আন্তর্জাতিক ডেস্ক : থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া খুদে ফুটবলারদের আগামীকাল বুধবার অধিকাংশ প্রব্রজিত হতে যাচ্ছে।
থাইল্যান্ডে আজ মঙ্গলবার তাদের প্রব্রজিত অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে। ফুটবলারদের কোচও সংঘ দ্বারা আদেশপ্রাপ্ত হবেন। তবে খুদে ফুটবলারদের একজন খ্রিষ্টান হওয়ায় তাকে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে না।
থাইল্যান্ডে কোনো পুরুষ বড় কোনো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেলে তাদেরকে নয় দিন বৌদ্ধ আশ্রম বা মঠে জীবন যাপন করার ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্য অনুসারেই কোচ ও ১১ খুদে ফুটবলার নয় দিন মঠে কাটাবেন। এ সময় তারা শীল সমাধী প্রজ্ঞার অনুশীলন করবেন।
গত সপ্তাহে ওইসব খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ হাসপাতাল থেকে মুক্তি পায়। তারা বর্তমানে সুস্থ আছে। খুদে ফুটবলারদের ‘আত্মিক পবিত্রতার’ জন্য তাদেরকে এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করতে হবে।
খুদে ফুটবলার নাইটের দাদা সিওয়াদ সমপিয়াংজাই বলেন, ‘তাদেরকে (খুদে ফুটবলারদের) মঠে সময় কাটাতে হবে। তাদের সুরক্ষার জন্য এটি করতে হবে। তারা তো মারাই গিয়েছিল, এখন তারা নতুন জীবন পেয়েছে।’
থাইল্যান্ডের এক কর্মকর্তা জানান, বুধবার খুদে ফুটবলারদের প্রব্রজানুষ্ঠান হবে। এর আগে মঙ্গলবার তাদের মাথা কামানোর মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘খুদে ফুটবলাররা ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন মঠে জীবন যাপন করবে। এরপর তারা ধ্যান, প্রার্থনা ও প্যাগোডা পরিষ্কার করবে এবং তাদেরকে নয় দিন এসব করতে হবে। নয় দিন হলো থাইল্যান্ডে সৌভাগ্যসূচক সংখ্যা।’
গত ২৩ জুন দুপুরে ওই ফুটবল দলটি ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ থাম লুয়াং গুহায় প্রবেশ করে। তবে সন্ধ্যায়ও ফিরে না আসলে তাদের খোঁজে অভিযান শুরু হয়।
নিখোঁজ ১৩ জনের ওই খুদে ফুটবল দলে ১২ জন খেলোয়াড় ও একজন কোচ ছিল। ওই ফুটবলারদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। আর কোচের বয়স ২৫ বছর।
২ জুলাই রাতে তাদেরকে খুঁজে পায় ব্রিটেনের দুইজনের ডুবুরি দল। তাদের জীবিত সন্ধান পাওয়ার খবরে থাইল্যান্ডজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তবে গুহার ভেতরে পানির উচ্চতা বাড়তে থাকায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।
থাম লুয়াং গুহা উত্তর থাইল্যান্ডের একটি দুর্গম স্থান হিসেবে পরিচিত। বর্ষাকালে গুহার ভেতরে বন্যা হয়, যা সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
উদ্ধারকারীরা জানান, গুহার নিচে উদ্ধারে পথে অনেক জায়গা পুরোপুরি কর্দমাক্ত, কোথাও ১৬ ফুট পর্যন্ত পানি, কোথাও পুরোটাই পানিতে পূর্ণ, যেখানে এমনকি হেডলাইট দিয়েও কিছুই দেখা যায় না। এ ছাড়াও অনেক স্থান খুবই বিপজ্জনক।
সামান গুনান (৩৮) নামের এক ডুবুরি ওই খুদে ফুটবলারদের উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডের নৌবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিলেন এই ডুবুরি। খুদে ফুটবলারদের গুহায় আটকে পড়ার খবর শুনে তিনি উদ্ধারকাজে যোগ দিতে আসেন।
সামান গুনান গুহার ভেতরে আটকে থাকাদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের কাজ করছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে ফেরার পথে নিজের সিলিন্ডারের অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় দমবন্ধ হয়ে যায়। পরে তার সহকারী ডুবুরি তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দীর্ঘ সংগ্রামের পর গত ১০ জুলাই গুহায় আটকে পড়া সব খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার কাজ সম্পন্ন হয়।
তথ্য : বিবিসি