1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
  3. wp-configuser@config.com : James Rollner : James Rollner
রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন

বুদ্ধমূর্তির উৎপত্তির ইতিকথা

প্রতিবেদক
  • সময় বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
  • ৫৬৭২ পঠিত

ভিক্ষু দীপানন্দ: 

পৃথিবীতে যখনই মানবতা বিপন্ন হয়, মনুয্যত্ব ভূলে গিয়ে মানুষ অধর্ম পথে পরিচালিত হয় তখন জগৎবাসীকে সৎ শিক্ষা দান এবং সৎপথে পরিচালিত করার উদ্দেশ্য আনুমানিক খ্রীষ্টপূুর্ব ৬২৫ অব্দে গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হন। সূর্ষ সদৃশ তেজোদীপ্ত মহামানব বুদ্ধে আবির্ভাব বিশ্ববাসীর জন্যে ছিল এক মহা দুর্লভ ঘটনা। বর্ণে বর্ণে জাতিতে জাতিতে ভেদবুদ্ধির নিষ্ঠুর মূঢ়তা তখন রক্তে পঙ্কিল করে তুলেছিল এ ধরাতল। শ্রেণী ভেদ ও বর্ণ বিদ্বেষের ছিল নির্মম কঠোরতা। পুরোহিত প্রধান আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া কান্ড ও যাগযজ্ঞে ধর্মের নামে বধ করা হত অসংখ্য নিরীহ প্রাণী। এক দিকে খেতে খাওয়া মানুষের অসহায়ত্ব অন্যদিকে সমাজের উচ্চ শ্রেনীর দুর্দান্ত প্রতাপ। তদানীন্তরু সময়ে প্রচলিত ধর্মমত সমুহ ছিল বাষট্টি প্রকার মিথ্যাদৃষ্টিজালে বিভক্ত এমনকি ক্ষীয়মান ও তমসাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্তায় প্রজ্ঞায় প্রদীপ হাতে জন্ম নিলেন জন্মজন্মান্তরে পারমী সম্পন্ন জ্যোর্তিময় মহাকারুনিক ভগবান বুদ্ধে অন্তরে তাঁর মৈত্রী, করুনা, প্রেম ও অহিংসারবাণী। মানব জাতিকে শুনালেন অমৃতের বাণী । বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করলেন প্রাণ সর্বজীবের নিকট সবচেয়ে প্রিয়বস্তু তাই এই প্রাণী হনন থেকে বিরত হও। মানুষ জন্মে বড় নয় কর্মে বড়, অতএব সকল পাপকর্ম বর্জনকর, স্বঃকর্ম সম্পাদন কর এবং স্বীয় চিত্তকে পরিশুদ্ধ কর তবেই আসবে মুক্তি। মানুষ নিজেই নিজের মুক্তিদাতা। অন্তরে অন্তরে জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত কর দেখবে তখন আতœপর সব সমান। এই ঐতিহাসিক যুগের সময়ে ভগবান বুদ্ধই মহাপুরুষ যার কল্পিত প্রতিচ্ছবি আমরা চিত্রে ও প্রস্তরে বহুল পরিমানে ধরে রাখতে পেরেছি আর কোন মহাপুরুষের চিত্র বা মূর্তি এত বহুল পরিমাণে দৃষ্ট হয় না। মূর্তিপূজা বুদ্ধ প্রকান্তরে নিষেধ করলেও শিল্পিদের জিজ্ঞাসু মন বার বার বুদ্ধে রুপ নির্মাণের বসে থাকেনি। বুদ্ধে বিভিন্ন পতীক চিত্র ব্যবহার করতে করতে এক পর্যায়ে শিল্পীরা মূর্তি নির্মাণ করে বুদ্ধকেুু পূজার আসনে বসিয়ে দিয়েছেন। নিম্নে বুদ্ধ মূর্তির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা গেল ঃ

