সমীর বড়ুয়া:
এক বৌদ্ধ ভিক্ষু। অত্যন্ত সাধারণ বস্ত্র পরিহিত। সতেজ কর্মতৎপরতায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যাতায়াত করতেন।
সবাই তাঁকে অপ্রমত্ত বন্ধু বলে সম্বোধন করতেন- কেননা তিনি চিরাচরিত অভ্যাসবশত সবাইকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাতেন।
বলতেন ” আমি আপনাকে অবজ্ঞা করতে পারিনা, কারন আপনি বোধিসত্ত্বের পথে পরিভ্রমণ করছেন, আপনিও একদিন বুদ্ধ হবেন।”
সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধাপূর্ণ ভঙ্গিতে করজোড়ে থাকতেন, হোকনা তিনি ব্যস্ত শ্রমিক বা রাস্তায় হেটে যাওয়া সুন্দর পোষাকে সজ্জিত সজ্জন ব্যক্তি।
যাঁরা দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত, যাঁরা জীবনের ভারে নূইয়ে আছে, তাঁদের প্রতিও তিনি একই আচরন করতেন।
যাঁরা দূর্মুক, অত্যাচারী, বদমাস, যাঁরা তাঁকে ঘৃণা করেন তাঁদের কাছেও তিনি বিনীত। তাঁদেরকেও তিনি বলতেন – ” আমি আপনাদের শ্রদ্ধা করি, আপনাদের অবজ্ঞা করিনা, আপনারাও বোধিসত্ত্বের মতো পারমী পূর্ণ করছেন, আপনারাও একদিন বুদ্ধ হবেন।
কিছু লোক মনে করলেন – তিনি তাঁদের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করছেন। তাই তাঁরা সেই ভিক্ষুর প্রতি রেগে গিয়ে এই ধরনের আচরণ বন্ধ করার জন্য বললেন। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে নিরস্ত করা গেলনা।
একদিন তাঁরা এই ভিক্ষুকে নির্দয়ভাবে লাঠিপেটা করলেন, তাঁর দিকে পাথর ছুঁড়ে মারলেন।
কিন্তু এই ত্যাগী ভিক্ষু ভয় পেলেননা, তাঁদের প্রতি কোন বিদ্বেষও পোষণ করলেননা।
কেবল তিনি তাঁদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে এলেন এবং বারবার বলতে থাকলেন – ” আমি আপনাদের ঘৃণা করতে পারিনা, আপনারা একদিন বুদ্ধ হবেন।”
শাক্যমুনি বুদ্ধ একদিন বললেন – ” আমিই ছিলাম সেই ভিক্ষু। পূর্বজন্মে আমি যদি এভাবে পারমী পূর্ণ না করতাম, এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে বোধিজ্ঞান লাভ করে বুদ্ধ হওয়া সম্ভব হতোনা।”