলো দেখালেন তিনি। জানা গেলো, ক্ষুদ্র একটা জাদুঘরও আছে এই মন্দিরে! সেখানে রয়েছে ৬০০ শতাব্দী থেকে ১৬০০ শতাব্দীর বিভিন্ন কিছু। সংগ্রহশালা ছোট হলেও খুব একটা মন্দ নয়।

মন্দিরটি পাহাড়ের ওপরে হওয়ায় বেশ হাওয়া আসছিল। চারপাশে গাছপালার পাতার শব্দ ও হিম বাতাসের দল এসে ভিড়ছিল আমাদের কাছে। শান্ত সবুজ ছায়াঘেরা চারপাশ। দূর থেকে ভেসে আসছে শীতল হাওয়া। কিছুক্ষণ পরপর পাখির কিচিরিমিচির শব্দ আসছে কানে। মন চেয়েছিল বসে থাকি আরও সময়।

ফেরার পথে সিঁড়ি অবধি আমাদের এগিয়ে দিলেন মন্দিরের ভান্তে। আবারও আসার আমন্ত্রণ জানালেন তিনি। ভান্তের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শেষ বিকালের সূর্যের মিষ্টি আলো মেখে ফেরার পথ ধরলাম।
দর্শনার্থীদের জন্য সময়সূচি
সকাল ৭টা থেকে সকাল ১১টা ও দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ঘুরে দেখতে পারেন এই মন্দিরে।

যেভাবে যাবেন
কক্সবাজার থেকে গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে যেতে পারেন রাংকুট। অন্যভাবে যেতে চাইলে কক্সবাজার কলাতলি থেকে ‘কক্সলাইন’ নামক বাস পাওয়া যায়। এটি রামু অবধি ভাড়া নেবে ২০ টাকা। নামতে হবে রামু বাইপাস। সেখানে সিএনজি পাওয়া যাবে। রাংকুট বনাশ্রম মহাবিহার পর্যন্ত সিএনজি রিজার্ভ ভাড়া ৮০-১০০ টাকা। দরদাম করে নেবেন। ফেরার পথেও একইভাবে ফিরতে হবে। রাংকুট থেকে রামু বাইপাস। সেখান থেকে বাসে চড়ে কলাতলি।
ছুটি দিগন্তে
ঘোরাঘুরির জন্য ফেসবুকে ‘ছুটি দিগন্তে’ নামে ছোট্ট একটি প্লাটফর্ম রয়েছে। কোথাও ঘুরতে যেতে চাইলে যোগ দিতে পারেন এই গ্রুপে। এছাড়া দেশে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যও মিলবে। হ্যাপি ট্রাভেলিং!

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!