বুদ্ধ মূর্তির উদ্ভব ঃ ভগবান বুদ্ধের পরিনিবার্ণকাল হতে কুষান সাম্রাজ্যের পত্তন কাল পর্যন্ত সময়ে (খৃঃ পূঃ ৬ষ্ঠ শতক হতে খৃীষ্ঠিয় প্রথম শতক) প্রাচীন বৌদ্ধ শিল্পকলায় কোর বুদ্ধ মূর্তির আবিষ্কৃত হয়নি। ভগবান বুদ্ধের ধর্ম মূলতঃ পরমার্থিক। এত ব্যক্তি বা ভক্তিবাদের চেয়ে আধ্যাতিœকতার বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্ভবতঃ মহাযান ধর্মমতে ব্যাপক বিকাশের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত বুদ্ধমূর্তি নিদর্শন বেীদ্ধ শিল্প কলায় সৃষ্টি হয়নি।কখন থেকে বুদ্ধ মূর্তি নির্মাণ শুরু হয়েছে বা প্রথম বুদ্ধ মূর্তি কোনটি এই নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কিংবদন্তি অনুসারে গৌতম বুদ্ধ তিনমাসের জন্য তাবতিংসে তার মা ও ঋদ্ধিমান দেবতাদের অভিধর্ম দেশনা করতে গিয়ে তার অবর্তমানে বুদ্ধ ভক্ত রাজা প্রসেনজিৎ চন্দন কাঠের একটি বুদ্ধমর্তি তৈরী করে বুদ্ধের উদ্দেশ্য শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। এটি কতটুকু সত্য তা বিচার সাপেক্ষ। বুদ্ধের সময় অজাতশত্রু প্রমুখ বহু রাজন্যবর্গ ও শ্রেণীবর্গ বুদ্ধের একনিষ্ট ভক্ত ছিলেন। তখন যদি বুদ্ধ মর্তি প্রচলন থাকতো নিশ্চয় বুদ্ধমূর্তি তৈরী করতেন। এর পর সম্রাট অশোক ছিলেন বৌদ্ধধর্মের নিবেদিত প্রাণ। তিনি স্বধর্মের প্রচার ও স্থায়িত্বের জন্য শত শত স্তুপ, স্তম্ভ, বিহার, চৈত্য, রেলিং, শিলালিপি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠি করেছিলেন। তখন ও বুদ্ধ মূর্তি প্রচলন কিংবা উদ্ভব হয়নি বলেই মৌর্য শিল্প কলায় বুদ্ধ মূর্তি দেখা যায় না। নচেৎ অশোক যেরুপ স্বধর্মপ্রাণ নরপতি ছিলেন অবশ্যই তিনি বুদ্ধ মূর্তি নির্মাণ করাতেন। পরবর্তী শুঙ্গ-কান যুগেও বুদ্ধ মূর্তির নির্দশন দেখা যায়নি। এই যুগ পর্যন্ত বৌদ্ধ শিল্পকলায় বুদ্ধ মূর্তির প্রতীক হিসেবে ধর্মচক্র, উষ্ণীশ, বোধিবৃক্ষ, ভিক্ষাপাত্র, স্তুপ ইত্যাদি ব্যবহার করা হত। এ ধরণের রীতিকে শিল্পে ঝুসনড়ষরংস বলে। শুঙ্গ যুগের পর বৌদ্ধ শিল্পকলায় ঝুসনড়ষরংস এর ব্যবহার দেখা যায়।

