1. pragrasree.sraman@gmail.com : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী : ভিকখু প্রজ্ঞাশ্রী
  2. avijitcse12@gmail.com : নিজস্ব প্রতিবেদক :
শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

বৌদ্ধ ধর্ম না ধম্ম?

প্রতিবেদক
  • সময় বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৮
  • ৮৯৩ পঠিত

জগদীশচন্দ্র রায় : ধম্মকে ধর্মের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে বহু পূর্ব থেকে। যার জন্য যে ভারত ভূমিতে এই ধম্মের উদ্ভব, সেখান থেকেই আগে বিতাড়িত করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানের অনেক অনেক লেখক সাহিত্যিককেও দেখছি তাঁরা ‘বুদ্ধধর্ম’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। তাই তাদের উদ্দেশ্যে এই লেখা তুলে ধরতে চেষ্টা করছি।

ধর্ম কি? ধম্ম কি? এদুটোর মৌলিক পার্থক্য কি?

ধর্ম ও ধম্মের উদ্দেশ্য কি? কি কি ধম্ম নয়?

ধর্ম কি?

ধর্ম সম্পর্কে ধারণার বিবর্তনের ইতিহাসঃ ‘ধর্ম’ একটি অস্পষ্ট শব্দ। এর কোন নির্দিষ্ট অর্থ নেই। এই ‘ধর্ম’ শব্দ কিন্তু একটাই। কিন্তু এর অর্থ অনেক। কারণ, ‘ধর্ম’ অনেকগুলি স্তরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। প্রতিটি স্তরের ধারণাকে বলা হয় ‘ধর্ম’। যদিও একটি স্তরের ধর্মের ধারণার সঙ্গে অন্য স্তরের ধর্মের ধারণার সঙ্গে মেলে না। কারণ ধর্মের ধারণা কখনও নির্দিষ্ট ছিল না। যার ফলে যুগে যুগে ধর্ম সম্পর্কে ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে।

ধর্ম সম্পর্কে প্রথম ধারণা ঃ বিদ্যুৎ,বৃষ্টি বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটলে আদিম মানুষ সেগুলোর কোন ব্যাখ্যা দিতে পারত না। প্রাকৃতিক কোনো ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ধর্মকে তখন বলা হতো জাদুবিদ্যা বা ম্যাজিক। সুতরাং ধর্ম তখন এই জাদুবিদ্যার সঙ্গে অভিন্ন বলে গণ্য হতো।

ধর্ম সম্পর্কে দ্বিতীয় ধরণাঃ এরপর ধর্ম বিবর্তনের ইতিহাসে এল দ্বিতীয় স্তর। এই স্তরে ধর্ম মানুষের বিশ্বাস, আচার, অনুষ্ঠান, প্রার্থনা ও যজ্ঞ ইত্যাদির সঙ্গে অভিন্নরূপে গণ্য হতে থাকে। যদিও ধর্ম সম্পর্কে এই ধারণা ছিল আনুমানিক।

ধর্মের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শুরু হয় এই বিশ্বাসের ওপর ভর করে। সেটা হচ্ছে, এমন কোন একটি শক্তি আছে যার কারণেই প্রাকৃতিক অবস্থার সৃষ্টি হয়; যেটাকে আদিম মানুষেরা জানত না বা বুঝতে পারেনি। ধর্মের এই বিশ্বাসের স্তরে জাদুবিদ্যা তার গুরুত্ব হারায়। এই যে যে, শক্তির উপর বিশ্বাসের ধারণা এটা প্রথমে ছিল হিংসামূলক। পরবর্তীকালে মানুষের উপলবদ্ধি হয় যে, এই শক্তি তাদের জন্য শুভাকাঙ্খী হতে পারে। তাই বিশ্বাস, আচার, অনুষ্ঠান ও যজ্ঞ ইত্যাদির দরকার মানে করে শুভাকাঙ্খী শক্তিকে প্রসন্ন করার জন্য। আর হিংসাপরায়ণ শক্তির সঙ্গে আপস করার জন্য। পরবর্তীকালে এই শক্তিকে নাম দেওয়া হয়-ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা।

