প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কক্সবাজারের রামুর উসাই ছেন রাখাইন বৌদ্ধ বিহার (বড় ক্যাং) এর অধ্যক্ষ উ.পাঞঞাদীপা মহাথের’র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, উ.পাঞঞাদীপা মহাথের’র নম্রতা, ভদ্রতা, ধৈর্যশীলতা, আমাদেরকে আজীবন স্মরণ করিয়ে দেবে। তিনি সদালাপি ও অতিথি পরায়ণ মানুষ ছিলেন। ধর্মের প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিলো।
শুক্রবার দু’দিনব্যাপী উ.পাঞঞাদীপা মহাথের’র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের সমাপনি দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রামু-কক্সবাজারের সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে প্রয়াত উ.পাঞঞাদীপা মহাথের’র প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এমপি কমল আরও বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমারসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হোক না কেন, আমাদের বাংলাদেশে বিশেষ করে কক্সবাজার-রামুতে আমরা সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে দেবোনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সকলে ভাই ভাই হিসেবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করবো। প্রতিটি ধর্মকে আমরা প্রত্যেকেই সম্মান জানাবো। মনে রাখতে হবে, অন্যের ধর্মকে যারা অসম্মান করে তারা নিজের ধর্মকেও অসম্মান জানাতে পারে। আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন রক্তের বিনিময়ে হলেও আমাদের সম্প্রীতি আমরা রক্ষা করবো।
উ.পাঞঞাদীপা মহাথেরকে একজন পরোপকারি, হিংসা-বিদ্বেষহীন বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে উল্লেখ করে এমপি কমল বলেন, তিনি বহুজনের হিতের ও সুখের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন। তাঁর আদর্শের স্মৃতিগুলো আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ, একুশে পদকে ভুষিত, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র সভাপতিত্বে ও উদ্বোধনে অনুষ্ঠিত আয়োজনে প্রধান জ্ঞাতি ছিলেন, রামু দক্ষিণ মিঠাছড়ি পানেরছড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুচারিত মহাথের।
অনুষ্ঠানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় গুরু উ. আছাবা মহাথের, ভারতের বম্বের অজান্তা বৌদ্ধ বিহারের প্রধান ধর্মরত্ন মহাথের, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহরের আবাসিক প্রধান প্রিয়রত্ন মহাথের ধর্মদেশনা করেন।
এতে রামু বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র ও ভূবন শান্তি একশ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মুর্তি’র প্রতিষ্ঠাতা করুনাশ্রী থের, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক শীলপ্রিয় থেরসহ শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু-শ্রামন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রামু উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক চেয়ারম্যান, কক্সবাজার জেলা আ’লীগের মহিলা সম্পাদক মুসরাত জাহান মুন্নি।
দু’দিন ব্যাপী উ.পাঞঞাদীপা মহাথের’র অন্ত্যেষ্ঠিক্রিয়া অনুষ্ঠানের কর্মসূচির মধ্যে ছিলো, ১০ মে ধর্মসভা, পঞ্চশীল গ্রহণ, উৎসর্গ, ভদন্ত উ.পাঞঞাদীপা মহাথের’র শবদেহ চেং ক্যাং থেকে স্থানান্তর, দোলনা, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন, ভিক্ষু সংঘের পিন্ডদান, ও আলং নৃত্য। ১১ মে দোলনা সংগীত, নৃত্য পরিবেশন, আলং নৃত্য ভিক্ষু সংঘের পিন্ডদান, আলং নৃত্য, আলোচনা সভা।
সন্ধ্যায় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও আকর্ষণীয় রকেট বাজির মাধ্যমে প্রয়াত ভদন্ত উ.পাঞঞাদীপা মহাথের’র শবদেহ আলং এ অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে দু’দিন ব্যাপী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
দু’দিন ব্যাপী অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান উপলক্ষে রামু হাইটুপী উসাই ছেন রাখাইন বৌদ্ধ বিহার (বড় ক্যাং) এর পূর্ব পার্শ্বে বাঁকখালী নদীর চরের অনুষ্ঠানস্থলে স্থাপন করা হয় বিশাল আকারের দুটি সুসজ্জিত আলং। রঙিন কাগজ, বাঁশ, বেত দিয়ে তৈরী রেঙ্গুনী বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে তৈরী আলং এর একটিতে রাখা হয় প্রয়াত ভদন্ত উ.পাঞঞাদীপা মহাথের’র শবদেহ। শবদেহকে ঘিরে ছিলো রাখাইন তরুণীদের দলীয় বৌদ্ধ সংগীত ও নৃত্য পরিবেশ।
অন্যদিকে, তরুণ-তরুণীদের পৃথক আলং নৃত্যদল। একসঙ্গে দুটি করে আলং নৃত পরিবেশন ছিলো পুরো অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ।
আলং নৃত্যদলে রামু, কক্সবাজার সদর, নাইক্ষ্যংছড়ি, টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকার আলং নৃত্যদল অংশ নেয়।