মধ্য প্রদেশ। ভগবান বুদ্ধের করুণাগাথা। পায়ে পায়ে খুঁজে নিন শান্তি ও সৌভাগ্যকে। নতুন রূপে আবিষ্কার করুন সাঁচি স্তূপ আর বিদিশা নগরী।
অশোক কীর্তি:
সাঁচি খ্রিস্টপূর্ব তিন শতকে সম্রাট অশোক নির্মিত বৌদ্ধস্তূপের জন্য প্রসিদ্ধ৷ মৌর্যসম্রাট চন্দ্রগুপ্তের পুত্র বিন্দুসারের মৃত্যুতে পুত্র অশোক ভাইদের হত্যা করে সিংহাসনে বসেন৷ কলিঙ্গ যুদ্ধের হতাহতের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে সম্রাট বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন এই সাঁচিতেই৷ অতঃপর সারা দেশজুড়ে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে ব্রতী হন অশোক৷ বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য তিনি সারা ভারতে প্রায় ২৬ হাজার স্তূপ নির্মাণ করেন৷ এবং পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রাকে সুদূর লঙ্কায় পাঠান বৌদ্ধধর্মের বাণী প্রচারে৷ অশোকের এই বৌদ্ধধর্ম প্রচারের অন্যতম কেন্দ্র সাঁচি। দীর্ঘকাল অজ্ঞাত থাকার পর সাঁচিকে নতুন করে আবিষ্কার করে ১৮৮১-তে ব্রিটিশরা৷
সাঁচির স্তূপ:
সাঁচির মূল আকর্ষণ শান্ত পরিবেশে পাহাড়ের মাথায় তার স্তূপগুলি৷ ১৬.৪ মি উঁচু আর ৩৬.৫ মি ব্যাসবিশিষ্ট গোলার্ধের আকারের প্রথম স্তূপটি মৌর্য সম্রাট অশোকের হাতে শুরু হয়ে শেষ হয় তাঁর উত্তরপুরুষের হাতে৷ অতীতের ইটে গড়া স্তূপের উপর আস্তরণ লাগানো হয়েছে পাথরের৷ চারপাশ রেলিং দিয়ে ঘেরা৷ চারটি প্রবেশ তোরণ চারদিকে৷ তোরণগুলোর কারুকার্য ও স্থাপত্য দেখার মতো৷ জাতক কাহিনি উৎকীর্ণ করা আছে স্তূপের তোরণের গায়ে৷
প্রতীকী পদ্ম:
দক্ষিণদ্বারে আছে বুদ্ধের জন্মের প্রতীকী পদ্ম। পদ্মের উপর মায়াদেবী দাঁড়িয়ে৷ মস্তকে জল সিঞ্চন করছে দু’পাশের দুই হাতি৷ অদূরে ভগ্নাবস্থায় ১২.৮ মি উঁচু ১০ নম্বর অশোকস্তম্ভ, যার উপরে ছিল সিংহ মূর্তি৷ এমনই সিংহ মূর্তি রয়েছে সারনাথেও যা ভারত রাষ্ট্রের প্রতীক৷ উত্তরদ্বারে রয়েছে আম্র বৃক্ষতলে বুদ্ধের ধর্ম-বক্তৃতার ভাস্কর্য৷ তাঁর পা থেকে জ্যোতি বেরোচ্ছে৷ ভগ্নাবস্থায় ধর্মচক্রটিও রয়েছে উত্তরদ্বারের শিরে৷
বোধিবৃক্ষ:
এছাড়া সাঁচির নতুন আকর্ষণ সারনাথের আদলে সিংহলের বৌদ্ধ সমাজের গড়া নতুন বিহারে বুদ্ধ শিষ্যের দেহাবশেষ৷ এরই বিপরীতে রয়েছে সিংহল থেকে আনা বোধিবৃক্ষ৷ এছাড়াও রয়েছে অতীতকালের নানা মন্দির, নানা বিহার বৌদ্ধতীর্থ সাঁচিতে৷ আর হয়েছে গুপ্তকাল থেকে চতুর্থ শতকের স্থাপত্যের ও ভাস্কর্যের সংগ্রহ নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম পাহাড়ের পাদদেশে৷ শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা৷
বিদিশা নগরী:
সাঁচি থেকে বাস বা ট্রেনে বিদিশায় চলুন৷ সাঁচি থেকে ৯ কিমি দূরে বেতোয়া ও বিদিশা নদীর সন্ধিস্থলে বিদিশা নগরী৷ খ্রিঃ পূঃ ৬০০ বছর আগে বাণিজ্যনগরী রূপে প্রসিদ্ধ ছিল বিদিশা৷ অশোক বিয়েও করেন বিদিশার কন্যা দেবীকে৷ রামায়ণে উল্লেখ মেলে বিদিশার কথা৷ রামের ভাই শত্রুঘ্ন যাদবরাজদের কাছ থেকে বিদিশা জয় করে ছেলেকে বসান সিংহাসনে৷ মহাকবি কালিদাসের মেঘদূতেও বিদিশার উল্লেখ মেলে৷ বিদিশাকে ঘিরে ২৭ কিমি জুড়ে সম্রাট অশোকের গড়া ৬৫টি স্তূপ ও পাথরের স্তম্ভ দেখে নেওয়া যায়৷ মিউজিয়ামও হয়েছে রেল স্টেশনের পিছনে সার্কিট হাউসের বিপরীতে৷ আর আছে বিষ্ণুমন্দির রেল স্টেশনের সামনে৷
কী ভাবে যাবেন:
দিল্লি-মুম্বই ও দিল্লি-চেন্নাই রেলপথে ঝাঁসি-ইটারসির মাঝে সাঁচি স্টেশন৷ কিন্তু কলকাতা থেকে কোনও সরাসরি গাড়ি নেই৷ ঐতিহাসিক পর্যটন ক্ষেত্র হওয়া সত্ত্বেও মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেন থামে না সাঁচিতে৷ পর্যটকদের সুবিধা হবে ভোপাল থেকে সাঁচি ঘুরে নেওয়া৷ রাজ্যের রাজধানী ভোপাল থেকে ৪৭ কিমি দূরত্ব সাঁচির৷ বাস সংযোগ রয়েছে ভোপাল, ইন্দোর, গোয়ালিয়র ছাড়াও মধ্য প্রদেশের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে৷
কোথায় থাকবেন:ভোপালে হোটেলের অভাব নেই। পৌঁছে বেছে নিন পকেটসই ঘর।