ইলা মুৎসুদ্দী:
কর্ম ও কর্মফলকে বিশ্বাস করার নাম শ্রদ্ধা। শীলবানদিগকে দর্শনের ইচ্ছা, সদ্ধর্ম শ্রবণের ইচ্ছা কার্পণ্য ময়লা ত্যাগের ইচ্ছার নামই শ্রদ্ধা। মনুষ্যগণ যে শ্রদ্ধায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভিক্ষু শ্রমণের সেবা করে, দীন-দুঃখী, পথিক ও যাচকদেও উপকার করে, সেই শ্রদ্ধা আগম, অধিগম, অবকপ্পন ও প্রসাদ শ্রদ্ধা ভেদে চারি প্রকার। যেমন — বোধিসত্ত্বেও বুদ্ধত্ব প্রার্থনার সময় হইতে যে শ্রদ্ধা অবিচলিতভাবে থাকে, তাহাই আগম শ্রদ্ধা। আর্য্যশ্রাবকগণ যেই শ্রদ্ধাবলে লোকোত্তর ধর্ম লাভ করে, সেই শ্রদ্ধাকে অধিগম শ্রদ্ধা বলে। বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘ এই শব্দত্রয় শ্রবণ করা মাত্রই যেই অচলা শ্রদ্ধা উৎপন্ন হয়, তাহা অবকপ্পন শ্রদ্ধা। আর যেই শ্রদ্ধা চিত্তের প্রসন্নতা উৎপন্ন করে, তাহাকে প্রসাদ শ্রদ্ধা বলে।
ঠিক তেমনি পুন্যকর্ম কায়িক, বাচনিক ও মানসিক কর্ম ভেদে তিন প্রকার। যেমন ঃ ভিক্ষু আসিতে দেখিয়া সসম্ভ্রমে আগু বাড়াইয়া লওয়া, বিহার সম্মার্জ্জন ও লেপন করা, আসনাদি ঝাড়িয়া ও পাতিয়া দেওয়া, পানীয় ও ব্যবহার্য জল আনিয়া দেওয়া অর্থাৎ শরীরের যে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে দান ও শীলের কার্য সম্পা দন করাকে বলা হয় কায়িক পুণ্য কর্ম।
ভিক্ষুগণ পিন্ডাচরণ করিতেছে দেখিয়া অন্ন দাও, ব্যঞ্জন দাও ও সুগন্ধ পুষ্পাদি দ্বারা পূজা কর, উপোসথশীল পালন কর, ধর্ম শ্রবণ কর, বন্দনা ও ভাবনা কর, রোগীর সেবা কর ও ঔষধ পথ্য দান কর, দরিদ্রকে অন্ন-বস্ত্র দান কর, সেতু দাও, রাস্তা মেরামত কর ইত্যাদি যত প্রকার কুশল কর্ম আছে তাহা করার জন্য মানুষকে বাক্যেও দ্বারা উৎসাহিত করে তাকে বলা হয় বাচনিক পুণ্য কর্ম।
জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল চিন্তা, মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা চিন্তা, কায়গতানুস্মৃতি ও অনিত্য-দুঃখ-অনাত্ম ইত্যাদি যত প্রকার কুশল জনক চিন্তা হইতে পারে তাহাই মানসিক পুণ্যকর্ম।
যেহেতু আমরা দুর্লভ মনুষ্য জন্ম লাভ করিয়াছি সেহেতু আমাদের দ্বারা শ্রদ্ধাচিত্তে সকল পুণ্যকর্ম সম্পাদন করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন আমাদেও সদিচ্ছা আর আন্তরিকতা। সদিচ্ছা থাকলে সকল কাজে সফলতা আসবেই।
সকলকে আমার সকল মৈত্রী এবং পুণ্যরাশি দান করছি এবং কামনা করছি সকলের মঙ্গলময় মনষ্কামনা পরিপূর্ণ হোক। সকলের চিত্ত অন্তর সুখী হোক সুখী হোক, সুখী হোক।
সূত্র ঃ সদ্ধর্ম রতœ চৈত্য।