1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ০১:১৯ অপরাহ্ন

বৌদ্ধ ধর্ম ও বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির 

প্রতিবেদক
  • সময় মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮
  • ১৮৯৭ পঠিত

জিতু চৌধুরী: 

১২৮৭ বাংলা ২৮শে মাঘ ১৮৮০ সালে বুধবার পটিয়া থানার অন্তর্গত নাইখাইন গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত বৌদ্ধ পরিবারে বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির জন্ম গ্রহন করেন । তাহার গৃহী নাম প্রানহরি বড়ুয়া । তিনি এনট্রেন্স পর্যন্ত অধ্যায়ন করেছিলেন । কয়েক বছর রেলওয়েতে চাকুরী করেন । আরাকান হতে আগত ভারতের বৌদ্ধ তীর্থস্থান দর্শন করে ভদন্ত উঃ সাগর মহাস্থবির আসলেন ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে এক ধর্মসভা অনুষ্টানে । এ ধর্মানুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন প্রানহরি বড়ুয়া । ধর্মসভা শেষ হলে একান্ত ভক্তি মনে নিজের প্রব্রজ্যা ধর্ম দীক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । কথা হচ্ছিল ইংরেজী বাংলা মিশিয়ে । ভদন্ত উঃ সাগর মহাস্থবির তাঁকে সানন্দে অনুমতি দিলেন । ১৯০৯ সালের ২রা কার্তিক বুধবার ত্রিস্মৃিতি বিজরিত বুদ্ধ পূর্ণিমা বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে “রেঙ্গুন বৈজয়ন্ত বিহার” ধর্মগুরু ভদন্ত উঃ সাগর মহাস্থবিরের নিকট প্রবজিত হন । ১৯০৯- ১৯১৫ সাল পর্যন্ত বার্মা ও শ্রীলংকায় ৬ বছর ত্রিপিটক শাস্ত্র অধ্যায়ন করে ত্রিপিটক ও বিনয়পিটকের “বাগ্মশ্বীর” ভূষিত হয় । ১৯১১ সালে বার্মা থেকে শ্রীলংকা যাওয়ার পথে স্বগ্রামে তিন মাস বর্ষাবাস পালন করে ও নাইখাইন সন্তোষালয় বিহারের বিহারাধ্যক্ষের সহযোগিতায় সর্ব প্রথম দানত্তম শুভ কঠিন চীবর দান সম্পন্ন করেন । বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির শ্রীলংকায় ত্রিপিটক শাস্ত্র সর্ম্পকে বিপুল জ্ঞান অর্জনের সাথে সেখানে প্রায় এক বছর ধ্যান- ভাবনা ও সাধনা করেন ।
স্বদেশে ফিরে এসে পটিয়া থানার বাকখালী গ্রামে বোধিস্বত্ত্ব বিহারে বর্ষাবাস শুরু করেন । ভিক্ষুদের বিনয়ম্মত ও গৃহীদের মিথ্যা দৃষ্টি মুক্ত জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করার উদেশ্যে এক ভিক্ষু মহসভার আয়োজন করে “জীনশাসন সমাগম” নামে একটি সমিতি গঠন করেন । এই সমিতির উদ্যােগে বিভিন্ন বিহারে পালি শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে উঠে । বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবিরের প্রচেষ্টায় ও অধ্যাপক পূর্ণানন্দ স্বামীর সহায়তায় পালিভাষা সরকারী তত্ববধানে পরিচালিত সংস্কৃতি শিক্ষা বোর্ডের অন্তর্ভূক্তির স্বীকৃতি লাভ করে ।
১৯১৮-১৯১৯ সালে কর্তালা-বেলখাইন বিহার প্রতিষ্ঠার প্রথমার্ধে যদুনাথ চৌধূরৌর নেতৃত্বে দুই গ্রামবাসীর আহ্বানে বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির এই বিহারে আসেন । যে গুরুর শিক্ষায় আলোতে আলোকিত হয়েছিলেন, সেই শিক্ষাগুরু “সদ্ধর্মোদয় বিদ্যাপীঠের” নামের সাথে মিল রেখে বিহারের নাম রাখলেন কর্তালা-বেলখাইন সদ্ধর্মালংকার বিহার ।
খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে সম্রাট অশোকের তনয়া রাজনন্দিনী সংঘমিত্রা শ্রীলংকায় যে বোধিবৃক্ষ শাখা রোপন করেছিলেন সেই বোধিবৃক্ষের চারা এনে বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির নিজ হস্তে রোপন করে এই বিহার প্রঙ্গনে মহবোধি বৃক্ষ পূজিত হয়ে বিরাজ করছে । এই সময় চট্টল প্রবাসী বৌদ্ধদের রেঙ্গুন ধর্মদূত বৌদ্ধ বিহার ও চট্টল বৌদ্ধ সমিতি বা চিটাগং বুড্ডিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কর্তালা প্রবাসী লব্ধ প্রতিষ্ঠ ডা: শান্ত কুমার চৌধূরী । বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ডা: শান্ত কুমার চৌধূরীর একক অর্থায়নে বার্মা থেকে নৌকা যোগে আনায়ন করে কর্তালা-বেলখাইন সদ্ধর্মালংকার বিহারে প্রথম সীমা ঘর নির্মান করে দেন এবং মহাসমারোহে মহাসংঘদান করে নিজ গ্রামকে আলোকিত করেছিলেন । ১৯২৯ সালে কর্তালা-বেলখাইন সদ্ধর্মালংকার বিহার-এ দেশবাসী ও মহাভিক্ষু সংঘ বিপুল জাঁকজমক ভাবে বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবিরকে “মহাস্থবির” পদে বরণ করে নেন ।
১৯৩৫ সালে আষাঢ়ী পূর্ণিমার কয়েকদিন আগে কলকাতা ধর্মাঙ্কুর সভা, বঙ্গীয় বৌদ্ধ সমিতি বা বেঙ্গল বুড্ডিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা: শান্ত কুমার চৌধূরীর আন্তরিক প্রার্থনায় বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির বিহারাধ্যক্ষের পরিচালনার ভার গ্রহন করেন এবং কলকাতা উপাসক উপাসিকাগন প্রানঢালা সংবর্ধনা প্রদান করেন । কলকাতা ধর্মাঙ্কুর বিহারে অধ্যক্ষ থাকাকালে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বেঙ্গল বুড্ডিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা: শান্ত কুমার চৌধূরী ও বিশ্ব বিশ্রূত ড. বেনী মাধব বড়ুয়া মহোদয়ের বলিষ্ট সহায়তায় এবং দানবীর শেঠ যুগল কিশোর বিড়ালার প্রচুর অর্থব্যয়ে এক সুরম্য অট্টলিকা (আর্য বিহার) নির্মিত হয় ।
তার অল্পদিন পরেই তাঁরই পূর্ব সংকল্পিত বিদ্যাকেন্দ্র নালন্দা পালি বিদ্যাভবন প্রতিষ্ঠিত হয় । তিনি এই বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষের পদ গ্রহন করেন ।
১৯৪০ সালে বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির পূনরায় কর্তালা-বেলখাইন সদ্ধর্মালংকার বিহারে ফিরে আসেন । ১৯৫৬ সালে বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির বিশ্বব্যাপী ২৫০০তম বুদ্ধাব্দ পূর্তি জয়ন্তী উপলক্ষে বার্মা সরকারের উদ্যােগে সেই ষষ্ট সংগীতি অনুষ্টিত হয় তাতে তদানীন্তন পাকিস্থান সরকারের অন্যতম প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেন এবং সংঘায়ন কর্মে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন করে প্রভূত পান্ডিতের পরিচয় দেন । সে বৎসর ভারতের দিল্লীতে অনুষ্টিত আন্তজাতিক বুদ্ধজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ও তিনি যোগদান করেন ।
১৯৭০ সালে ৩০শে ডিসেম্ভর (১৪ই পৌষ, ১৩৭৭ বাংলা) বুধবার ভোর রাত্রে বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির মহাপ্রয়ান ত্যাগ করেন ।

তথ্যঃ বৌদ্ধ ধর্ম ও বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির
২০১৭ সাল
রনজিত কুমার বড়ুয়া
পৃঃ ৮০, ৮১, ৮৩
তথ্যঃ বংশদীপ পরিবেন
১৯৯৮ সাল
কিরিঢী বিকাশ বড়ুয়া
পৃঃ ১, ২
তথ্যঃ ডা রবীন্দ্র নাথ বড়ুয়ার লিখিত ভাষন
১৯৮৫ সাল
৫, ৬, ৭, ৯, ১১
তথ্যঃ বংশদীপ মহাস্থবিরের জীবনী
শ্রীমৎ ধর্ম রক্ষিত ভিক্ষু

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!