রণজিত্ পাল: ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দু মায়াবী অতীত, যা কালপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত এবং সাহিত্য চেতনারও এক অচ্ছেদ্য অঙ্গ| অতীত এক অর্থে মৃত নয়, বরং প্রাণবন্ত বর্তমানেরই এক ভিন্নমুখী ব্যাপ্তি অতীতের প্রাণস্পন্দন নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন; ‘ভারতবাসীর ঘরের লোক এত সত্য নহে, রাম, লক্ষণ, সীতা তাহার পক্ষে যত সত্য’; কিন্তু জ্যোতির্বিদ রাজেশ কোচ্ছার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনের সুবাদে এই অতি একান্ত আপনজন রামের সঙ্গে উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা কিংবা শ্রীলঙ্কা নয়, সুদুর আফঘানিস্তানের বিস্ময়কর সংযোগ লক্ষ্য করেছেন| এ থেকে স্পষ্ট য়ে প্রাচীন যুগে ভারতীয়ত্ত্বের সংজ্ঞা ছিল আরো প্রশস্ত|
রাম ও কৃষ্ণের পরবর্তী কালের মৃত্যুঞ্জয়ী মহামানব গৌতম বুদ্ধকেও খুজে পাওয়া যায় সেই আফঘানিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতেরই বৃত্তে, নেপাল কিংবা উত্তরপ্রদেশের পূর্বভাগে নয়| প্রাচীন ভারতের আরেক অবিসংবাদিত মহানায়ক চন্দ্রগুপ্ত, কিন্তু তাঁর যে একটিও পুরানিদর্শন জানা নেই তা ভারতীয় ইতিহাসের কলঙ্ক যদিও এ নিয়ে রমীলা থাপার ও অন্যান্য ঐতিহাসিকেরা নিশ্চুপ | এই মহাপ্রমাদের মূলসূত্র স্যার উইলিয়াম জোনসের পাটনায় তথাকথিত পালিবোথ্রা আবিস্কার| বর্তমান লেখকের মতে আফঘানিস্তানে পাওয়া লঘমান আরামাইক লেখদুটি চন্দ্রগুপ্তেরই নিদর্শন, অশোকের নয়|
বৌদ্ধধর্ম বৈদিক ধর্মেরই এক বিবর্তিত রূপ এবং ঋকবেদের পশ্চাদভুমি ও গৌতম বুদ্ধের জন্মভুমি সম্ভবতঃ ছিল একই অঞ্চলে | ঋকবেদের প্রধান নদী সরস্বতী সিন্ধু অঞ্চলের এবং এই গ্রন্থে আফঘা-নিস্তানের বহু নদনদী ও প্রাচীন জাতির বর্ণনা আছে যা ইঙ্গিত করে যে আদিযুগে আফঘানরা বৃহত্তর ভারতের পরিসীমায় ছিল| ভাষাতত্ত্ব ও সিন্ধু লিপি থেকে অনুমান হয় যে ভারতের উত্তর-পশ্চিমে হরপ্পার ঋকবেদের সভ্যতার সূচনা হয (আদি বৈদিক যুগ, ~খ্রিঃ.পূঃ.২৩০০) ও পরবর্তীকালে (~খ্রিঃ.পূঃ. ১৫০০) বর্তমান রূপ ধারণ করে |
বৌদ্ধধর্মের বিশ্বাত্মবোধ ও মৈত্রীর বার্তা ভারতীয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ| প্রকৃতপক্ষে বৌদ্ধযুগ ছিল ভারতের স্বর্ণযুগ যখন শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, বানিজ্য ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব প্রসার হয, কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের উদ্ভব ও ভারতে এর প্রভাব হ্রাস নিয়ে বহু সংশয় আছে| শতবর্ষব্যাপী গবেষণা সত্তেও লুম্বিনী অথবা কপিলবস্তুর অবস্থান এখনো অজ্ঞাত| রমীলা থাপার ও অন্যান্যেরা লুম্বিনী নেপালে ছিল লিথলেও এর প্রত্নতাত্ত্বিক পটভুমি অত্যন্ত সন্দেহজনক| বৌদ্ধধর্ম বিশ্ব ইতিহাসেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং বিশিষ্ট ঐতিহাসিক এ. কে. নারায়নের মতে বৌদ্ধ ইতিহাসের সংশোধন অত্যাবশ্যক| কপিলবস্তু নেপালের তিলৌরাকোটে না ভারতের পিপরাওয়ায় ছিল এ নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে কিন্তু প্রকৃত সত্য এখনো অধরা| ভিনসেন্ট স্মিথ হেয়ালী করে লেখেন যে কপিলবস্তুর অবস্থান অনেক বত্সর পরেও অজ্ঞাত থেকে যাবে, কিন্তু এই অনর্থদর্শী ভবিষ্যদবানী নেপালী প্রত্নতত্ত্বের অনাচারের প্রতিফলন এবং পুরোপুরি অগ্রহণীয়|
