নির্বাণা পিস ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবং ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স অব বুড্ডিস্টের সহযোগিতায় সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ২য় গ্লোবাল বুড্ডিস্ট পিস কংগ্রেস বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় মহাসম্মেলন শেষ হয়েছে।
সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল ১১১ জন বৌদ্ধ কূলপুত্রদেরকে প্রব্রজ্যা প্রদান, ১১১জন উভয় নিকায়ের বিহারাধিপতি ভিক্ষুসংঘের দুই পর্বের মহাসংঘ দান, ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্রপাঠ, বুদ্ধ প্রতিবিম্ব ও ভিক্ষুসীমা প্রতিস্থাপন, ৩টি নির্বাণা পিস ধর্মীয় স্কুল উদ্বোধন, যুব সম্মেলন, সেমিনার ও প্রশিক্ষণ, ওয়ার্ল্ড পিস এথিক্স ধর্মীয় বৃত্তি পরীক্ষায় কৃতী ছাত্র–ছাত্রীদের সনদপত্র ও পুরস্কার প্রদান,সাংবাদিক বিমলেন্দু বড়ুয়া পিস অ্যাওয়ার্ড ও গ্লোবাল বুড্ডিস্ট পিস অ্যাওয়ার্ড প্রদান, ভিডিও প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাছাড়া বৃক্ষ রোপন, হালদা নদীতে মৎস্য অবমুক্তকরণ, ধর্মদেশনা, বুদ্ধ পূজা,পিণ্ডচারণ ও জ্ঞাতি ভোজন, প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন ছিল এই মহাসম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ।
গত ৩০ জুন লেডিস ক্লাবে চার পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল প্রথম পর্বে সংঘরাজ নিকায়ভুক্ত ৫৬জন ভিক্ষুসংঘকে মহাসংঘদান। এতে সভাপতিত্ব করেন উপসংঘরাজ জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির এবং আশীর্বাদক ছিলেন সত্যপ্রিয় মহাস্থবির। ২য় পর্বে মহাস্থবির নিকায়ভুক্ত ৫৫জন ভিক্ষুসংঘকে মহাসংঘদান। সভাপতিত্ব করেন উপসংঘনায়ক অধ্যাপক বনশ্রী মহাথের এবং আশীর্বাদক ছিলেন মহাসভার সভাপতি সদ্ধর্মজ্যোতি সুনন্দ মহাথের। স্বাগত বক্তব্য দেন ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স অব বুড্ডিস্টের সভাপতি ড. পর্ণচাই পিনায়েপং ও নির্বাণা পিস ফাউন্ডেশনের সভাপতি সবুজ বড়ুয়া শুভ।
৩য় পর্বে ছিল যুব সম্মেলন ও সেমিনার। লায়ন ডা. মৃদুল বড়ুয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স অব বুড্ডিস্টের সভাপতি ড. পর্ণচাই পিনায়েপং। ২য় গ্লোবাল বুড্ডিস্ট পিস কংগ্রেস আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অন্যতম প্রদান জ্ঞাতি ছিলেন মহারাষ্ট্রের স্যোশাল জাস্টিজ অ্যান্ড স্পেশাল এসিস্টেন্স বিভাগের মন্ত্রী রাজকুমার এস বাডোলে। উদ্বোধক ছিলেন ওয়ার্ল্ড পিস এথিঙ ক্লাবের সভাপতি ফ্রা কিরাতি নুয়ালক্রাচাং এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন অভিনেতা ড. গগন মালিক ও চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য বানার্জি। বক্তব্য দেন নিতিন গাজবিয়ে, চন্দ্রবোধি পাতিল, স্নেহাল গাজবিয়ে,রতনশ্রী মুতুকুমারা, ভেনারী ট্রাইনেট, রোসেসোয়ান পাত্তানাফিটুন,পিচাই থানপ্রাপাপ্রনসহ ১৮ সদস্যের বিদেশি প্রতিনিধি এই মহাসম্মেলনে যোগদান করেন। যুব বিষয়ক সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রদীপ কুমার বড়ুয়া আনন্দ। বক্তব্য দেন ডা. প্রীতি বড়ুয়া, ডা. কল্যাণ বড়ুয়া, লোকপ্রিয় বড়ুয়া, প্রফেসর সুমন বড়ুয়া, সনত বড়ুয়া প্রমুখ। শেষে সাংবাদিক বিমলেন্দু বড়ুয়া পিস অ্যাওয়ার্ড, গ্লোবাল বুড্ডিস্ট