ট্যাং সাম্রাজ্যের (৬১৮ – ৯০৭ খৃস্টাব্দ) আমলে তৈরি এই বৃহদাকার বৌদ্ধ মূর্তিটির নাম লিসান ডাফো । মাউন্ট এমি পর্বতটি চীনের সিচুয়ান প্রদেশের লিসান শহরের নিকটেই অবস্থিত।
এই পর্বতের চূড়া কেটেই তৈরি করা হয়েছে এই বিশাল বৌদ্ধমূর্তিটি। যার পায়ের কাছে প্রবাহিত হচ্ছে কুইঙ্গি নদী। ৭১৩ খৃষ্টাব্দে হেয়তং নামে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মূর্তিটির তৈরি শুরু করেন।
কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরপরই এই মূর্তি তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৭০ বছর পর এক সেনাধ্যক্ষের বদান্যতায় এই মূর্তি তৈরির কাজ পুনরায় শুরু হয়। ৮০৩ সালে এই মূর্তি নির্মাণ শেষ হয়।
৭১ মিটার ( ২৩৩ ফুট) উচ্চতার এই বৌদ্ধ মূর্তিটির নাম ‘’মৈত্রেয়” । বিশ্রামরত অবস্থায় মহামতি বুদ্ধের হাত দুটো তাঁর হাঁটুর উপর বসানো। যাঁর কাঁধের চওড়া ২৮ মিটার এবং পায়ের পাতার আঙ্গুলের সবচেয়ে ছোট নখটিই এত বড় যে সেখানে একজন মানুষ এঁটে যাবে।
এই মূর্তি নির্মাণের সময় যে সকল পাথর খোদাই করে সরানো হয়েছিলো তা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিলো। বর্তমানে তা মূর্তির পাদদেশে নদীর তীরে এনে রাখা হয়েছে যাতে নদীতে জাহাজ চলার সময় পানির ধাক্কায় এই মূর্তির ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
লিসানে বিরাটাকায় বুদ্ধ মুর্তি নামে পরিচিত এই মূর্তিটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ খোদাইকৃত বৌদ্ধমূর্তি এবং তদুপরি প্রাক-আধুনিক সর্বোচ্চ উচ্চতার মূর্তি। স্থানীয়রা বলেন-এই পর্বতই বৌদ্ধ এবং বৌদ্ধই পর্বত।
Leshan-Giant-Buddha-9এমি পর্বত এমনিতেই দর্শনীয় স্থান এর উপর লিসানে বিরাটাকায় বুদ্ধ মুর্তি এই অঞ্চলকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা। ১৯৯৬ সালে ইউনেস্কো পুরো এলাকাকে বিশ্ব ঐতিহ্য সাইটে অন্তর্ভুক্ত করে।
২০০৮ সালে ১২ই মে এই অঞ্চলে সঙ্ঘটিত ৮.০ মাত্রার ভুমিকম্প কোন ক্ষতি করতে পারেনি ধ্যানরত এই বৌদ্ধমূর্তির। পৃথিবীর ইতিহাসে ২১তম ভয়াবহ এই ভুমিকম্পে গৃহহারা হয়েছিলো ৪৮ লক্ষ মানুষ ।
মৃত্যুবরণ করেছিলেন ৬৯১৯৭ জন যেখানে শুধু সিচুয়ান প্রদেশের লোকই ছিল ৬৮৬৩৬ জন। আহতের সংখ্যা ৩,৭৪,১৭৬ জন এবং নিখোঁজ হয়েছিলো ১৮,২২২ জন।