বর্তমান লেখক ইঙ্গিত করেন (১৯৯০খ্রী.) যে পারস্য ইতিহাসে বর্ণিত গোমাতাই হয়তো ছিলেন প্রকৃত গৌতম বুদ্ধ যা থেকে অনুমান হয় যে নেপালের কাহিনীগুলি ডাহা মিথ্যা| অধিকন্তু গোমাতাই গৌতম বুদ্ধ হলে তাঁর কাল হয় খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ-পঞ্চম শতাব্দী, গমব্রিচ ও বেশার্টের তত্ত্ব অনুযায়ী খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম-চতুর্থ শতাব্দী নয় | আফঘানিস্তানের এক বিষ্ময়কর আবিস্কার একই দিকে সংকেত করে|
সম্প্রতি কাবুলের নিকটে (৩৫ কিঃ.মিঃ.) মেস্ আইনাকে অগনিত বৌদ্ধবিহার, বুদ্ধমুর্তি ও অন্যান্য বৌদ্ধ নিদর্শনের যুগান্তকারী আবিস্কার বিশ্বের পণ্ডিতমহলে বিশেষ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে কারণ আপাতদৃষ্টিতে এটি মনে হয় বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধকেন্দ্র| এটি ভারতীয় সীমান্ত (অধুনা পাকিস্তান) থেকে মাত্র ৩০ মাইল দুরে অবস্থিত যা এককালে মনে হয় ভারতেরই অভ্যন্তরে ছিল| এই আবিস্কারের সুদুরপ্রসারী প্রভাব হৃদয়ঙ্গম করতে হলে স্মরণ করতে হয় যে প্রাচীনকালে ভারতের পরিধি ছিল বিস্তীর্ণ; হিন্দুকুশ পর্বতমালার নাম থেকে বোঝা যায় যে বর্তমান ভারত-পাকিস্তান ছা়ডাও দক্ষিণপূর্ব ইরান, আফঘানিস্তান, এমণকি তুর্কমেনিস্তানও ভারত নামেই পরিচিত ছিল| খৃষ্টীয ইতিহাস প্রমাণ করে য়ে সীস্তানও একদা ভারতে ছিল|
মেস্ আইনাকের আয়তন প্রায় এক হাজার হেক্টর এবং এখানে যা পাওয়া গিয়াছে তা অভাবনীয়| বহু বৌদ্ধধাম, এক হাজা-রেরও বেশী মুর্তি, কাঠের শিল্পকীর্তি, ধর্ম-সম্বন্ধিত লিপি ও মুদ্রা পাওয়া গিয়াছে যার প্রকৃত মূল্যায়ন করা দুরুহ| এ ছাডাও পাওয়া যায় বহু কুষাণ যুগের স্বর্ণমুদ্রা, অলঙ্কার, মৃত্পাত্র ও প্রাচীন ব্রাহ্মীলেখ (খৃষ্টীয় ১ম শতাব্দী)যার সঙ্গে নেপালের তুলনা বাতুলতা | এ অঞ্চল ছিল খাইবার গিরিপথের নিকটে ও প্রাচীন সিল্ক রোডের সঙ্গে যুক্ত| খাইবার গিরিপথই ছিল প্রাচীন ভারতের সঙ্গে ইরান ও মধ্য-এশিয়ার যোগসূত্র| আফঘানিস্তানে বামিয়ান ও মেস আইনাকের সমতুল্য বৌদ্ধ-কেন্দ্র ছিল হাড্ডা যেখানে প্রায় এক হাজার বৌদ্ধস্তুপ ও ২৩ হাজারেরও বেশী গ্রীক-বৌদ্ধ পুরানিদর্শন পাওয়া যায়| নিকটবর্তী জালালাবাদ অঞ্চলে সবচেয়ে প্রাচীন ও মূল্যবান বৌদ্ধপূঁথী পাওয়া গিয়াছে |
