কলকাতা, ২ ফেব্রুয়ারি : বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাই লামার উপরে হামলার ছক কষেছিল ধৃত দুই জেএমবি জঙ্গি জামিরুল শেখ ও পয়গম্বর শেখ। ধৃতদের জেরা করে এমনই তথ্য জানতে পেরেছে এসটিএফ। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপরে অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা চালানো হত বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। গত ২০ জানুয়ারি বিহারের বুদ্ধগয়াতে তীর্থযাত্রী কেন্দ্রের কাছে উদ্ধার হয় বোমা। সেইসময় সেখানেই ছিলেন দলাই লামা। আগের দিন একই জায়গায় একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সেই ঘটনার তদন্ত করছে বিহার পুলিশ।বুদ্ধগয়ায় দলাই লামার পরিভ্রমণের সময়ে তারা বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছিল বলে আগেই কবুল করেছে জঙ্গি সন্দেহে ধৃত দুই যুবক।
রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে তারা কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বৌদ্ধ ধর্মস্থানগুলিকেও নিশানা করছিল বলে জানতে পেরেছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা। বুধবার ধৃত দুই যুবক পয়গম্বর শেখ ও জামিরুল শেখকে জেরা করেই তাঁরা জেনেছেন,
বিশেষ করে বাংলার বৌদ্ধ ধর্মস্থানে হানা দেওয়াই নব্য জেএমবি-র উদ্দেশ্য।
গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসটিএফ) মুরলিধর শর্মা জানান, পয়গম্বর শেখের বাড়ি মুর্শিদাবাদের কাঁকুড়িয়া গ্রামে। একটি মসজিদে ইমাম ছিল সে। গতকাল বিকাল ৪টে নাগাদ তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃত জামিরুল মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা। সে নিজেকে দিনমজুর বলে এলাকায় পরিচয় দিত। গতকাল রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শিলিগুড়ির কাছে ফাঁসিদেওয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, তার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন সহ বিস্ফোরক তৈরির একাধিক সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে। জেরায় ধৃতদের নেপাল যোগের কথা জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
মুরলিধর শর্মা জানান, ধৃত পয়গম্বর ও জামিরুল বিস্ফোরক তৈরি করতে জানে। ২০১২ সালে IS জঙ্গি নাসিরুল্লা তাদের এবিষয়ে ট্রেনিং দেয়। খাগড়াগড়কাণ্ডে পয়গম্বর শেখের নাম উঠে এসেছিল। এনয়াইএ তাকে সমন পাঠিয়েছিল। কিন্তু পালিয়ে যায় পয়গম্বর। মুরলিধর শর্মা আরও জানান, ধৃতরা জেরাতে স্বীকার করেছে বিহারের গয়াতে যে বিস্ফোরণ হয়, সেই ঘটনায় এরাই যুক্ত ছিল। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় পয়গম্বরের নাম থাকায় তাকে এনয়াইএ জেরা করবে। এছাড়া বিহার পুলিশের কাছে খবর পাঠানো হয়েছে। তারাও ধৃতদের জেরা করতে আসছে।
২১ নভেম্বর কলকাতা স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার বাংলা টিমের সদস্য সামসেদ মিঞা এবং রিজাউল ইসলামকে। ওইদিনই গ্রেপ্তার হয় অস্ত্র ব্যবসায়ী মনোতোষ দে। ২৪ নভেম্বর শিয়ালদা থেকে গ্রেপ্তার হয় শাহদাত হোসেন নামে আরও এক ব্যক্তি। তাদের জেরা করেই জামিরুল ও পয়গম্বরের খোঁজ পান কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা।
ধৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গতকাল তাদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেন।