নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত জগদ্দল মহাবিহারনওগাঁর ধামইরহাটের জগদ্দল মহাবিহার হতে পারে বাংলার প্রাচীন রাজধানী রামাবতী নগর। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত নির্দশন পর্যবেক্ষণ করে সে রকম ধারণাই পেয়েছেন সংশিস্নষ্টরা। গবেষকরা বলেছেন দ্বাদশ শতকের কবি সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত রামচরিতম গ্রন্থে উলিস্নখিত প্রাচীন বাংলার রাজধানী রামাবতী নগরের ধারণাটি অনেকটা স্পষ্ট হয়ে এসেছে জগদ্দলে। তিন বছর ধরে থেমে আছে জগদ্দলের উৎখনন কাজ। সর্বশেষ ২০১৩ সালে বিহার খনন চালায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তবে সংশিস্নষ্টরা জানিয়েছেন, জগদ্দল বিহারের উৎখননের বিষয়টি নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আন্ত্মরিক। দ্রম্নতই আবার এটির খনন ও সংস্কার কাজ শুরম্ন হবে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জগদ্দল বিহারের প্রথম উৎখনন শুরম্ন হয় ১৯৯৬ সালে। মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকে। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর আবারও শুরম্ন হয় খনন কাজ। সর্বশেষ তৃতীয় পর্যায়ে খনন চালানো হয় ২০১৩ সালে। চলে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত্ম। ওই সময় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে বুদ্ধমূর্তিসহ একের পর এক প্রাচীন নিদর্শন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাপ্ত বৌদ্ধ বিহারগুলোর মধ্যে আবারও মিলেছে বিহারের ছাদের স্বরূপ। তৃতীয় পর্যায়ের উৎখননে তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত পাহাড়পুর প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগের কর্মকর্তা মাহাবুব আলম জানান, এখানেই রয়েছে পাল সম্রাট রামপালের সেই হারিয়ে যাওয়া রামাবতী নগরী। এর আগে ২০১৩ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে জগদ্দল বিহারের পশ্চিম বাহুর একটি ভিক্ষু কক্ষে খনন করতে গিয়ে একটি কুলাঙ্গির মধ্যে পাওয়া যায় ১৪টি ব্রোঞ্জের বৌদ্ধ মুর্তি। বিহারের মেঝে থেকে বিভিন্ন স্ত্মরে ২৪ থেকে ২৫ ফুট উঁচু ছিল। জগদ্দলের পুর্বে নিকেশ্বর বা নিকাই শহর ও পশ্চিমে জগৎ নগর নামে বিশাল জনপদ ছিল। এখানে কর্মরত প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কর্মকর্তারা অনেকটাই নিশ্চিত সেই জগদল বিহারই লোটাস বিহার (পদ্ম মহাবিহার) বিহারটির আকৃতি দেখে লোটাস বৌদ্ধ বিহার বলে প্রাথমিকভাবে আখ্যায়িত করেছেন উদ্ধারকারীর প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ দল। তারা বলেছেন, বরেন্দ্রভুমি তথা দেশের ৯০০ বছরের প্রাচীন স্থাপত্য শিল্প জগদ্দল লোটাস মহাবিহার নতুন সংযোজন। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান সাদেকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সম্ভাব্য তালিকায় জগদ্দল মহাবিহারের নাম রয়েছে। এবার খননে পাওয়া গেছে বিহারের ভগ্নাংশ। নির্দিষ্ট দূরত্বে পিলারের সারি পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে বিভিন্ন সাইজের বিপুলসংখ্যক আইরন নেইল (তারকাটা) বিহারের উত্তর বাহু খননে বেরিয়েছে পোড়া মাটির টেরাকোটা। তিনি আরও জানান, ছাদের বড় বড় ইটের খোয়া চুন সুড়কি, কাদামাটির সঙ্গে উদ্ভিদ ও প্রাণিজ পদার্থের মিশ্রণে ছাদ মজবুত করা হয়েছিল। বিহারটি দ্বিতীয়বার সংস্কারের সময় আথবা নির্মাণের সময় গ্রানাইট পাথরের উপর চুন সুড়কির পলেস্ত্মারা করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিহারের বহিঃদেয়াল চুন বালির মিশ্রণে কারম্নকার্যে সাদা রঙের লতা, পাতা, ফুল জীববস্তুর অলংকরণ ছিল। যার নমুনা পাওয়া গেছে দ্বাদশ শতকের বিখ্যাত কবি সান্ধ্যাকর নন্দী কতৃর্ক সংস্কৃত ভাষায় রচিত রাম চরিতম গ্রন্থের এসব অলংকরণের কথা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, জগদ্দলে উৎখনন অনুসন্ধানে যেসব তথ্য ও নিদর্শন পাওয়া গেছে, তাতে রামাবতী নগরের ধারণাটি অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এটি পুর্ণাঙ্গভাবে নিশ্চিত হতে বিহারটি পুর্ণাঙ্গ খনন, সংস্কার এবং আরও গবেষণা করা দরকার।