তবে মুর্তি পাওয়া গেলেই তার ইতিহাস সম্বন্ধে সম্যক ধারনা করা যায়না, বিষয়টির গভীরে যাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু এই আবিস্কা-রের পটভুমি নিয়ে গেরার্ড ফুসমান ও অধিকাংশ পশ্চিমী পণ্ডিতদের ধারনা অস্পষ্ট| সম্প্রতি রামজন্মভুমি নিয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ অমর্ত্য সেন ভারতীয় ইতিহাসের অগণিত অসঙ্গতির জন্য ব্রিটিশ ভারতত্ত্বের গতানুগতিক ধারাকেই দায়ী করেছেন, কিন্তু গোডার গলদ যে জোনসের পাটনায় তথাকথিত পালিবোথ্রা আবিস্কার ও ফুয়েরারের জালিয়াতী এ নিয়ে ফুসমানের মত তিনিও নীরব |
মেস আইনাক পরিচিত ছিল এক বিশাল তামার খনি হিসাবে যা ২০০৯ সালে প্রায় ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে আফগান সরকার একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে ধাতব নিষ্কাশনের জন্য বরাত দেয় কিন্তু খনন করতে গিয়ে আকস্মিক ভাবে এক বিশাল বৌদ্ধবিহার গোচরে আসে | এর কাল বৌদ্ধযুগের থেকেও বহু প্রাচীন এবং জে. এম. কেনোয়্যারের ধারণা যে সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতার তামার যোগান দিত মেস আইনাক | প্রকৃতপক্ষে এই আবিস্কার শুধু আফঘানিস্তানের বৌদ্ধধর্ম নয়, গৌতম বুদ্ধের জন্মভুমি ও বৌদ্ধধর্মের উত্পত্তি সম্বন্ধেও আমাদের ধারনা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত করে| ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি. কে. সলটার নেপালের উল্লেখ না করেও সঠিক উপলব্ধি করেন যে এ আবিস্কারের পটভুমি শুধু আফঘানিস্তান নয়, সমগ্র বিশ্বের ইতিহাস| সংস্কৃত ভাষায় ‘ত্রপু’ শব্দের অর্থ ‘টিন’ তামার সঙ্গে যার মিশ্রনে সৃষ্টি হয় ব্রন্জ ধাতুসংকর যা ছিল ব্রন্জযুগের যাদুকাঠি| হতে পারে ত্রপুসই মেস আইনাকের প্রতিষ্ঠাতা|
ইসলাম-পুর্ববর্তী যুগে আফঘানি-স্তানের প্রধান ধর্ম ছিল হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম| বৌদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিশ্বে সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায় আফঘানিস্তানে| স্মরণীয় যে বামিয়ানের বিশাল বুদ্ধমুর্তির (অধুনা লুপ্ত) উচ্চতা ছিল অবিশ্বাস্য, প্রায় ১৮০ ফুট | বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক ইউয়ান চোয়াং লেখেন যে এই মুর্তি ছিল সোনালী আলোর ছটায় ঊজ্জ্বল যা থেকে মনে হয় এটি হয়তো স্বর্ণফলক দিয়ে মোডা ছিল অথবা স্বর্ণচূর্ণ মিশ্রিত রংয়ের প্রলেপ দেয়া ছিল| বিশিষ্ট বৃটিশ পণ্ডিত ওয়ারউইক বল মন্তব্য করেছন য়ে এই মুর্তি বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পকীর্তি গুলির মধ্যে অন্যতম | ইউয়ান চোয়াংয়ের বিবৃতি অনুযায়ী এ অঞ্চলে একটি বিশাল ১০০০ ফুট লম্বা শায়িত বুদ্ধমুর্তি ছিল যা বহু প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আবিস্কৃত হয়নি |
