1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন

বোধিসত্ত্ব অনাগারিক ধর্মপাল

প্রতিবেদক
  • সময় শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮
  • ১৫৩৯ পঠিত

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু: ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের পুণরুদ্ধারকারী অনাগারিক ধর্মপাল ( ১৮৬৪-১৯৩৩) শ্রীলঙ্কায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর গৃহস্থ নাম ছিল ডেবিড হেববিতরণে।

তাঁর জন্ম শ্রীলংকায় এক ধনী ব্যবসায়ী পরিবারে হয়েছিল। তাঁর জীবনের শুরুতেই Madam Helena Blavatsky (1831-1891)ও Colonel Steel Olcott (1832-1907) এর বড় অবদান ছিল। ১৮৭৫ সালে Madam Blavatsky ও Colonel Olcott উভয়ে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে আন্তর্জাতিক থিওসফিকেল সোসাইটির স্থাপনা করেন। উভয়ে বৌদ্ধধর্মের কেবল গভীর অনুরাগীই ছিলেন না, ১৮৮০ সালে শ্রীলংকায় এসে ভিক্ষুত্বও গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা শ্রীলংকায় তিনশ’য়ের উপর স্কুল স্থাপন করেছিলেন এবং বৌদ্ধধর্ম সংরক্ষণের জন্য ব্যাপক ভুমিকা পালন করেন। তখন খৃষ্টান মিশনারী শ্রীলংকায় এতই প্রভাব বিস্তার করেছিল যে বৌদ্ধ ছেলে-মেয়েদেরও তাদের পরম্পরা বৌদ্ধ নামের পরিবর্তে খৃষ্টান নাম রাখা হত। ডেবিড হেববিতরণে তাঁদের কাজে গভীর অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বালক ডেবিড পালি শিক্ষার প্রেরণা তাঁদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। সে সময় তিনি তাঁর ডেবিড খৃষ্টান নাম পরিবর্তন করে ‘ অনাগারিক ধর্মপাল’ করেছিলেন।

১৮৯১ সালে অনাগারিক ধর্মপাল মাত্র ২৭ বছর বয়সে শ্রীলংকা হতে তীর্থ দর্শন মানসে রাজকুমার সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভের স্থান বুদ্ধগয়া মহাবোধি মহাবিহারে এসছিলেন। তিনি এখানে এসে বুদ্ধগয়া মন্দিরের দুরবস্থা দেখে বড়ই ভারাক্রান্ত ও ব্যথিত হলেন। কারণ মহাবোধি মন্দির ছিল তখন শৈব মতাবলম্বী মহন্তের কবলে ।এখানকার সব বুদ্ধ মূর্তি সমূহ হিন্দু মহন্তরা তাঁদের দেব-দেবীতে পরিণত করেছিলেন। এ সকল হিন্দু মহন্তগণ বৌদ্ধদের মন্দিরে প্রবেশে পর্যন্ত বিরোধ করত। ভারতে সব মন্দিরকে যেমন তাঁরা গ্রাস করেছিল ইহাকেও গ্রাস করণের লক্ষ্যে হিন্দু মন্দির বলে প্রচার করত।

ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম ও বৌদ্ধতীর্থ স্থান সমূহের অবর্ণনীয় দুর্দশা দেখে অনাগারিক ধর্মপালের হৃদয়ে কুঠারাঘাত হল। তিনি বৌদ্ধ ধর্ম ও বৌদ্ধ স্থান সমূহের উদ্ধার ও বিকাশের জন্য বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশে পত্র প্রেরণ করেন। বুদ্ধগয়া সহ সব তীর্থস্থল উদ্ধারের জন্য তিনি ১৮৯১ সালে মহাবোধি সোসাইটির স্থাপনা করেন। তখন এর প্রধান কার্যালয় করেন তিনি কলম্বোতে। কিন্তু অনতি বিলম্বে তা তিনি স্থানান্তরিত করে কোলকাতায় আনেন। অনাগারিক ধর্মপাল মহাবোধি মন্দির বৌদ্ধদের জন্য দাবী করলে মহন্তরা তাঁকে আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত করেন। তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে কঠোর হতে কঠোরতম আক্রমণ করতে থাকে মহন্ত ও তাঁর হিন্দু বাহিনীগণ।মহাবোধি মন্দির উদ্ধারে অনাগারিক ধর্মপাল মহাবোধি সোসাইটির পক্ষ হতে এক সিবিল সুট দায়ের করেছিলেন। এতে তিনি দাবী করেছিলেন মহাবোধি মহাবিহার এবং অন্য তিন প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ স্থল ( সারনাথ, কুশীনগর ও লুম্বিনী) বৌদ্ধদের হাতে হস্তান্তর করার জন্য। ঐ রীটেরই ফলশ্রুতিতে আজ বিশ্ব বৌদ্ধগণ মহাবোধি মন্দির সহ অন্যান্য বৌদ্ধস্থানে যেতে পারছে । কিন্তু এখনও মহাবোধি মন্দির সহ বৌদ্ধ তীর্থস্থান সমূহে হিন্দুদের কর্তৃত্ব জারী রেখেছে। এবং ভারতবাসী বৌদ্ধগণ যতদিন শুয়ে থাকবে ততদিন এ কর্তৃত্ব জারী থাকবে।