কৃষাণ যুগও গান্ধার শিল্প ঃ কুষাণ যুগে (খৃষ্টীয় ৫০ হতে ৩০০বৎসর) গান্ধার শিল্পকলায় সুচনা হয়। কুষাণ রাজা কর্তৃক বিদেশী শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তাদের পক্ষাবলম্বনের কথাই ছিল কনিষ্ক ও তার অনগামী কুষাণ রাজাদের সরকারী শিল্পকলা। খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দী হতে আরম্ভ করে তিন/চার শত বছরের শিল্পের অগ্রগতি এখন থেকে আরম্ভ হয়। এ জন্য ভারত শিল্পের ইতিহাসে এই যুগটি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গান্ধার শিল্পের বিশেষ ধারাটি কুষাণদের দখলকৃত অঞ্চলই প্রধানত বিকাশ লাভ করেছিল। দক্ষিণ অঞ্চলের কুষাণ রাজধানী মাট্রায় ভারতীয় শিল্পের একটা বিরোধ গড়ে উঠে। এ সময় কুষাণরা গান্ধার শিল্পীদের সমর্থন করে। তাই সহজে অনুমান করা যায় গান্ধার ভাস্কর্যের বেশীর ভাগ কর্মই বিদেশী শিল্প প্রভাবে প্রত্যক্ষ ফল। যদিও গান্ধার শিল্পে বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক শিল্পের বিষয়বস্তু হিসেবে প্রাধান্য লাভ করেছিল। তবুও তারা অনেক ভাস্কর্যের উপাদান সমূহ পশ্চিম এশিয়া বা গ্রীক সংস্কৃতি জাত বলে দেখতে পাওয়া যায়। সিন্দু নদীর পশ্চিম তীর সংলগ্ন পেশোয়ার উপাত্যকা সোয়াত ও বুনের উত্যাদি অঞ্চল সমূহের প্রাচীন ভৌগোলিক নাম গান্ধার গ্রীক বীর আলেকজান্ডার চতুর্থ শতাব্দীতে গান্ধার জয় করেন। এর ফলশ্রুতিতে এখানে উপনিবেশ গড়ে উঠে। মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে এই অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসার লাভ অবশেষে খৃীষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে কুষাণরা শক (সিথিয়ান) পহলব (পাথিসিয়ান) ও গ্রীক রাজাদের পরাজিত করে গান্ধার অধিকার করেন। এ সময় গ্রীক ও ভারতীয় বৌদ্ধ সংস্কৃতির মিশ্রনের ফলে এই অঞ্চলে যেই শিল্পকলা গড়ে উঠে তাকে গ্রীক বা গান্ধার শিল্পকলা বলা হয়।

কুষাণ যুগে মহাযান ধর্ম মতের ব্যাপক প্রসারতা লাভ করে। মহাযানীরা বুদ্ধে ধর্ম বাণীর চেয়ে তাঁর ব্যক্তি জীবনের উপর বেশী গুরুত্ব আরোপ করতেন। তাই এদেরকে বলা হয় বুদ্ধযান বা বোধিসত্বযান। ফলে মহাযান মতের প্রকৃষ্ঠ বিকাশের ও গান্ধার ভাস্কর্যে উৎপত্তিতে সর্ব প্রথম নির্মিত হয় বুদ্ধ ও বোধিসত্বের মূর্তি গুলো। গান্ধার ভাস্কর্যের সৃষ্টি হল গ্রীক রোমান ও পারসিক ভাস্কর্যের সৃষ্টি হল গ্রীক রোমান ও পারসিক ভাস্কর্যের সঙ্গে ভারতীয় ভাস্কর্যের সংমিশ্রনে। অনেকের মতে হারকিউলিস, এ্যাপোলো, জিউজ ইত্যাদি গ্রীক দেব-দেবী মূর্তির অনুকরনে গান্ধারের শিল্পীগণ বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করেছিলেন। গান্ধার শিল্পীগণ প্রায়ই গ্রীক ও রোমান ছিলেন তাই তারা ভারতীয় আধ্যাতিœক পুরুষ শ্রেষ্ঠ বুদ্ধের লক্ষণ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ছিলেন। ফলে এখানকার উপাদান ভারতীয় হলেও নিমার্ণ কৌশলের দিক দিয়ে এগুলো গ্রীক প্রভাবান্বিত। তাই তারা বুদ্ধ মূর্তির মধ্যে কখনো দাঁড়ি বা গোফ ও আরোপ করেছেন। এই সময়কার বুদ্ধের এই মূর্তিগুলো ছিল বিদেশী ভাস্কর্য়ের “লেটএন্টিক” পদ্ধতিতে সৃষ্টি এক জঠিল পট শিল্প।

