1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

বুদ্ধের দর্শন

প্রতিবেদক
  • সময় শনিবার, ৯ জুন, ২০১৮
  • ৭৮৩ পঠিত

রত্না কণিকা বড়ুয়া:

তিনটি বিশেষ ঘটনার সমারোহে বুদ্ধের মহাপুরুষ অভিধার অপূর্ব লক্ষণ। সিদ্ধার্থ গৌতম জন্মগ্রহণ করেছিলেন বৈশাখী এক পূর্ণিমায় খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে প্রাচীন উত্তর-পূর্ব ভারতের কপিলাবস্তু নগরীর লুম্তিনিতে। বিপুল ঐশ্বর্যের মধ্যে বেড়ে উঠলেও তিনি শৈশব থেকেই ভাবমগ্ন থাকতেন। পিতা শুদ্ধোধন ছেলের উদাসীনতা দেখে যশোধরা নামক এক অনুপম সুন্দরী মেয়েকে পুত্রবধূ করে আনেন। পুত্র রাহুলের জন্মের পর তাঁর ধ্যান-গম্ভীর ভাবান্তর আরো বেড়ে যায়। তিনি নগরীর শোভাদর্শনে বের হয়ে জরাগ্রস্ত, ব্যাধিগ্রস্ত ও মৃত লোক দেখে জন্ম-মৃত্যুর রহস্য আবিষ্কার করার জন্য বদ্ধপরিকর হন। রাজকীয় ভোগ-বিলাসের সহস্র উপকরণ, সবগুণে গুণান্বিতা স্ত্রী যশোধরার রূপলাবণ্য, স্নেহময় পুত্র রাহুলের আকর্ষণ সবকিছু তাঁর কাছে তুচ্ছ মনে হয়। এসময় তাঁর বয়স হয় ২৯ বছর। তিনি আষাঢ়ি পূর্ণিমায় গৃহত্যাগ করেন। রাজার ছেলে সিদ্ধার্থ গৌতম গেরুয়া বসনে দুঃখ মুক্তির অন্বেষণে প্রাচীন ঋষি আরাড় কালাম, রামপুত্র রুদ্রক প্রমুখ মনীষীর সান্নিধ্যে যান। কিন্তু কেউ সংসার চক্রের অবহমান জন্ম-মৃত্যুর দিক নির্দেশনা ও মুক্তির পথ দেখাতে পারলেন না। তাঁদের কাছে ব্রহ্মপ্রাপ্তির উপায় জানতে পারলেন বটে, সর্বজ্ঞজ্ঞান লাভের উপায় কারো জানা ছিল না। তাই তিনি একাই বন থেকে বনান্তরে ছয় বছর কঠোর সাধনা করেন। অবশেষে তিনি নিরাঞ্জনা নদী তীরবর্তী অশ্বত্থ তরুতলে ৩৫ বছর বয়সে বৈশাখী পূর্ণিমা রাতে লাভ করেন পরম জ্ঞান বুদ্ধত্ব। অবগত হন জন্ম-মৃত্যুর তত্ত্ব, দুঃখরাশির উদয়-বিলয় চিন্তা করতে করতে বিবেক সুখ উপভোগ করেন। অবিদ্যা বা অজ্ঞান ও তৃষ্ণাকে মূল কারণ হিসেবে বর্ণনা করে তাঁর থেকে পরিত্রাণের জন্যে তিনি উদ্ভাবন করেন আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ, যার নাম মধ্যম পন্থা।

মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ গন্ধকুটিরে দাঁড়িয়ে ভিক্ষুসংঘকে প্রতিদিন এই উপদেশটি দিতেন—হে ভিক্ষুগণ, তোমরা অপ্রমাদের সহিত আপন কর্তব্য সম্পাদন করো। জগতে বুদ্ধোত্পত্তি বড়ই দুর্লভ। ভগবান বুদ্ধের এই অমোঘবাণী অবহিত হওয়া একান্তই কর্তব্য। অপ্রমাদ মৃত্যুর পদ এবং অপ্রমাদই অমৃতের পদ। অতীতের অগণিত জন্ম-জন্মান্তরের সঞ্চিত কুশল প্রভাবে ইহকালে সর্দ্ধমের ছায়ায় দুর্লভ মানব জীবন লাভ করেছি। মানব জীবন লাভ করা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার। মানুষের জীবন বড়ই মূল্যবান। তার চেয়ে মূল্যবান সময়। তাই বৃথা সময় নষ্ট করা কারো উচিত নয়। জগতে মানবের অসাধ্য কিছুই নাই। মানব ইচ্ছা করিলে রাজাধিরাজ এমনকি জগতের একান্ত দুর্লভ সম্যক সম্তুদ্ধত্ব তাহার আওতাধীন। আর যদি অধোগতির চরমসীমা লাভের ইচ্ছা করে তবে একত্রিশ লোকভূমির সর্বনিম্নতর অবীচি নরকও প্রাপ্ত হইতে পারে। প্রাণীমাত্রই কর্মাধীন, কর্মই একমাত্র স্বকীয়। বিনয় শব্দের অর্থ নিয়ম নীতি বা শৃঙ্খলা। এই জীবজগত্ নিয়ম-শৃঙ্খলায় নিয়ন্ত্রিত। এর মধ্যে যদি কোনো প্রকার ব্যতিক্রম হয়, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নিয়ম নীতি বা শৃঙ্খলার উপকারিতা অত্যধিক। অনিয়ম দুর্নীতি উচ্ছৃঙ্খলতা প্রমত্ততা অসংযম দুঃশীলতা আলস্য পরায়ণতা প্রভৃতি মানব জীবনের উন্নতির অন্তরায় হয়। অপর পক্ষে নিয়ম নীতি শৃঙ্খলা অপ্রমত্ত সংযম উদ্যম উত্সাহ ত্যাগ সমাধি প্রজ্ঞা প্রভৃতি সর্বপ্রকার উন্নতির মূল।

