“হে পাপমতি মার, তুমি এখন নিশ্চেষ্ট হও, অচিরেই তথাগত পরিনির্বাপিত হবেন। আজ হতে তিনমাস পরে শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা দিনে তথাগত পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হবেন।” এমন এক বেদনাবিধুর অভিব্যক্তির মধ্যদিয়ে মহাকারুণিক বুদ্ধের আয়ু সংস্কার বিসর্জনের কারণে মাঘী পূর্ণিমা সমগ্র বৌদ্ধদের জন্য অতীব শোকবহ পূর্ণিমা তিথি। অন্যান্য পূর্ণিমা তিথির চেয়ে তাই মাঘী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের নিকট অবিস্মরণীয়, পালনীয় এবং অনারম্ভর এক পূর্ণিমা তিথি।
মানুষ যদি আধ্যাত্মিক সাধনায় পূর্ণতা লাভ করে তাহলে সে নিজের জীবন-মৃত্যুকেও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এমন লক্ষ্যে মাঘী পূর্ণিমা তিথি বিশ্বের সমগ্র বৌদ্ধদের সাথে বাংলাদেশেও উদ্যাপিত হয়। এদিন বৌদ্ধ বিহারগুলো পূণ্যার্থী উপাসক-উপাসিকা, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ থাকে। দান-শীল-ভাবনায় পরিশুদ্ধ হৃদয়ে সকলে নির্বাণ-বিমুক্তি সাধনা করেন। স্মরণ করেন, লালন করেন বুদ্ধের অমৃত বাণী।
ভোর হতে বিহারগুলো থেকে মধুর স্বরে বুদ্ধবাণী শোনা যায়। ধ্বণিত হয়, বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি, ধম্মং সরণং গচ্ছামি, সংঘং সরণং গচ্ছামি গীতি। আলোক ঝলমল আর নানারূপ সজ্জায় অন্যরকম আবহ সৃষ্টি হয় বৌদ্ধ পল্লীসমূহে। দিনব্যাপী মাঘী পূর্ণিমার তাৎপর্যকে ঘিরে ভিক্ষুসংঘ ধর্মদানে নিজেকে নিযুক্ত রাখেন। ছড়িয়ে দেন সকলের তরে বুদ্ধবাণী-উপদেশ। জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা, পূজা, দান, ধর্মাচরণ অনুষ্ঠানও অর্থবহ।
এছাড়া মাঘী পূর্ণিমা তিথির বিশেষ লক্ষ্যণীয় অংশ হল বৌদ্ধ মেলা। বিহারে বিহারে যেমন জ্ঞাতীদের মিলন মেলা ঘটে তেমনি ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বৌদ্ধিক সংস্কৃতি ভিত্তিক নানা আয়োজনে চট্টগ্রামের বুড়া গোঁসাই মেলা, পটিয়ায় ঠেগরপুনি মেলা, বিনাজুরীর পরিনির্বাণ মেলা, আবদুল্লাপুরের মাঘী পূর্ণিমা মেলা ইত্যাদির আয়োজন সর্বধর্মের মানুষের সাথে ঐক্যের বন্ধন দৃঢ় করতে এক অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ।
মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে আগামীকাল (বুধবার) কোন সরকারি ছুটি না থাকলেও ঐচ্ছিক ছুটি আছে। যারা যারা এ ঐচ্ছিক ছুটি নিতে সক্ষম তাদেরকে ছুটি নিয়ে পুরোদিবস এবং যারা কর্মস্থলে থাকবেন তারা অর্ধ-দিবস উপোসথ শীল গ্রহণ ও প্রতিপালন পূর্বক নিজেদের শীল পারমিতা পূর্ণতা লক্ষ্যে প্রীতিময় আহ্বান সহযোগে জাতি-গোত্র, ধর্ম-বর্ণ নির্বশেষে সকলের প্রতি মাঘী পূর্ণিমার মৈত্রী বার্তা জানায়।
জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
সকলের বিমুক্তি জ্ঞান লাভ হোক।
মাঘী পূর্ণিমার সময়সূচীঃ চতুদ্দর্শী ৩০ জানুয়ারী ২০১৮, মঙ্গলবার রাত ১০ টা ২২ মিনিট ২৯ সেকেন্ড হতে ৩১ জানুয়ারী ২০১৮, বুধবার, রাত ৮ টা ৭ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড পর্যন্ত।