বুদ্ধমূর্তির ক্রমবিকাশ ঃ কুষাণ যুগে ভারত শিল্পের সুর্বণ যুগ বলা হয়। এই শিলাপ বিকাশের ক্ষেত্র তিনটি। এদর মধ্যে অতি পুরাতন ও বিখ্যাত নগর মুথুরা। এখানকার শিল্পকলায় বিদেশী ভাবধারা দেখা গেলেও শিল্প শিল্প প্রেরনার মূল উৎসটি ছিল ভারতীয়। ভারতীয় শিল্পরীতিতে যে সমস্ত স্থাপত্য ও ভাস্কর্য নির্মিত হয় এগুরো হল মথুরা শিলোপর উদ্ভব। মথুরা শিল্পকলার প্রসার ঘটে তক্ষশীলা, সাঁচী, কোশাম্বী, শ্রাবস্তী, সারানাথসহ অন্যান্য স্থানে। মথুরা শিল্পকলায় বুদ্ধ ও বোধিসত্বের মূর্তিগুলো আতœবিকাশ লাভ করে। কিংবদন্তী আছে যে, প্রথমে ভারতীয় শিল্পীরা বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে ব্যাপারে সাহস করেনি।ু কারণ বুদ্ধের এত মহাপুরুষ লক্ষণযুক্ত মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন। তাদের এই মূর্তিতে বুদ্ধের মহাপুরুষ লক্ষণ গুলো ফুটিয়ে তোলা ভারতীয় শিল্পদের মনপুতঃ হয়নি। তাই মথুরার শিল্পীরা এগিয়ে এলেন বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে। মথুরার শিল্পীরা তাঁর ভাব ও আদর্শের রুপ দিয়েছেন বুদ্ধমূর্তিতে। এখানে সাধারণ মানব মূর্তির মতো বুদ্ধ মূর্তিতে রুপদান করা হয়নি। বুদ্ধমূর্তিকে অন্যমূর্তি হতে তফাৎ করা হয়েছে লক্ষণাক্রান্ত করে। তাই অজানুলম্বিত বাহু, মস্তকোপরি উষ্ণীর্য, কপালেউর্না, হাতের অঙ্গলী জোড়া, প্রশস্তবক্ষ, সুক্ষèত্রিচীবর ও মস্তকের পশ্চাতে প্রভাম-ল সুষ্টি করে মথুরা শিল্পকলায় বুদ্ধমূর্তিকে রুপদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মথুরা থেকে পাওয়া সিংহাসনে বসা বুদ্ধ মূর্তিতে ভাস্কর্য শিল্পের এক অদ্ভদ অগ্রগতি দেখা যায়। এই মূর্তিই হল পরবর্তীকালের বসা মুর্তিঘুলোর আর্দশ স্বরুপ, শিল্পী এখানে বুদ্ধের মুখশ্রীতে একটি সমর্জিত আতœস্থ ভাব ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন। মথুরার শিল্পীরীতি ভারতীয় ভাবধারায় নির্মিত বলে বারতীয় শিল্পের ইতিহাসে এর গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মথুরা বুদ্ধমূর্তি সমগ্র উত্তর ভারতে জনপ্রিয়তা লাভ করে। মথুরা বৌদ্ধ শিল্পকরার প্রাণ কেন্দ্র হয়ে উঠে। বুদ্ধমূর্তি গুলোকে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা ঃ ১) স্থানক, ২) আসন, ৩) শায়িত। এসব মূর্তির দ্বারা বুদ্ধে জীবন বহুমূর্তি। যেমন- অভয়মুদ্রা, ভূমিস্পর্শমুদ্রা, ধর্মচক্রমুদ্রা ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়।

ইক্ষাকুবংশ ও অমরাবতী শিল্প ঃ আনুমানিক খৃষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে ইক্ষাকুবংশের রাজা শ্রী ধীর পুরুষদত্তের রাজত্বকালে তাঁর পৃষ্ঠ পোষকতায় অমরাবতীর বেীদ্ধ শিল্পকলায় গড়ে ওঠে। এই শিল্পকলায় ও গান্ধার ও মথুরা শিল্পকলার সমন্বয় ঘটে। এখানকার শিল্প (বুদ্ধমূর্তি) সজীব ও প্রাণবন্ত এখানে বহু বুদ্ধমূর্তির, বোধিসত্বমূর্তি নির্মিত হয়। কালে এই শিল্প ভারত সীমা অতিক্রম করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