ধর্মপদের অর্থ পূণ্যের পথ, ধর্মের পথ, সত্যের পথ, নির্বাণ লাভের পথ ও দুঃখমুক্তির পন্থা বলা যেতে পারে। কায়িক, বাচনিক ও মানসিক সংযম, ইন্দ্রিয় সংযম, অকুশল চিন্তা ত্যাগ, কুশল চিন্তা, দান শীল, ভাবনা, মৈত্রী করুণা মুদিতা উপেক্ষা ভাবনা, ত্রিরত্নের শ্রদ্ধা ও শরণ, চতুরার্য সত্য, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ, অনিত্য দুঃখ ও অনাত্ম ভাবনা, লোভ দ্বেষ ও মোহদি তৃষ্ণা ক্ষয় অহিংসা, চিত্ত বিশুদ্ধ বুদ্ধবর্ণিত এই নীতিবাক্য যদি আমরা পালন করি তাহলে নির্বাণ সাক্ষাত্ করতে পারব। বুদ্ধের এই উপদেশবলি মানব জীবন গঠনের পরম সহায়ক। ধর্মপদে বলা হয়েছে চিত্তের উর্ধ্বগতি ও নিম্নগতির কথা। দোষযুক্ত মনে কোনো কাজ করলে বা করালে শকটবাহী পশুর অনুগামী শকটের মতো দুঃখ তার অনুসরণ করে আর কুশল চিত্তে কোনো কাজ করলে ও করালে অবিচ্ছিন্ন ছায়ায় মতো সুখ মানুষের অনুগামী হয়। অপ্রমাদ (অপ্রমত্ত চিত্ত) হলো বুদ্ধের সমস্ত শিক্ষার ভিত্তি ও মূলনীতি। অপ্রমাদ নির্বাণের পথ আর প্রমাদ নরকের পথ। প্রত্যেকের নির্বাণ লাভের জন্য উদ্যম ও অপ্রমাদ অত্যাবশ্যক—ইহাই ভগবান বুদ্ধের শেষ বাণী। আমার পুত্র, আমার ধন—এসব চিন্তা করে অজ্ঞ লোকেরা দুঃখ ডেকে আনে। সে নিজেরই যখন তার নিজের নয় তখন পুত্র বা ধন কী করে তার নিজের হবে। আত্ম বর্গে বলা হয়েছে—পাপ করলে লোক নিজেই কষ্ট পায় আর পাপ না করলে নিজেই পবিত্র থাকে। শুদ্ধি বা অশুদ্ধি নিজেরই সৃষ্টি, একজন অপরজনকে বিশুদ্ধ করতে পারে না।

বৌদ্ধ দর্শনে স্মৃতিভাবনা জীবন গঠনে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে; প্রজ্ঞা, স্মৃতি, শ্রদ্ধা এই তিনটি চৈতাসিক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। স্মৃতি চৈতাসিক নাম দৌবারিক সদৃশ। জীবনের ভালোমন্দ বিচারে স্মৃতির ক্ষমতা অপরিসীম। স্মৃতি কুশল অবস্থাকে সর্বদা জাগ্রত রাখে, অকুশল চিত্তোত্পত্তিতে বাধা সৃষ্টি করে, চিত্তকে কুশলে নিযুক্ত করে। স্মৃতি হিতকে গ্রহণ করে, অহিতকে বর্জন করে। তাই স্মৃতির অপর নাম হলো অপ্রমাদ। ভগবান বুদ্ধ স্মৃতির অনেক প্রশংসা করেছেন—স্মৃতি এমন জিনিস যা না হলে কোনো কাজই সিদ্ধ হয় না। স্মৃতিকে সর্বসিদ্ধিদাতা বলে অভিহিত করি। ছিদ্রযুক্ত কলসির মধ্যে যেমন জল থাকে না, তেমনি স্মৃতিহীন চিত্তের মধ্যে শ্রদ্ধাশীল ও ভাবনাময় প্রজ্ঞা অবস্থান করে না।

বর্তমান হিংসার উন্মত্ত বিশ্বে ধর্মপদের মহান সাম্য মৈত্রীর অহিংসার বাণীতে জগত্ শান্তিময় হোক, এটাই ঐকান্তিক কাম্য।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!