কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং গুনমেজু বড় বৌদ্ধ বিহারের শতবর্ষী প্রাচীন বৃক্ষ কর্তন নিয়ে এলাকার রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ বিরোধপূর্ণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ৯ জানুয়ারি সকালে পরিষদের নেতৃবৃন্দ গুনমেজু বড় বৌদ্ধ বিহার এবং কর্তনকৃত শতবর্ষী প্রাচীন বৃক্ষগুলো সরজমিনে পরিদর্শন করেন। এসময় এলাকাবাসী পরিষদের কাছে ঘটনার সবিস্তারে তুলে ধরেন।
গুনমেজু বড় বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিঠির সভাপতি ভদন্ত উ সুবর্ণ থের বলেন, এলাকার মংয়াইং রাখাইন দীর্ঘ সময় ধরে বিহারের সভাপতি সেজে বিহারের সম্পত্তি এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খাত থেকে বিহারের জন্য পাওয়া অনুদান ভোগ করে যাচ্ছেন। অথচ তিনি বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ নন। সর্বশেষ গত ২৫ ডিসেম্বর সকালে অজ্ঞাতনামা কিছু লোকজন নিয়ে বিহারের শতবর্ষী প্রাচীন ৪টি টেকসল গাছ এবং ১টি গর্জন গাছ কেটে প্রায় চার লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেন। এসময় বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভদন্ত সুমনা ভিক্ষু বাধা দিলে তাকেও লাঞ্চিত করা হয়। পরে সুমনা ভিক্ষুর শোর চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে দুর্বৃত্তরা কাটা গাছগুলো ফেলে পালিয়ে যান।
গুনমেজু বড় বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিঠির সাধারণ সম্পাদক উম্যাচো রাখাইন এবং নির্বাহী সদস্য আবুমং রাখাইন বলেন, মংয়াইং রাখাইন প্রকাশ মং মাষ্টার বিহারের ভূসম্পত্তি নিজের নামে করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করে আসছেন। সার্বজনীন এবং ধর্মীয় এই সম্পদ ভোগ করতে তার বিবেকেও বাধে না। গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষ পেশাগত কারণে এলাকার বাইরে অবস্থান করায় একটি বিশেষ মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে এই কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনা নিয়ে আমরা গত ২৫ ডিসেম্বর চকরিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু আমরা এখনো কোন সমাধান পাইনি।
এদিকে গ্রামবাসীর সাথে কথা বলার পর পরিষদের নেতৃবৃন্দ চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)-এর সাথে সাক্ষাতে কথা বলেন। এসময় ওসি মোঃ বখতিয়ার উদ্দীন বলেন, ধর্মীয় সম্পত্তি ধর্মীয় কাজে লাগানো উচিত। এটা ব্যক্তিগত কারো কাজে ব্যয় হতে পারে না। কারণ ধর্মীয় সম্পত্তি মানে সার্বজনীন সম্পত্তি। আমরাও এই সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট আন্তরিক। আপনারা পরিষদের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য একটা সমাধান দেন। আমরা এলাকার স্বার্থে সেটা বাস্তবায়নে আন্তরিক সহযোগিতা করবো।
এসময় পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু, সহ-সভাপতি অশোক কুমার বড়ুয়া, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক অমল বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপক বড়ুয়া, রাজু বড়ুয়া, রামু উপজেলা শাখার সভাপতি এমইউপি রিটন বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কমিঠির কার্যনির্বাহী সদস্য ভুলু বড়ুয়া প্রমূখ পরিষদের আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, হারবাং গুনমেজু বড় বৌদ্ধ বিহারের আজীবন অধ্যক্ষ, বাংলাদেশ রাখাইন মারমা সংঘ কাউন্সিলের প্রাক্তন উপদেষ্টা ভদন্ত উ বিজয় মহাথের ৭২ বছর বয়সে গত বছরের ১০ জুলাই পরলোক গমন করেন। বর্তমান তাঁর পবিত্র মরদেহ গুনমেজু বড় বৌদ্ধ বিহারে সংরক্ষিত আছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ১ ও ২ মার্চ এই তিন দিনব্যাপী বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁর জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সুসম্পন্ন করা হবে।
দুঃখজনক হল, প্রয়াত ভান্তের মরদেহ সংরক্ষিত থাকাকালীন সময়ে এসব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে যা মোটেও কাম্য নয়।