গুপ্তযুগ ঃ গুপ্তযুগেও (খৃষ্টীয় চতুর্থ হতে ষষ্ঠ শতকে) বৌদ্ধ শিল্পকলার ব্যাপক সমৃদ্ধি ঘটে। যদিও বা গুপ্তযুগে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রবল প্রতিপত্তি ছিল, কিন্তু গুপ্ত সম্রাটগণের পরম সহিষ্ণুতার জন্য তাঁদের সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের সমপ্রসারণ বিন্দুমাত্র ব্রাহত হয়নি। গুপাতযুগে অন্যতম সংস্কৃতিক ও বানিজ্যিক কেন্দ্র ছিল পুন্ড্রবর্দ্ধন এ সময় বুদ্ধমূর্তি গুলো অধিকতর সুন্দর, প্রাণবন্ত ও অনুপম। বুদ্ধমূর্তি গুলোতে মুখমন্ডলের সমানুপাত গঠন, করুণা বিলাসিত চক্ষুদ্বয়, ওষ্ঠের হাস্য লাবন্য-স্বর্গীয় পবিত্রতায় পূর্নবিকাশ দেখা যায়।

পালযুগ ঃ পাল যুগেও বহু বুদ্ধমূর্তি ও বৌদ্ধদের দেব-দেবীর মূর্তি নির্মিত হয়। অষ্ঠম শতাব্দীর মধ্যভাগে “মাৎস্যন্যায়” বা অত্যাচার হতে মুক্তি লাভের জন্য বাংলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ গোপাল নামক এক ব্যক্তিকে রাজা নির্বাচিত করেন। গোপাল ক্ষমতা লাভের ফলে এ সংকটময় অবস্থার অবসান ঘটে। গোপালের প্রতিষ্ঠিত বংশই পালবংশ নামে পরিচিত। এ পাল বংশই এদেশে খৃষ্টীয় অষ্টমশতক হতে বারশ শতক পর্যন্ত রাজত্ব করেন। পাল রাজারা সবাই বৌদ্ধ ছিলেন। রাজা ধর্মপাল সময়ে বিখ্যাত বিখ্রমশীলা বৌদ্ধ বিগার, পাহারপুরের সোমপুর বিহার, কুমিল্লা জেলার ময়নামতি, পন্ডিত বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রত্নতাত্বিক খননকার্যের ফলে এখানে বহু প্রত্ন সম্পদ আবিস্কৃত হয়েছে। এদর মধ্যে বুদ্ধমূর্তি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অনেকের মতে, গুপ্ত যুগের তুলনায় পালযুগের মূর্তি শিল্প সংখ্যাও বিভিন্নতার ক্ষেত্রে অধিকতর লোকপ্রিয়তা অর্জন করলেও উৎকর্যতার ক্ষেত্রে সমপর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। শুধু পাল যুগে নালান্দার বিশেষ করে কালো পাথরের মূর্তিগুলো অধিকাংশ অভিনব সৃষ্টি। এগুলোর মধ্যে পাওয়া যায় বিভিন্ন নব কল্পনার অভিব্যক্তি ও সম্পূর্ন পরিণত সৃজনি শব্তির পরিচয়। এ সময়ে কাঁেচর গড়া মূর্তিগুলো ও পালযুগের শ্রেষ্ঠ নির্দশন এগুলোর অনুকরণে কাশ্মীর, তাঞ্জের, নাগপট্টম, বার্মা, থাইল্যান্ড, জাবা ও শ্রীলংকায় প্রাপ্ত ধাতুমূর্তি গুলোতে মূর্তি শির্পের দ্রুত ক্রমোন্নতির সুনিদিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্মে প্রথম বুদ্ধমূর্তি পুজার কোন বিধান ছিল না। কারণ থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্মে বুদ্ধের আধ্যাতিœকতার বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মহাযান ধর্ম প্রকৃষ্ট বিকাশের বুদ্ধমূর্তির উদ্ভব বা পুজার প্রচলন হয়। কারণ মহাযানে বুদ্ধের ধমোপদেশের চেয়ে তাঁর ব্যক্তি জীবনের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। সুতরাং মহাযানে ভক্তিবাদের প্রকৃষ্ট প্রচারে বুদ্ধ মূর্তির উদ্ভব বা পুজার প্রচলন হয়।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!