নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ নেতা মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ওরফে মুন্নাকে ভারতে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার বেঙ্গালুরু শহরের এক গোপন আস্তানা থেকে দেশটির জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ গ্রেফতার করলেও গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে খবর এসেছে মঙ্গলবার।
ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিহারের বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত ছিল বাংলাদেশি এই দুর্ধর্ষ জঙ্গি। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগর বিস্ফোরণেরও মূল হোতা এই জঙ্গি।
মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং বাংলাদেশের একটি আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, দুই দিন অঅগে মালাপ্পুরাম জেলা থেকে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ বোমারু মিজানের অবস্থান নিশ্চিত হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিজানকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ৩ আগস্ট এনআইএ’র একটি দল মুর্শিদাবাদ জেলার এলিজাবাদের বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সী আব্দুল করিম ওরফে ছোটা ও পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের কোত্তাক্কালের বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে শাহিন ওরফে তুহিনকে গ্রেফতার করে।
এক বিবৃতিতে এনআইএ বলছে, কোত্তাক্কালের একটি অভিবাসী শ্রমিক শিবির থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। বোধ গয়ায় ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটানোর পর থেকে এই শিবিরে আত্মগোপনে ছিল তারা। এই দুই অভিযুক্তের সন্ধানে শিবিরে তল্লাশি চালায় এনআইএ এবং সেখান থেকে আইইডির সার্কিট নকশা উদ্ধার করা হয়।
‘এ ঘটনার তদন্তের সময় সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন আরো ১০ জনের তথ্য পায় এনআইএ; যারা আইইডি বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত।’
গত ৪ আগস্ট কচিতে এনআইএ’র বিশেষ আদালতে অভিযুক্তদের হাজির করা হয়। আদালত তাদের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে পাটনায় এনআইএ’র বিশেষ আদালতে তাদের তোলা হলে সেখানে তাদের ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
Boma-mizan
এনআইএ’র তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, বোমারু মিজান ও মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে তুহিন ওরফে শাহিনের নেতৃত্বে জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবির একটি শাখা গড়ে উঠেছে।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, বোমারু মিজান বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার হলেও অতীতে বেশ কয়েকবার মালাপ্পুরাম সফর করেন। এসময় সেখানে অন্যান্য সন্দেহভাজন জঙ্গিদের অাশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন তিনি। বোমা তৈরিতে দক্ষ বোমারু মিজান। তাকে গ্রেফতারের সময় বোমা তৈরির সার্কিট, বিস্ফোরক, নকশা, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন জব্দ করেছে এনআইএ।
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধদের নিপীড়নের প্রতিশোধ নিতে বোধ গয়ায় জেএমবি হামলা চালিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
এর আগে, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালের দিকে ময়মনসিংয়ের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে বোমারু মিজান-সহ আরো দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। অন্য দুই জঙ্গি ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ।
ওইদিন টাঙ্গাইলে স্থানীয় জনতার হাতে আটক হাফেজ মাহমুদ পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। অন্যদিকে, তখন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন বোমারু মিজান ও সালেহীন।