আগামীকাল ২৭ জুলাই, ২০১৮ শুক্রবার বৌদ্ধধর্মালম্বীদের অন্যতম পবিত্র ধর্মীয় উৎসব শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা। বুদ্ধের জীবনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই পূর্ণিমায় সংঘটিত হয়েছিল। প্রধান উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমার পর আষাঢ়ী পূর্ণিমার স্থান। নানা কারণে এ পূর্ণিমার গুরুত্ব অপরিসীম। এই পবিত্র তিথিতে গৌতমবুদ্ধ তার মাতৃজঠরে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেছিলেন, ২৯ বছর বয়সে দুঃখমুক্তির অন্বেষণে স্ত্রী, পুত্র, পিতামাতা ও সিংহাসন ছেড়ে গৃহত্যাগ করে সন্নাস জীবন গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমায় বুদ্ধ যে জ্ঞান বা বোধিলাভ করেন তাই পবিত্র আষাঢ়ী পূর্ণিমায় সারানাথ (ভারত)-এর ইসিপতন মৃগদাবে পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের সামনে সর্বপ্রথম দেশনা করেন। এই দেশনাকে বলা হয়- ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র, অর্থাৎ ধর্মের যে চাকা এতদিন অবরুদ্ধ ছিল তিনি সেদিন তা পুনরায় চালু করেন। এই ধর্মদেশনার মধ্য দিয়েই জগতে নতুন এক ধর্মের জন্ম হয় তার নাম বৌদ্ধধর্ম।
এই গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছাড়াও বুদ্ধ এইদিনে তুষিত স্বর্গে গিয়ে তার মাকে অভিধর্ম দেশনা করেন, তার মা তার জন্মের সাতদিন পর মারা যান। তিনি এ তিথিতে ঋদ্ধি (অলোকিক শক্তি) প্রদর্শন করেন। এছাড়াও এ পবিত্র দিনে ভিক্ষুসংঘের বর্ষাব্রত পালন আরম্ভ হয়। অতএব এই সমস্ত স্মরণীয় ঘটনা আষাঢ়ী পূর্ণিমায় সংগঠিত হয়েছিল বলে এ পূর্ণিমা অতি তাৎপর্যময়। বৌদ্ধেরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধার সাথে এই পূর্ণিমা উদ্যাপন করে।
বৌদ্ধেরা এ পূর্ণিমাকে ছোট ‘ছাদাং’ বা ছোট উপোসথ দিবসও বলে। এ পূর্ণিমা থেকেই বৌদ্ধ গৃহীদের ত্রৈমাসিক উপোসথ ব্রতও আরম্ভ হয়। তারা অষ্টশীল গ্রহণ করে।এ পবিত্র দিনে বৌদ্ধেরা সকালে স্নানাদি সেরে নববস্ত্রে সর্জিত হয়ে বৌদ্ধ বিহারে যায়, দান দক্ষিণা দেয়, শীল গ্রহণ করে এবং ভিক্ষুদের আহার্য প্রদান করে। প্রতিবিহারে উৎসব হয়, বিকেলে ধর্মসভা, প্রদীপ প্রজ্জলন এবং পঞ্চশীল গ্রহণ করা হয়। বিহারে বিহারে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক উৎসব হয়, কীর্তনও হয়।
আজ সারা দেশে এ উৎসব পালিত হচ্ছে মুক্ত পরিবেশে আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে। ঢাকার ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার, বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার, কুমিল্লার কনকস্তূপ বিহার, আলীশ্বর বৌদ্ধ বিহার, চট্টগ্রামের নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার, কাতালগঞ্জের নবপন্ডিত বিহার, দেবপাহাড়ের পূর্ণাচার বিহার, মোগলটুলির শাক্যমুনি বিহার, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়স্থ বিশ্ব শান্তি প্যাগোডা, হাটহাজারীর জোবরা সুগত বিহার, রাউজানের আবুরখীল অজন্তা বিহার, জ্ঞানানন্দ বিহার, মহামুনি বিহার, পটিয়ার লংকারাম বিহার, চন্দনাইশের সাতবাড়িয়া বিহার, কক্সবাজারের অগ্গমেধা বিহার, বান্দরবান রাজবিহার, জাদি বিহার, রাঙ্গামাটির বন বিহার, রাজ বিহার, আনন্দ বিহার, খাগড়াছড়ির কেন্দ্রীয় বিহার সহ দেশের সকল বৌদ্ধ বিহারে এ ধর্মীয় তিথি উদ্যাপিত হবে। এদিকে ফ্রান্সে বাংলাদেশীদের পরিচালনাধীন বাংলাদেশী সার্বজনীন বিহারে শনিবার (৮ জুলাই) বুদ্ধগয়া প্রজ্ঞাবিহার ধ্যানকেন্দ্র, কুশলায়ন বুড্ডিষ্ট মেডিটেশন সেন্টার, ইউরােপীয়ান বুড্ডিষ্ট সেন্টারে রবিবার ৯জুলাই, শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা মহাসমারোহে অনুষ্টিত হবে।