নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় শিল্পী বরুণ বিকাশ বড়ুয়া আর নেই। চট্রগ্রাম মেডিক্যাল এর ১৩ নং ওয়ার্ডের ১২ নং কেবিনে আজ দুপুর ১টায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। অনিচ্চা বথ সাংখারা……..
তাঁর মরদেহ কিছুক্ষণের মধ্যেই নন্দন কানন বৌদ্ধ মন্দিরে আনা হবে বলে সুত্র জানা যায়।
নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় শিল্পী বরুণ বিকাশ বড়ুয়া। চট্টগ্রাম বেতারের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রও দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। সময়ের ফেরে তিনি হয়েছিলেন মোমবাতি বিক্রেতা। যে হাত দুটি দিয়ে একসময় হারমোনিয়ামে সুর তুলতেন, তার একটি আজ অচল। শুধু হাত নয়, শরীরের এক পাশও অবশ। তার পরও জীবিকার টানে এক হাতে বৌদ্ধবিহারের সামনে টেবিল পেতে বিক্রি করছিলেন মোমবাতি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন বরুণ বিকাশ বড়ুয়া। ২০০৬ সালে স্ট্রোক করলে শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায়।
অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত শিল্পী বরুণ বিকাশ নিউয়েরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম বেতারে গান গাওয়ার মধ্য দিয়েই তিনি সংগীতজগতে পরিচিতি পান। এর আগে পাড়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতেন।
‘একদিন পতেঙ্গার একটা মঞ্চে হেমন্ত মুখার্জির ‘‘কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে’’ গানটি গেয়েছিলাম। ওস্তাদ মোহন লাল দাশ সংগীত নিকেতনের বার্ষিক অনুষ্ঠান ছিল সেদিন। বেতারের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন প্রধান অতিথি। তিনি গান শুনে বরুণ বড়ুয়াকে পর পর চারবার ওই গানটি গাইতে বলেন। পরবর্তী সময়ে তিনিই বেতারে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন তাকে।’
চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন ২০০০ সালে ‘এসো হে বৈশাখ’ শিরোনামে একটা অনুষ্ঠানে। মনোজ সেনগুপ্ত তখন চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরই তত্ত্বাবধানে শিল্পী প্রবাল চৌধুরীসহ আরও অনেকের সঙ্গে তিনি সংগীত পরিবেশন করেন। এর পর থেকে চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র ও বেতারে নিয়মিতই গাইতেন।
শুধু মঞ্চ বা বেতার-টেলিভিশনের মধ্যেই তিনি আবদ্ধ ছিলেন না। ঝংকার রেকর্ডিং ২০০২ সালে ‘তুমি আজ কত দূরে’ এবং ২০০৪ সালে ‘এমনই শারদ রাতে’ শিরোনামে তাঁর একক গানের সিডি বের করে। জগন্ময় মিত্রের গাওয়া বহু বিখ্যাত গান তিনি আবার নতুন করে গেয়েছেন। তবে অপ্রচলিত হলেও তাঁর প্রথম গানের সিডি ছিল ধর্মীয় গানের পরিবেশনায় ‘ভগবান তুমি চির সত্য’। তার সহধর্মিণী সুপ্রিয়া বড়ুয়ার উৎসাহই গানের সিডি বের করেন।
প্রকৌশলী সাথী বড়ুয়ার হাতেই সংগীতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। পরবর্তী জীবনে সংগীত শিক্ষায় অনেক ওস্তাদের সান্নিধ্য তিনি পেয়েছেন। সংগীতজীবনে প্রবেশের পথে তিনি তার মামা সুবিনয় বড়ুয়ার কাছ থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত সংস্কৃতপ্রেমী মানুষ।