তবে দিনটির সাথে জড়িয়ে আছে বিশেষ তিনটি বিষয়। গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং পরিনির্বাণ লাভ এই তিনটি ঘটে একই পূর্ণিমা তিথিতে। তাই এই তিথিকে কেন্দ্র করে বুদ্ধ পূজা, সূত্রপাঠ, সমবেত প্রার্থনা প্রভৃতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা পালন করা হয়।
মানবতা ও জীব সেবার সাথে সম্পর্কিত একটি অন্যতম নাম, গৌতম বুদ্ধ। যিনি বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তবে কেবল বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক হিসেবে নন, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি একটি আদর্শ।
বৌদ্ধধর্ম অনুসারে, আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত কপিলাবস্তু নামক রাজ্যের শাক্য বংশে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন।
তার প্রকৃত নাম ছিল সিদ্ধার্থ। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত, দয়ালু ও ক্ষমাশীল প্রকৃতির।
‘বোধি’ শব্দের অর্থ জ্ঞান, আর বিশেষ জ্ঞান অর্জনকারীকে বলা হয় ‘বুদ্ধ’। যারা জন্ম-জন্মান্তরে বোধিজ্ঞান লাভের জন্য সাধনা করতে সক্ষম হন, তাদের বলা হয় বোধিসত্ত্ব। ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে, সিদ্ধার্থ বোধিদত্ত্বারূপে পাঁচশ ৫০বার জন্মগ্রহণ করেন এবং বুদ্ধত্ব অর্জনে সফল হন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি গৌতম বুদ্ধের পরিচয় লাভ করেন।
কপিলাবস্তু রাজ্যে কৃষিভিত্তিক উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। সে অনুষ্ঠানে ভূমি কর্ষণের সময় পোকা-মাকড়, অনুজীব মারা যেতে দেখে সিদ্ধার্থ ব্যথিত হন। জীবের দুঃখ, দুর্দশার কথা ভেবে সকলের শান্তি কামনায় বোধি বৃক্ষের নিচে গভীর ধ্যানে মগ্ন হন। এমনকি একটি হাঁসের জীবনের বিনিময়ে তিনি রাজ্য দান করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। এমন অনেক ঘটনার উল্লেখ আছে ‘জাতক’ এ। যা গৌতম বুদ্ধের জীবন বৃত্তান্ত এবং শিক্ষা, উপদেশ নিয়ে রচিত।
গৌতম বুদ্ধের মানবসেবার চেতনা নিয়ে বৌদ্ধধর্ম। তার উদ্দেশ্য ছিল জাতি-ধর্মের ভেদাভেদ দূর করে সম্প্রীতি সৃষ্টি এবং শান্তির বাণী প্রচার করা। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘অহিংসা পরম ধর্ম’।
কোনো ধর্মমতই সাম্প্রদায়িকতা সমর্থন করে না। সব ধর্মেই বলা হয় অপরকে সহযোগিতা, পরমতসহিষ্ণুতা ও অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধার কথা। কারণ সকল ধর্মের উদ্দেশ্য একই। যা শুধু ধর্মীয় অনুভূতির দিক থেকে নয়, সামাজিক সম্প্রীতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আর একটা কথা আছে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। তাই কৃত্তিম ভেদাভেদ ও বৈষম্যের ঊর্ধ্বে সমাজে সকলকে মিলেমিশে বসবাস করার মানসিকতা পোষণ করা প্রয়োজন।