নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ঐতিহাসিক জগদল বিহার এখন অযত্ন-অবহেলা ও অরক্ষিত পড়ে আছে। ইতিহাসবিদরা এই বিহারকে প্রাচীন বাংলার রাজধানী রামাবতি নগর হিসেবে ধারণা করেছেন।
কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে থেমে আছে ঐতিহ্যঘেরা এই বিহারের অনুসন্ধান কাজ। সর্বশেষ ২০১৩ সালে বিহারে খনন চালায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। সে সময় বিহার থেকে বেরিয়ে এসেছে বৌদ্ধ মূর্তিসহ প্রাচীন বাংলার অসংখ্য নিদর্শন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯৬ সালে জগদল বিহারের প্রথম খনন কাজ শুরু হয়। মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকে। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে আবার শুরু হয় খনন। সবশেষ ২০১৭ সালে তৃতীয় পর্যায়ের খনন শুরু হয়ে চলে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। তৃতীয় পর্যায়ের খননে তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুব আলম জানান, এ পর্যন্ত ৪০টি ভিক্ষুক কক্ষের মধ্যে আবিষ্কার হয়েছে ৩৮টি। উদ্ধার করা হয় বিহারের ফাউন্ডেশনের গভীরতা, ফ্লোর লেভেল, ভিত্তি ও পাথর দিয়ে নির্মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
কক্ষগুলোর দেয়ালের পাশে পাওয়া যায় গ্রানাইট পাথরের তৈরি লম্বাকৃতির ১০টি স্তম্ভ। স্তম্ভগুলো ভবনের ভিত্তির চওড়া পাথরের সঙ্গে আটকানোর চিহ্ন রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে পাওয়া যায় বৌদ্ধমূর্তি রাখার স্থান (কুলিঙ্গ)। তিনি আরও জানান, বিহারের মেঝে থেকে বিভিন্ন স্তর ২৪-২৫ ফুট উঁচু ছিল। এখানে যে একটি বিশাল জনপদ ছিল—তা কয়েকটি স্থান অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। জগদলের পূর্বে নিকেশ্বর বা নিকাই শহর এবং পশ্চিমে জগত্নগর নামে বিশাল জনপদ ছিল। জগদলে মোক্ষাকর, দানশীল, শুভাকর ও বিভূতিচন্দ্র নামে চারজন বৌদ্ধ পণ্ডিত থাকতেন। তিব্বতীয় ভাষায় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ করা হতো সে সময়। এছাড়া উদ্ধার হয়েছে ব্রোঞ্জ ও কালো পাথরের তৈরি বৌদ্ধমূর্তি, শিলালিপি, দশদিকপাল মূর্তি সম্বলিত পাত্র, কালো পাথরের তৈরি মূর্তির ভগ্নাংশ, পোড়া মাটির ফলক, অলঙ্কার, লোহার পেরেক, লোহার ছোট মার্বেল, মাটির পাত্রসহ অসংখ্য নিদর্শন। বিহারটি আকৃতিতে পদ্ম ফুলের মতো বলে বিশেষজ্ঞরা এটিকে জগদল পদ্ম বৌদ্ধবিহার বলেও আখ্যায়িত করেছেন। ধামইরহাট ইউপি চেয়ারম্যান জানান, এই জগদল বিহারে যে সব তথ্য ও নিদর্শন পাওয়া গেছে ইতিহাসবিদরা তাতে রামাবতি নগরের ধারণাটি অনেকটা নিশ্চিত হয়েছেন।