1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন

বুদ্ধের সাথে এক বিকাল

প্রতিবেদক
  • সময় বৃহস্পতিবার, ৩১ মে, ২০১৮
  • ১২৩৯ পঠিত

মো.ইয়াকুব আলী, অস্ট্রেলিয়া থেকে,
আমাদের শৈশবের শুক্রবার দিনগুলো ছিলো বাড়তি আনন্দের। তখন বিটিভিতে মজার মজার আয়োজন থাকতো।

সকালে বিভিন্নরকমের অনুষ্ঠান শেষে বিকালে বিটিভিতে অনুষ্ঠান শুরু হতো পবিত্র কোরান পাঠের মাধ্যমে। এরপর গেরুয়া পোশাক পরা এক ভদ্রলোক ত্রিপিটক পাঠ করতেন। তাঁর নাম আজ আর মনে করতে পারছি না।

ত্রিপিটক পাঠের শুরুটা ছিল এমন- ‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, ধম্মং শরণং গচ্ছামি, সংঘং শরণং গচ্ছামি’। আর শেষটা ছিল- ‘সব্বে সত্তা সুখীতা ভবন্তু’। প্রতি শুক্রবারে শুনতে শুনতে এই কথাগুলো আমাদের এমনভাবে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল যে এখনও মনে আছে।

অস্ট্রেলিয়াতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ খুবই সুন্দরভাবে সকলের সাথে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে চলেছে এবং তার মধ্যে বৌদ্ধরাও আছেন স্বমহিমায়। বাচ্চাদের স্কুল ছুটির একেবারে শেষের দিকে একদিন বিকালে আমার মেয়ের বান্ধবী জেইনার মা বললেন, “আমাদের বাসার খুব কাছেই একটা বৌদ্ধ মন্দির আছে, চলেন সবাই মিলে বেড়িয়ে আসি।”

যেহেতু আমাদের বাসা থেকে মাত্র গাড়িতে পাঁচ মিনিটের পথ, তাই কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই আমরা রাজি হয়ে গেলাম। তবে সিডনি শহর থেকে যেতে চাইলে প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগবে।
লুমিয়া সাবার্বে অবস্থিত এই বৌদ্ধ মন্দিরের নাম ‘মাহামাকুত বুদ্ধিস্ট টেম্পল’। মন্দিরে ঢোকার মুখেই গেটের পাশে মন্দিরের নাম ও ঠিকানা লেখা একটা নামফলক আপনাদেরকে স্বাগত জানাবে।

একটু ভেতরে এগুলেই রয়েছে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। গাড়ি পার্ক করে আমরা দুই পরিবারের মোট আটজন সদস্য হৈ হৈ করে নেমে পড়লাম পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে। ঢোকার মুখেই রয়েছে একটা প্রার্থনা মন্দির।

প্রার্থনা মন্দিরটার বিশেষত্ব হচ্ছে- এর ভেতরের দেয়ালে চারপাশে অনেকগুলো বড় আয়না সেট করা। তাই ভেতরের জায়গাটা অত্যন্ত ছোট হওয়া সত্ত্বেও অনেক বড় মনে হবে। তাহিয়া আর জেইনা ভেতরে ঢুকে গৌতম বুদ্ধের প্রার্থনার ভঙ্গিতে মাদুরে বসে পড়লো। আমরা ছবি তুলে নিলাম।

প্রার্থনা মন্দিরের সামনেই রয়েছে ঝাউয়ের সারি। এই ঝাউগাছগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে- এগুলো অনেক সুন্দর করে ছেটে পদ্ম কুঁড়ির আকৃতি দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে একগুচ্ছ বড় আকারের পদ্ম কুঁড়ি দুই সারিতে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রার্থনা মন্দিরের এক পাশে গাছের গোড়াগুলোকে কাঠ দিয়ে বাঁধিয়ে বসার জায়গা করা হয়েছে। এখানে বসলে মুহূর্তেই আপনার মনের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে একটা শীতল পরশ বয়ে যাবে।