ধর্ম সম্পর্কে বিবর্তনের তৃতীয় ধারণাঃ ধর্ম সম্পর্কে বিবর্তনের তৃতীয় ধারণা হচ্ছে, মানুষ মনে করে এই ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করেছে। আর ঈশ্বরই মানুষ সৃষ্টি করেছে। এরপর মানুষের বিশ্বাস জন্মেছে আত্মা আছে এবং এই আত্মা স্বাশ্বত। এ জগতে মানুষের কৃত কর্মের জন্য ঈশ্বরের নিকট মানুষ জবাবদিহি করতে বাধ্য। সংক্ষিপ্তভাবে ধর্মের ধারণা সম্পর্কে বিবর্তনমূলক ইতিহাস হচ্ছে এটা। তাহলে এখন ধর্মে অর্থ দাঁড়ায় ঈশ্বরে বিশ্বাস, আত্মা বিশ্বাস, ঈশ্বরের উপাসনা, ভ্রমাত্মক আত্মাকে সঠিক পথে নিয়ে আসা, আর প্রার্থনা, অনুষ্ঠান, যজ্ঞ ইত্যাদির দ্বারা ঈশ্বরকে প্রসন্ন করা।ধর্ম এবং ধম্মের মৌলিক পার্থক্যঃ সাধারণত বলা হয় যে, ধর্ম হচ্ছে ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রত্যকেরই ধর্মকে তার নিজের কাজে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। ধর্মকে সমাজ জীবনে টেনে এনে কোনরূপ অংশ গ্রহণ করানো কারো উচিত নয়। কিন্তু ধম্ম হচ্ছে এর বিপরীত। অর্থাৎ ধম্ম হচ্ছে সামাজিক। ধম্ম সৎগূণান্বিত। এর অর্থ হল ধম্ম জীবনের প্রত্যেকটি পর্যায়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সঠিক সম্পর্ক। তাহলে এটা থেকে পরিষ্কার হচ্ছে- কোনো লোক যদি একা থাকে, তাহলে তার ধর্মের কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যখন দুজন মানুষের মধ্যে পস্পরের সম্পর্কের প্রয়োজন হয় তখন তাদের মধ্যে ধম্মের প্রয়োজন আবশ্যিক। আর এই ধম্মের আবশ্যিকতাকে পছন্দ করুক বা না করুক, এই প্রয়োজন কেউ এড়িয়ে যেতে পারবে না। অন্যভাবে বলা যায় সমাজ ধম্ম বিনা চলতে পারেনা। ধম্মের মূল বিষয় বিরাজ করে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের মধ্যে। ধম্মের আসল লক্ষ্য হচ্ছে একটি মানুষকে শিক্ষা দেওয়া; কিভাবে সে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা বা ব্যবহার করবে যাতে তারা সকলেই সুখী হয়।

ধম্ম বলতে কি বোঝায়? ধম্মের প্রয়োজন কেন?

বুদ্ধ ধম্মের দুটো স্তম্ভ আছে। একটা প্রজ্ঞা অন্যটা করুণা। প্রজ্ঞা কি? প্রজ্ঞা হচ্ছে পারস্পরিক বোঝাপড়া। করুণা কি? এবং কেন? করুণা হচ্ছে প্রেম বা ভালবাসা। কারণ, প্রেম বা ভালবাসা ছাড়া সমাজে বেঁচে থাকা যায়না। আর সমৃদ্ধিও লাভ করা যায়না। এই প্রজ্ঞা ও করুণাকে বলা হয় ধম্ম। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ধম্মের সংজ্ঞা থেকে ধর্মের সংজ্ঞা সম্পূর্ণ পৃথক। বুদ্ধ, ‘ধম্মে’র এই যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেটা কত প্রাচীন হলেও কতই না সেটা আধুনিক এবং কতইনা মৌলিক। এটা কত প্রাসঙ্গিক ও কত সত্য। এই প্রজ্ঞা ও করুণার সংমিশ্রণই হচ্ছে বুদ্ধ ধম্ম। ধর্ম এবং ধম্মের এটাই হচ্ছে পার্থক্য।

Facebook Comments Box

শেয়ার দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো
© All rights reserved © 2019 bibartanonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesbazarbibart251
error: Content is protected !!