পিস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। স্বপন বড়ুয়ার পরিচালনায় ‘আবার এসো হে বুদ্ধ’ শিরোনামে নৃত্যনাট্য ও লোকনৃত্য পরিবেশিত হয়। ৪র্থ পর্বে ছিল ওয়ার্ল্ড পিস ইথিঙ ক্লাব, নির্বাণা পিস ফাউন্ডেশন ও ওয়ার্ল্ড এ্যলায়েন্স অব বুড্ডিস্ট–এর উদ্যোগে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড পিস ইথিঙ ধর্মীয় বৃত্তি পরীক্ষার বৃত্তি প্রদান করা হয়। শেষে নির্বাণা পিস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মিথিলা চৌধুরী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
নির্বাণা পিস ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবং ওয়ার্ল্ড এ্যলায়েন্স অব বুড্ডিস্ট–এর সহযোগিতায় ১ম দিনে গত ২৯ জুন মধ্যম মাদার্শা শান্তি নিকেতন বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ১১১ জন বৌদ্ধ কূলপুত্রদেরকে প্রব্রজ্যা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার উপ–সংঘনায়ক বনশ্রী মহাথের। আশীর্বাদক ছিলেন অভয়ানন্দ মহাথের। স্বাগত বক্তব্য দেন বিহারাধ্যক্ষ সুপাল বংশ থের। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ড. পর্ণচাই পিনায়েপং এবং উদ্বোধক ছিলেন ফ্রা কিরাতি নুয়ালক্রাচাং। সনৎ বড়ুয়ার পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সবুজ বড়ুয়া শুভ, মিথিলা চৌধুরী,লায়ন ডা. মৃদুল বড়ুয়া চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক নীহারেন্দু বড়ুয়া প্রমুখ। ৩য় দিনে গত ১ জুলাই মধ্যম মাদার্শা শান্তি নিকেতন বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল আন্তঃধর্মীয় সম্মেলন, নব প্রব্রজ্যিত শ্রামন সংঘের পিন্ডপাত, বুদ্ধ পূজা, সংঘদান, সবুজ বৃক্ষরোপণ ও হালদা নদীতে মৎস অবমুক্তায়নসহ নানা আয়োজন। অধ্যক্ষ সুপালবংশ থেরর সভাপতিত্বে সনৎ বড়ুয়া ও বিধান বড়ুয়ার পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম। প্রধান আলোচক ছিলেন ড. পর্নচাই পিনায়েপং। অতিথি ছিলেন রাজকুমার এস বাডোলে, ফ্রা কিরাতি নুয়ালক্রাচাং, ড. গগন মালিক, জাফর আহমেদ,চেয়ারম্যান এম এ মজিদ, রাশেদ খান মেনন, সবুজ বড়ুয়া, মিথিলা চৌধুরী, মহিপাল, মীম ভেনারী ট্রাইনেট, নুমিম, আবী, ডেনী, কাউড়ে,আঞ্জলি, নিতিন, সেনাম, চন্দ্র বৌদি পাঠিল, রতনাশী মুতুকুমারা, পলাশ বড়ুয়া, মিন্টুন বড়ুয়া, মিন্টু বড়ুয়া, জুয়েল বড়ুয়া, হিরু বড়ুয়া, সুমিত বড়ুয়া, জয় বড়ুয়া, রাজেশ বড়ুয়া।
প্রধান অতিথি বলেন, দেশের হাজার বছরের কৃষ্টি, সভ্যতা, ঐতিহ্য,সংস্কৃতি, ধর্মীয় সমপ্রীজিত একাকার। চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রথম কাব্যগ্রন্থ যেটা ছিল বৌদ্ধ ধর্মীয় নীতিমালা। আমরা যে বাঙালি এটা কখনো পরিবর্তনযোগ্য নয়। তাই অসামপ্রদায়িক চেতনাই আমাদের একমাত্র ঠিকানা।
৪র্থ দিনে ২ জুলাই রাউজানের বিহার পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৫ম দিনে গত ৩ জুলাই মধ্যম মাদার্শা শান্তি নিকেতন বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গনে নব প্রব্রজ্যিত শ্রামন সংঘ ও যুব নেতৃবৃন্দের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা, অনুশীলন, ভিডিও প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড. পর্ণচাই পিনায়েপং। ৬ষ্ঠ দিনে ৪ জুলাই নব প্রব্রজ্যিত শ্রামন সংঘের পিণ্ডপাত ও ধর্মালোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।