মেস আইনাক ও হাড্ডার গান্ধার ঘরাণার বৌদ্ধকির্তীগুলি সাডা বিশ্বে অনন্য কিন্তু এর মধ্যে অনেকগুলিই ইসলামী চরমপন্থীরা ধ্বংস করেছে ও চোরাকারবারিদের হাতে চলে গেছে| আফঘানিস্তানে পুরা-কীর্তি চোরাকারবারির আরো বহু দৃষ্টান্ত আছে| গজনীর নিকটে মীর জাকায় আবিস্কৃত মুদ্রার গুপ্তভাণ্ডার বিশ্বে অনন্য| এখানে পাওয়া যায় চার টনেরও বেশী ওজনের স্বর্ণ, রোপ্য ও ব্রঞ্জ মুদ্রা ও বহু স্বর্ণ ও রোপ্যনির্মিত অলঙ্কার ও অন্যান্য সামগ্রী(৩৫০ কিলোগ্রাম)| এর বেশীর ভাগই চোরাকারবারিদের হাতে চলে যায়| মীর জাকা অবিভক্ত ভারতের সীমান্তের নিকটবর্তী(১৫০ কিঃ মিঃ), এবং এই ভাণ্ডারের বহু পাঞ্চমার্ক কৃত ভারতীয় রৌপ্যমুদ্রা ও ভারতীয় অলঙ্কার ইঙ্গিত করে যে এককালে এই অঞ্চল ছিল ভারতের অভ্যন্তরে | ভারত-পাকিস্তান দেশবিভাগের আগে আফগাানিস্তান ছিল ভারতের প্রতিবেশী এবং ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর অফিসারেরা এদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান করেন | এই কোম্পনীর সি. ম্যাসন প্রথম জালালাবাদ, হাড্ডা ও বেগ্রাম নিয়ে প্রচুর তথ্য জোগাড করেন ১৮৩৪ খ্রীষ্টাব্দে | একই সময়ে মুন্সী মোহন লাল হেরাটের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন | ১৯৪৭ সালে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধিকর্তা স্যার মর্টিমার হুইলার আফগানিস্তানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিরীক্ষন করেন | দেশভাগের পরে ১৯৬৯ সালে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধিকর্তা আর. সেনগুপ্ত বামিয়ান ও বাল্খের নিকটে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও পুনরুদ্ধার করেন যা বহু প্রশংসিত |
সাধারণত ধারণা করা হয় যে তৈলচিত্র ইওরোপের শিল্পীরাই প্রথমে সৃষ্টি করেন কিন্তু, সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করে ইওকো তানিগুচি নির্ণয় করেছেন যে বামিয়ানের কয়েকটি তৈলচিত্র ৬৫০ খৃষ্টাব্দে আঁকা হয় যা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং ইওরোপের তৈলচিত্র গুলির চেয়েও বহু প্রাচীনতর| বুদ্ধমুর্তি ছাডাও বামিয়ান ও হাড্ডায় বহু বৌদ্ধ তৈলচিত্র পাওয়া যায় যেগুলির সঙ্গে অজন্তার ম্যুরালের সম্পর্ক আছে | বিশিষ্ট শিল্পবিশেষজ্ঞ গোলাম ইয়াজদানীর অভিমত যে এই চিত্রগুলিতে ভরতীয় চিত্রশৈলীর প্রভাব স্পষ্ট কিন্তু এই অঞ্চল ইন্দোগ্রীক রাজা দের অধীনে ছিল কাজেই এখানে হেলেনিষ্টিক কৃষ্টির স্বতন্ত্র প্রভাব থাকা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়|
বামিয়ানের আরেকটি সাম্প্রতিক আবিস্কার স্পষ্টভাবে নেপালী মিথ্যার ঝুলির দিকে অঙ্গুলিসঙ্কেত করে| তালিবানি বর্বরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কিছু আফঘান উদ্বাস্তু বামিয়ানের গুহায় আশ্রয় নেয় ও অপ্রত্যাশিত ভাবে ১৯৯৩-৯৪ সালে কয়েকটি বিশাল ঘটে
সংরক্ষিত বহু প্রাচীন ভূর্জপত্রে লিখিত অমূল্য লিপিখণ্ড আবিস্কার করে যা সংখ্যায় দশ হাজারেরও বেশী| লিপিখণ্ডগুলির কাল খ্রীষ্টীয় দ্বিতীয় থেকে আষ্টম শতাব্দী এবং পণ্ডিতদের মতে এগুলি বিশ্ব ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূ্র্ণ যা খ্রীষ্টীয় ইতিহাসে ডেড্ সী স্ক্রোলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় | এর অনেকগুলি বিখ্যাত শ্বোয়েন সংগ্রহশালায় রক্ষিত আছে|