এ প্রসঙ্গে বাবা সাহেব ড. ভীমরাও আম্বেদকরের (১৮৯১-১৯৫৬) একটি উক্তি বড়ই প্রণিধানযোগ্য। রাত জেগে জেগে কেন তিনি লেখাপড়া করেন তা তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন- ‘ আমার সমাজ তো শুয়ে আছে, সে জন্য আমাকে জাগতে হচ্ছে।’

অনাগারিক ধর্মপালের ইহা প্রয়াস ছিল যে, যেখানে ভগবান বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন তা পুণরায় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হোক। তাঁর প্রয়াস ব্যর্থ যায়নি। বৌদ্ধ জগতে অনাগারিক ধরিমপালের ইচ্ছা পরিপুর্ণ হয়েছ।

১৮ সেপ্টেম্বর ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে যে বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন হয়েছিল অনাগারিক ধর্মপাল বৌদ্ধধর্মের আমন্ত্রিত প্রতিনিধি রূপে যোগদান করে এক অমূল্য ভাষণ দিয়েছিলেন। তাঁর ভাষণের বিষয়বস্তু ছিল ‘ The World’s Debt to Buddha’ . এ ভাষণ শুনে উপস্থিত গুণীজনেরা বিমুগ্ধ হয়েছিলেন। এ ধর্ম সংসদেই হিন্দুধর্মের প্রবক্তারূপে ভারত হতে স্বামী বিবেকানন্দও (১৮৬৩-১৯০২) বক্তৃতা দিৎেছিলেন।

অনাগারিক ধর্মপাল নিজের প্রায় সত্তর বছর বয়সে ভারত, শ্রীলংকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারে অনেক অবদান রাখেন। তিনি কয়েকটি স্কুল ও হাসপাতাল নির্মাণ করিয়েছিলেন। তিনি বুদ্ধগয়া, সারনাথ সহ দেশ বিদেশের নানা স্থানে বিহার ও মহাবোধি সোসাইটির শাখা স্থাপন করেন। সারনাথের মুলগন্ধ কুঠি নির্মাণ তাঁর জীবনের অক্ষয় কীর্তি।

৩১শে জুলাই, ১৯৩১ সালে অনাগারিক ধর্মপাল প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলেন এবং ১৬ই জানুয়ারী ১৯৩৩ সালে উপসম্পদা গ্রহণ করে ভিক্ষু হয়েছিলেন। প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় দেবমিত্র ধর্মপাল ভিক্ষু। ভারত তথা বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মের পুণর্জাগরণের অগ্রদূত অনাগারিক দেবমিত্র ধর্মপাল ভিক্ষু ২৯শে এপ্রিল, ১৯৩৩ সালে ৬৯ বছর বয়সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন সারনাথে।

তাঁর সমাধি সারনাথের মুলগন্ধ কুঠি বিহারের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

অনাগারিক ধর্মপাল সমগ্র বৌদ্ধ জগতে এক অদ্বিতীয় নাম। তিনি বৌদ্ধ ধর্মের পুণরুদ্ধারক ও ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম পতনের হাজারো সাল পরে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কেবল এ ভারতবর্ষে বৌদ্ধ ধর্মের বিজয় পতাকা উড়াননি, এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায়ও সদ্ধর্মের প্রচার- প্রসারে কাজ করে অভূতপূর্ব সফলতা লাভ করেছিলেন।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!