অন্য পাশে আরও একটা প্রার্থনা মন্দির আছে। তার পাশ দিয়ে লাল ইটের রাস্তা ধরে এগুলে আপনি আরও মজার একটা জিনিস দেখতে পাবেন। এখানে সারিবদ্ধ ঝাউগাছগুলোর মাঝ বরাবর কেটে মন্দিরের দরজার আকৃতি দেওয়া হয়েছে।

আরও একটু সামনে এগুলেই আরও একটা বসার জায়গা। সেখানেও গাছের গোড়াগুলোকে বাঁধিয়ে সেখানে ছোট ছোট পাথরের টুকরার উপরে স্থাপন করা হয়েছে গৌতম বুদ্ধের ছোট ছোট সব মূর্তি। তার পাশেই রয়েছে একটা সোনালি বর্ণের মাঝারি আকৃতির ড্রাগনের মূর্তি। ঠিক তার সামনেই কয়েকটা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলেই আরও একটা প্রার্থনা মন্দির। সেখানে গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের মূর্তি।

মূর্তিগুলো দেখতে খুবই দৃষ্টিনন্দন। কোনোটাতে বুদ্ধ বসে আছে প্রার্থনার ভঙ্গিতে, আবার কোনোটাতে দাঁড়িয়ে আছেন। আর সব শেষেরটাতে উনার সেই বিখ্যাত শুয়ে থাকার ভঙ্গি। এর ঠিক কোণার একটা জায়গায় রয়েছে একটা ছোট ঘর, যেটা দেখলে চীনের মন্দিরগুলোর কথা মনে পড়ে যাবে নিশ্চিত।
সেখান থেকে আরও একটু ভেতরের দিকে এগুলেই রয়েছে একটা ছোট জঙ্গলের মতো জায়গা। কিন্তু ভালো করে লক্ষ করলে বোঝা যাবে, এটা আসলে জঙ্গল নয়, একটা সুন্দর বাগান। যেখানে বাঁশ থেকে শুরু করে কলা গাছ, মরিচের গাছ, টমেটোর গাছ আর হরেক রমকের ফুলের গাছ।

আমরা সবচেয়ে খুশি হয়েছিলাম অনেকদিন পর জাম্বুরা ভর্তি জাম্বুরার গাছ দেখতে পেয়ে। মন্দিরের জায়গাটা এত বেশি পরিপাটি আর পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে যে আপনাকে আবারও এখানে আসতে বাধ্য করবে।

আমাদের ঘোরাঘুরি শেষ হলে আমরা পাশের খোলা মাঠের মধ্যে দিয়ে ফিরে আসতে শুরু করলাম। এই খোলা জায়গাটা আসলে বিশাল কার পার্কিং। কিন্তু আজ গাড়ির তেমন আনাগোনা না থাকাতে বাচ্চারা দৌড়ঝাঁপ করে সারা মাঠে খেলে বেড়াচ্ছিল।
হঠাৎ করে পরিকল্পনা করেই আজ আমরা গিয়েছিলাম, তাই আবারও আমাদের যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেললাম। পরবর্তীতে আমরা যখন যাব, সাথে করে ফ্লাস্কে চা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। তখন আমরা গাছের গোড়ার কাঠের পাটাতনে বসে নির্ভার হয়ে চা পান করতে পারব।

শহুরে কর্মব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে উঠলে আপনি যেতে পারেন লুমিয়ার মাহামাকুত বুদ্ধিস্ট টেম্পলে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও জীবনের সকল কর্মব্যস্ততা ভুলে আপনি হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির মাঝে। আর মনের মধ্যে সঞ্চয় করে নেবেন কিছু অমূল্য স্মৃতি।

বাচ্চাদেরকে সাথে করে নিয়ে গেলে একই জায়গা থেকে অনেকগুলো গাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবেন। তাই আর দেরি কেন, ঘণ্টাখানেক সময় হাতে নিয়ে ঘুরে আসুন গৌতম বুদ্ধের সংস্পর্শ থেকে।
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী

মেইল: yaqub_buet@yahoo.com

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!