আফঘানিস্তানের হিন্দু ঐতিহ্যও অসামান্য| প্রসিদ্ধ ব্রিটিশ ঐতিহাসিক এচ্. এম্ এলিয়ট লেখেন যে একযুগে ভারতের বহুদুরবর্তী অঞ্চল থেকে হিন্দু পূণ্যার্থীরা যেতেন আফঘানিস্তানের শকওয়াণ্ডে, যা ছিল একটি বিশাল ও পবিত্র হিন্দুতীর্থ | গজনীর দক্ষিনে টপ সর্দার ছিল আরেক বিখ্যাত বৌদ্ধকেন্দ্র ও হিন্দুতীর্থ | এ অঞ্চলে শায়িত বুদ্ধ মুর্তির ভগ্নাবশেষ পাওয়া গিয়াছে যার উচ্চতা আনুমানিক ৪৫ ফুট| এখানে উত্খনন করে ইতালীয় প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এক বিশাল ও সুদৃশ মহিশমর্দিনী দুর্গামুর্তির ভগ্নাবশেষ আবিস্কার করেছেন যা মনে হয় হিন্দু শাহী পর্বের (খৃষ্টীয় অষ্টম-নবম শতাব্দী)সমসাময়িক| শিব ও পার্বতী প্রথমে হয়তো কোন পর্বতময় অঞ্চলে পূজিত হতেন এবং আফঘানিস্তান পর্বতের দেশ | কাবুলের ২২ কিঃমিঃ উত্তরে শকরদারায় প্রধানতঃ হিন্দু দেবদেবীরই নিদর্শন পাওয়া যায় | এখানকার শিব, সূর্যদেব ও গণেশের মুর্তিগুলি সুপ্রাচীন (খৃষ্টীয় চতুর্থ থেকে সপ্তম শতাব্দী)| গনেশমুর্তিটি মার্বেলের এবং সম্ভবতঃ বর্তমান ভারতে আবিস্কৃত গনেশ মুর্তিগুলির চেয়ে প্রাচীনতর | শকরদারা ও শকওয়াণ্ড নামদুটির সঙ্গে শাক্য নামের যোগ থাকতে পারে|
গজনীর উত্তরে গার্দেজও ছিল হিন্দু সভ্যতার এক প্রধান কেন্দ্র| এখানে পাওয়া শিব, গণেশ ও মহিশমর্দিনী দুর্গার মুর্তি(২টি)| শিব মুর্তিটি মার্বেলের এবং গণেশমুর্তিটিতে দুই লাইনের একটি লেখ ব্রাহ্মী লিপিতে উত্কীর্ণ আছে যা এটির প্রাচীনতার সাক্ষী দেয়|
নেপালে বুদ্ধ-জন্মভুমি আবিস্কার বৌদ্ধ ইতিহাসের এক মহাপ্রমাদ যা বিশ্ব ইতিহাসের কলঙ্ক| বৌদ্ধধর্মের প্রত্নতাত্ত্বিক ভিত্তি প্রায় একক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা করেন স্যার্ অরেল ষ্টাইন| তাঁর অজস্র আবিস্কার এই ধর্মকে জনশ্রুতির গণ্ডীর বাইরে আনে| এটা খুবই অর্থব্যঞ্জক যে ষ্টাইনের বহু আবিস্কারের একটিও নেপালে ছিল না | আলেকজাণ্ডার কানিংহ্যাম ফুয়েহরারের আবিস্কার স্বীকার করেন নি এবং ভিনসেন্ট স্মিথও এর তীব্র নিন্দা করেন কিন্তু রমীলা থাপার, দিলীপ চক্রবর্তী ও অন্যান্য লেখকেরা জাত্যাভিমান নয়তো অন্য কোন সংকীর্ণ কারণে ফুয়েহরারের মিথ্যা প্রতিবেদনকেই গ্রহণ করেন| অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রিচার্ড গমব্রিচও কপিলবস্তুর প্রকৃত ভৌগলিক অবস্থানের প্রসঙ্গটি এডিয়ে যাওয়াই সমীচীন মনে করেন |কমলা মুখোপাধ্যায় লিখেছেন.
সম্প্রতি বৃটিশ গবেষক টি. এ. ফেলপস দেখিয়েছেন যে ডঃ এ. ফুয়েহরারের লুম্বিনী আবিস্কার আসলে একটি নির্লজ্জ জালিয়াতী| বৌদ্ধ ইতিহাসে ত্রপুস ও ভাল্লীকের কাহিনী সুবিদিত কিন্তু এটি নেপাল অথবা পূর্বভারতে হওয়া অসম্ভব | ভাল্লীক আসলে বাহল্লীক অর্থাত বাল্খ্ অঞ্চলের অধিবাসী এবং ত্রপুস নিকটবর্তী অঞ্চলের ধাতু ব্যবসায়ী |