শুধুমাত্র দখলবাজদের কারনে কুয়াকাটার রাখাইনদের ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি গৌতম বুদ্ধের শয়নরত বুদ্ধমূর্তিটিসহ বিহার এলাকা এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। জীর্ণদশায় পরিণত হয়েছে দেড় শ’ বছরেরও বেশি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তিটি।
এক কথায় বিধ্বস্ত দশা। সরকারি অর্থায়নে এই বুদ্ধ মূর্তিটি সংরক্ষণসহ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও দখলদারসহ নানা জটিলতায় তা আর হয়নি। এখন বৌদ্ধ বিহার এলাকার জমিজমা দখল কওে করা হয়েছে স্থাপনা। ভেঙ্গে খসে পড়ছে প্রাচীন পুরাকীর্তিটি। কুয়াকাটার প্রাচীন এই পুরাকীর্তিস্থলের জমি এখন বেদখল হচ্ছে। স্থানীয় রাখাইনরা কুয়াকাটা পুরাতন বৌদ্ধ বিহার নামের এটি ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট সীমানা নির্ধারনের পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন।
বৌদ্ধ বিহার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও নয়াপাড়া রাখাইন পল্লীর বৌদ্ধভিক্ষু উপায়াচুন্দ্রা মহাথেরো ওই আবেদনটি করেন। তিনি জানান, এখনও লতাচাপলী মৌজার এসএ ৬৫৯ নম্বর খতিয়ানের ৯৯ শতক জমি রাখাইন পাড়ার মগগণের (রাখাইনদের) পক্ষে ফুরু চাইয়ের নামে সংরক্ষিত রয়েছে। যার দাগ নম্বর ৫৩৩৪/৫৪৮১ ও ৫৩৩৫/৫৪৯৩। কুয়াকাটা পৌর এলাকায় যেখানে পৌরভবন নির্মাণ করা হচ্ছে তার দক্ষিণপাশে জীর্ণদশায় পুরাতন বৌদ্ধবিহার এলাকার অবস্থান। গোটা তিনেক মঠ দৃশ্যমান রয়েছে। শয়নরত গৌতম বুদ্ধের মূর্তিটির একদিকের পলেস্তরা খসে পড়ছে। স্থানীয় লোকজন বিহার এলাকায় খুটা জেলেদের নৌকা নির্মানশালা বানিয়ে রেখেছে। প্রায় দুই বছর আগে প্রাচীন তালগাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। উত্তর পাশের জমি দখল করে বেড়া দিয়ে ঘরবাড়ি করা হয়েছে। কেউ রাখাইনদের কাছ থেকে হস্তান্তরযোগ্য নয় তারপরও ক্রেতাসুত্রে দলিল করে কিছু জমি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে এক রাখাইন জড়িত রয়েছে বলেও জানা গেছে। নইলে ঠাকুরবাড়ি, দেবালয় বুদ্ধমন্দির লেখা থাকলেও দখলদারদের দৌরাত্মে সব নিয়মকানুন উপেক্ষিত হচ্ছে। আর কুয়াকাটার এই প্রাচীন পুরনো বৌদ্ধ বিহারটি এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখনও কুয়াকাটায় আগত পর্যটক-দর্শনার্থীরা এই বিহার এলাকা দর্শন করেন। এসব পুরাকীর্তি সংরক্ষণে তাদের পরামর্শ রয়েছে। রাখাইনদের দাবি প্রাচীন বৌদ্ধ স্তম্ভ ছাড়াও পচিশ ফুট লম্বা শায়িত গৌতমবুদ্ধের প্রতিকৃতি যা ইট-পাথর দিয়ে ঢাকা রয়েছে। বড় আকারের ঢালাইকৃত বৌদ্ধ প্রতিকৃতির আসন ও পুরনো বিহার যা ধংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই পুরনো বৌদ্ধ বিহার রক্ষণাবেক্ষন, মেরামতসহ এলাকাটি সংরক্ষণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সীমানা জটিলতা নিরসন না করায় প্রাচীন পুরাকীর্তিটি সংরক্ষণে কোন কাজ করা যায়নি বলে রাখাইন নেতৃবৃন্দের দাবি। এটি এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। যায়গা দখল করে নেয়া হচ্ছে।