যারা শ্রীলংকায় চীনা কর্মকাণ্ডের ধরন সম্পর্কে অবগত, নতুন পদক্ষেপ হিসেবে মোটরওয়ে নির্মাণের জন্য দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে বেইজিংয়ের ১.১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার বিষয়টিতে তারা খুব একটা অবাক হবেন না।
এটা হলো ‘বৌদ্ধ কূটনীতি’র সাম্প্রতিক বহিপ্রকাশ মাত্র। শ্রীলংকার মতো বৌদ্ধপ্রধান দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তারের জন্য বৌদ্ধ ধর্মকে স্বাগত জানানোর যে নীতি রয়েছে চীন ও ভারতের, তাকেই ‘বৌদ্ধ কূটনীতি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন কিছু বিশ্লেষক।
বর্তমান শ্রীলংকা সরকার ২০১৫ সালে ক্ষমতাগ্রহণ করে। অনেকটা চীন-বিরোধী অবস্থান থেকেই ক্ষমতায় আসে তারা। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে যে সব প্রকল্প নেয়া হয়েছিল শ্রীলংকায়, সেগুলো বাতিল করারও একটা প্রতিশ্রুতি ছিল তাদের।
কমিউনিটি অর্গানাইজার এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসার উপদেষ্টা অরুণ টাম্পিমুত্তু বলেন, চীনাদের হয়তো প্রকল্পগুলো ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া লাগতো। কিন্তু তারা চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
টাম্বিমুত্তু বলেন, “সমস্ত চুক্তি নতুন করে দর কষাকষি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা এবং সেখানে লেগে থাকতে চেয়েছিল”।
ভারত মহাসাগরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের অধিকারী হওয়ায় বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে শ্রীলংকা। আর কলম্বোর নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি সম্পর্কে জানেন।
রিজিওনাল সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইন শ্রীলংকার ভিজিটিং গবেষক জ্যাক গুডম্যান বলেন, “শ্রীলংকায় চীনের প্রভাব বাড়ছে কিন্তু এই সম্পর্কটাকে শ্রীলংকা যেদিকে নিতে চাচ্ছে, সেটি এড়িয়ে গেলে চলবে না”।
চীন সবসময়ই শ্রীলংকাকে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে মতবিরোধ হলেও এই সমর্থনের ব্যত্যয় ঘটেনি। এই প্রকল্পগুলোর কারণে শ্রীলংকার ঋণ বেড়ে বর্তমানে ৪৭ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে শ্রীলংকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হয়ে উঠেছে চীন। টামবিমুত্তু বলেন, কলম্বো যখন রাজাপাকসাকে অস্ত্র ও কূটনীতিক পথে উভয়ভাবেই সহায়তা দিয়েছিল তামিল টাইগারদের পরাজিত করার জন্য, তখন শ্রীলংকার সার্বভৌমত্ব প্রায় হারাতে বসেছিল। চীনই সে সময় শ্রীলংকার সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে সহায়তা করেছিল।
রাজাপাকসার নিজস্ব কূটনীতিকরা অস্ত্রের জন্য চীনের মুখাপেক্ষি হয়েছিল যখন শ্রীলংকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল অন্য সব অস্ত্র সরবরাহকারী রাষ্ট্রগুলো।
চীনের বৌদ্ধ কূটনীতি তাদের নিজেদের ইতিহাসের সাথে খানিকটা সাংঘর্ষিক। ষাট ও সত্তরের দশকে কমিউনিস্ট পার্টি কার্যত চীনে শত শত বৌদ্ধ স্থাপনা ধ্বংস করেছিল।
কিন্তু সে সময়টা এখন অতীত। সম্প্রতি বাওজিতে স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ সম্মেলনের আয়োজন করে চীন। বুদ্ধের আঙ্গুলের একটি অংশ এই বাওজিতে রয়েছে বলে মনে করা হয়।
এগুলো সবই চীনের কুশলী কিন্তু ইতিবাচক কূটনৈতিক কৌশল যেগুলো এশিয়ান দেশগুলোর জন্য তারা গ্রহণ করেছে।
কিন্তু সবসময় এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব ছিল না। কিন্তু আমরা এখন ভিন্ন সময়ে বাস করছি এবং ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর থেকে শ্রীলংকায় চীনের প্রভাব বাড়তে শুরু করেছে।