সুমনাপ্রিয় ভিক্ষুঃ
একদা ভগবান বুদ্ধ অনাথপিন্ডিক নির্মিত জেতবন আরামে বাস করছিলেন। তখন একবার “চারিপাদ ঋদ্ধি” (অলৌকিক শক্তি) প্রদর্শন করেছিলেন। ঋদ্ধি প্রদর্শন কালে ভগবানের শরীর হতে ছয় রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়েছিল। ছয় রশ্মি যথা: নীল, পীত, লোহিত, মুঞ্জিষ্ঠা বা কমলা, ও প্রভাস্বর।
১. নীল: ভগবান বুদ্ধের কেশ রাশি ও চক্ষুদ্বয়ের নীলবর্ণ স্থান হতে প্রথম জ্যোতি নীল রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়েছিল। অনন্ত আকাশে নীল বর্ণ সদৃশ সর্বপ্রাণীর প্রতি সীমাহীন মৈত্রী পরায়নতা। ইহাই তথাগত বুদ্ধের বিমুক্তির চিহ্ন। এই নীল রশ্মি মৈত্রী পারমী।
২. পীত বা হলদে: সম্যক সম্বুদ্ধের গেরুয়া চীবর হতে দ্বিতীয় পীত রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়েছিল। ইহাই ত্যাগ বা সাধুতা ও বৈরাগ্যের চিহ্ন। এই রশ্মি অর্থ নৈষ্ক্রম্য পারমী।
৩. লোহিত বা লাল রশ্মি: তৃতীয় জ্যোতি বুদ্ধের ত্বকের মধ্য হতে বের হয়েছিল। বুদ্ধত্ব লাভের জন্য সংসারে জন্ম জন্মান্তর তেজবলে আপন জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কোন সময় তেজচ্যূত হননি। এর অর্থ তেজবান, ধৈর্য্য, ও বীরত্বপূর্ণ গুণ। এই লোহিত বর্ণ বীর্য্য পারমী।
৪. ওদাত বা শ্বেত বর্ণ: চতুর্থ জ্যোতি বা শ্বেত বর্ণ বুদ্ধের ৪০টি শ্বেত বর্ণ দন্তরাজি, চক্ষুদ্বয়ের শ্বেত স্থান হতে এই রশ্মি প্রকাশিত হয়েছিল। এর অর্থ সরলতা ও উদারতা। ইহাই দান পারমীর চিহ্ন।
৫. মুঞ্জিষ্ঠা বা কমলা: পঞ্চম মুঞ্জিষ্ঠা বা কমলা (ঈষৎ লাল বা পাতলা লাল মিশ্রিত হলদে রং) ভগবান বুদ্ধের শরীর ও চীবরের সমন্বিত প্রতীক এর অর্থ সাম্য, অহিংসা ও মুক্তি মার্গে উপনীত হবার চিহ্ন। ইহাই ক্ষান্তি পারমী।
৬. প্রভাস্বর বর্ণ : ইহা উপরোক্ত সমস্ত রশ্মির মিশ্রিত জ্যোতি। উপরোক্ত পাঁচ বর্ণের উজ্জ্বল আলো পর পর পাঁচ বর্ণ যুক্ত রং উপর থেকে নিচের দিকে যথাক্রমে নীল, পীত, লোহিত, ওদাত ও মুঞ্জিষ্ঠা সজ্জিত। ইহাই মহামানব বুদ্ধের ৩২ প্রকার মহাপুরুষ লক্ষণের চিহ্ন। এই ছয় রশ্মি, দশ পারমী, দশ উপপারমী, ও দশ পরমার্থ পারমী পূর্ণ সম্যক সম্বুদ্ধের প্রজ্ঞা পারমী।
এ ছয় রশ্মি যুক্ত বিশ্ব বৌদ্ধ ধর্মীয় পতাকা ভগবান বুদ্ধের প্রদর্শিত দুঃখ হতে মুক্তি লাভের পথ নির্দেশক। যারা মুক্ত পুরুষ তাঁরা চারি আর্য সত্য ও জ্ঞানের পতাকা সদৃশ সমুন্নত। যাঁরা জ্ঞানে উন্নত তাঁরাই সুখী।
[ বনভান্তের দেশনা (১ & ২য় খন্ড ), সংকলনে ডাঃ অরবিন্দ বড়ুয়া, পৃ: ১৫-১৬. ]