ভিন্ন মতাবলম্বী ছেলেকে বিয়ে করা জের
চকরিয়া, কক্সবাজার : মাস ছয়েক আগে প্রেম করে কান্তা বড়ুয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী টিপু দাসের। পারিবারিকভাবে প্রথম দিকে সমস্যার সম্মুখীন হলেও, পরে বিষয়টি মিটমাট হয়ে যায়। এর পর শ্বশুরবাড়িতে স্বামীর সঙ্গে সংসার করছিলেন কান্তা। বিয়ের ছয় মাস পরে শ্বশুরবাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে তার ঝুলন্ত লাশ। শ্বশুরবাড়ির লোকদের দাবি আত্মহত্যা করেছেন কান্তা।
শুক্রবার ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নের উত্তর ঘুনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘুনিয়ায় পাশাপাশি হিন্দু পাড়া ও বড়ুয়া পাড়া। সেখানের নিটু বড়ুয়ার মেয়ে কান্তা বড়ুয়ার সঙ্গে সুরেশ শুক্লা দাসের ছেলে টিপু দাসের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তবে তারা দুই ধর্মের হওয়ায় দুই পরিবারের কেউই ওই সম্পর্ক মেনে নিচ্ছিল না।
কান্তা এইচএসসি পাস করার পর প্রেমিক টিপুর সঙ্গে আত্মীয়দের অগোচরে বিয়ে করে। পরে টিপুর পরিবার কান্তাকে মেনে নিলে শ্বশুরবাড়িতেই কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন।
স্থানীয়রা আরও জানান, বিয়ের আগে টিপু বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করবে বলে কথা দিয়েছিল কান্তাকে। কিন্তু বিয়ের পর সেই কথা না রাখায় সম্প্রতি স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কান্তার বাকবিতণ্ডা হতো।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য অনিমেষ রঞ্জন দে বলেন, দুই গোত্রের ছেলে মেয়েদের মধ্যে প্রেম করে বিয়ে হলেও তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া-বিবাদ বা অসন্তোষমূলক কোন কর্মকাণ্ড ছিল না। কারো কাছ থেকে শোনাও যায়নি। হঠাৎ শুক্রবার সকালে কান্তার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার কথা শোনেন। মরদেহ হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
কান্তা বড়ুয়ার বাবা সুকুমার বড়ুয়া দাবি করেন, তাঁর মেয়েকে স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘যদি সে আত্মহত্যা করে থাকে, তাহলে আমার বাড়ি তো ২০ গজ দূরেই, নিশ্চয় আমাকে খবর দিত! আমরা বাইরের লোকজনের কাছ থেকে শুনে লাশ দেখতে আসি। ততক্ষণে টিপুর পরিবারের লোকজন পালিয়ে গেছে।’
ঘটনাস্থলে যাওয়া চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত চৌধুরী বলেন, নিহত কান্তার প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে মহিলা পুলিশ দিয়ে। এ সময় কান্তার হাত ও গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রেম করে বিয়ের ছয় মাস পর গৃহবধূ মারা যাওয়ায় নানা ধরনের কানাঘুষা হচ্ছে। তাই মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। চিকিৎসকের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এছাড়া শ্বশুর বাড়ির লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মেয়ের বাবার পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।