পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির – দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ভিতর্ক মুদ্রার বুদ্ধমূর্তি, ভিত্তিসহ যাঁর উচ্চতা ৫০ ফুট, প্রায় পাঁচ তলা বাড়ির সমান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম সৌন্দর্য-মন্ডিত পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুর নামক স্থানে ১৯৯৯ ইংরেজী এ কুটির স্থাপন করেন অধ্যক্ষ ভান্তে ভদন্ত শাসনরক্ষিত মহাথেরো। তিনি সাধকপ্রবর পূজ্য সাধনানন্দ মহাথেরো (বনভন্তে)’র ৮ম শিষ্য। কুঠির বলতে এটি মূলতঃ বৌদ্ধ বিহার। নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে ধ্যান সাধনার জন্য বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এই কুঠিরটি ব্যবহার করেন। এ কুঠিরের প্রধান আকর্ষণ হল ভিতর্ক মুদ্রায় (Vitarka Mudra) নির্মিত গৌতম বুদ্ধের নান্দনিক প্রতিমূর্তি। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ভিতর্ক মুদ্রার বুদ্ধমূর্তি, ভিত্তিসহ যাঁর উচ্চতা ৫০ ফুট, প্রায় পাঁচ তলা বাড়ির সমান। আরো রয়েছে গৌতম বুদ্ধের জীবন কাহিনী সম্বলিত মূর্তি, লাভীশ্রেষ্ঠ অর্হৎ সিবলী মহাস্থবিরের চৈত্যসহ মূর্তি, মারবিজয়ী অর্হৎ উপগুপ্ত মহাস্থবিরের মূর্তি, সাধকপ্রবর পূজ্য সাধনানন্দ মহাথেরো (বনভন্তে)’র মূর্তি, অধ্যক্ষ ভিক্ষুর আবাসস্থল ‘‘মৈত্রী ভবন’’, ১০০ হাত দৈর্ঘ্যের ভিক্ষু নিবাস, শ্রামণ নিবাস, ৬০ হাত দৈর্ঘ্যের দেশনাঘর, ৮০ হাত দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ভোজনশালা, বড় বুদ্ধ মূর্তির ছাদ, হাসপাতাল ইত্যাদি সহ রয়েছে ২৫টিরও অধিক কুঠির, উপ-কুঠির। রয়েছে দু’টি কৃত্রিম হৃদ। বন ও পরিবেশ রক্ষায় রোপন করা হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার এরও অধিক বৃক্ষ।
গৌতম বুদ্ধ ও তাঁর অনুসারীদের মূর্তি। পাশে সাধকপ্রবর পূজ্য সাধনানন্দ মহাথেরো (বনভন্তে)’র মূর্তি।
এছাড়া, মন-মুগ্ধকর আরণ্যিক পরিবেশে নির্মিত মূর্তি-ভাস্কর্যের প্রতিটি ফুটে উঠেছে বুদ্ধের জীবদ্দশার বিভিন্ন কাহিনী, উপদেশ এবং অনুপ্রেরণামূলক বাণী। এমন একটি বাণী হল – “শিশুকাল গেল খেলায় খেলায়, যৌবনকাল রসের মেলায়, বৃদ্ধকাল যাবে অনেক জ্বালায়, কি নেবে যাবার বেলায়।”
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ভিতর্ক মুদ্রার বুদ্ধমূর্তি, ভিত্তিসহ যাঁর উচ্চতা ৫০ ফুট, প্রায় পাঁচ তলা বাড়ির সমান।
উল্লেখ্য যে, সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তির পেছনের দিকটায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ। কারণ, ভেতরে ১৩টি সাধনা কুঠির রয়েছে। সেখানে ভান্তেরা নির্জনে বসে সাধনা করেন দিনের পর দিন। তাদের সাধনায় বিঘ্ন না ঘটাতেই প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।
ভিতর্ক মুদ্রায় গৌতম বুদ্ধের নান্দনিক প্রতিমূর্তি
বুদ্ধের জীবন কাহিনী সম্বলিত মূর্তি।
মারবিজয়ী অর্হৎ উপগুপ্ত মহাস্থবিরের মূর্তি।
কিভাবে যাবেন: খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ৫নং উল্টোছড়া এলাকায় এটি অবস্থিত। জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। পানছড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তা। চেঙ্গীব্রীজ পার হবার পর কিছু অংশ পাকা বাকী অংশ হেরিংবোন। পানছড়ি পর্যন্ত বাসে, অতঃপর কার, জীপযোগে যাওয়া যায়। এখানে মাহেন্দ্র নামে সিএনজি সদৃশ পেট্রোলচালিত যানও রয়েছে। এগুলো বড় ও শক্তিশালী ইঞ্জিনবিশিষ্ট, ছয় জন অনায়াসে বসা যায়।